ঢাকা     মঙ্গলবার   ০২ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ১৮ ১৪৩১

টাকা নিয়ে কড়ি আনতে গিয়ে ফিরেননি ওঝা, গভীর রাতে দাফন 

নিজস্ব প্রতিবেদক, গাজীপুর  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:২২, ৩০ জুন ২০২৪   আপডেট: ১৩:২৩, ৩০ জুন ২০২৪
টাকা নিয়ে কড়ি আনতে গিয়ে ফিরেননি ওঝা, গভীর রাতে দাফন 

সাপের কামড়ে মারা যাওয়া সাইফুল ইসলামকে বাঁচানোর আশ্বাস দেওয়া ওঝা টাকা নিয়ে কড়ি আনতে গিয়ে আর ফিরেননি। অবশেষে ওঝার অপেক্ষা শেষে শনিবার গভীর রাতে তার দাফন সম্পন্ন করেছেন এলাকাবাসী। পাশাপাশি তারা প্রতারণা করার জন্য ওঝার শাস্তি দাবি করেছেন।

গত শুক্রবার রাতে মাছ ধরতে গেলে সাপে কামড় দেয় কালিয়াকৈর উপজেলার বাসুরা এলাকার ইউনুছ আলীর ছেলে সাইফুল ইসলামকে (৪০)। এরপর সাপটিকে নিজেই মেরে ফেলেন সাইফুল। পরে বাড়িতে আসলে ওঝার কাছে নিয়ে যায়। সেখানে পরিস্থিতি ভালো না হলে ওই রাতেই পার্শ্ববর্তী টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের কুমুদিনী হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার ভোরে তার মৃত্যু হয়।

এলাকাবাসী সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শনিবার সকালে মৃত ছাইফুলের লাশ বাড়িতে আনা হয়। এরপর সিদ্ধান্ত হয় দুপুরে দাফন সম্পন্ন করা হবে। এর মধ্যেই এলাকার কয়েকজন বলে অভিজ্ঞ ওঝা মাধ্যমে ভালো হতে পারে। পরবর্তীতে ঢাকার সাভার হতে দুজন ওঝা এসে জানান তিনি জীবিত আছেন এবং তাকে বাচানো সম্ভব। আমরা সাপে কাটা ৭ দিনের মৃতকেও ভালো করতে পারি। পরে তাদের কথায় গ্রামবাসী ও পরিবারের লোকজন আর লাশটি দাফন করেনি। ওঝাদের নির্দেশ অনুযায়ী বাড়ির পাশে একটি পতিত জমিতে ৬টি কলাগাছ, ১০ টি হারি, গামছা, দুধ, আগরবাতি নিয়ে ব্যাপক আয়োজন করে। চারপাশে লাইটিংয়ের জন্য জেনারেটরের ব্যবস্থাও করেন। পরে মৃত ব্যক্তির পাশে মৃত সাপটি রেখে আশপাশে কাউকে যেতে নিষেধ করেন৷ এরপর ১৫-২০ হাজার টাকা নেন কড়ি আনার জন্য। সেই টাকা নিয়ে আর ফিরে আসেননি তারা।

নিহত সাইফুলের সহকর্মী টাইলস মিস্ত্রি জাকির হোসেন বলেন, হাসপাতালে চিকিৎসকেরা মৃত ঘোষণার পর সাইফুলকে লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্সে করে গ্রামে আনা হয়। এক কবিরাজ মরদেহ দেখে বলেন, ‘এটা ডেড বডি হয় নাই। আমরা কড়ি চালান দেব। রাত ৮টা থেকে ১২টার মধ্যে কড়ি চালান দিয়ে তাকে সুস্থ করা সম্ভব।’

কালিয়াকৈর উপজেলার ঢালজোড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ইছামুদ্দিন বলেন, কবিরাজ প্রথমে বলেছে কড়ির জন্য ধামরাই যেতে হবে। ধামরাই খোঁজাখুঁজি করে সে বলে কড়ি এখানে নেই সাভার যেতে হবে। সাভার গিয়ে খোঁজাখুঁজি করে সে জানায় এখানেও কড়ি নেই যেতে হবে কুমিল্লা। এরপর আর ওঝার খোঁজ পাওয়া যায়নি। ওঝা ফিরে না আসায় রাত দেড়টার দিকে জানাজা শেষে স্থানীয় কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন করা হয়।

কালিয়াকৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এ এফ এম নাসিম বলেন, ‘সন্ধ্যায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক গিয়েছিলেন কিন্তু নিহতের স্বজনরা তাকে ধরতে দেননি। ওঝা নাকি বলে গেছেন, চিকিৎসা শেষ করার আগ পর্যন্ত এই লাশ ধরা যাবে না। কিন্তু ওই ওঝা কড়ি আনার কথা বলে গিয়ে আর ফিরে আসেননি।’

পড়ুন: মৃত ব্যক্তিকে জীবিত করার প্রস্তুতি ওঝার, অপেক্ষায় এলাকাবাসী 

/রেজাউল/এসবি/

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়