ঢাকা     মঙ্গলবার   ০২ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ১৮ ১৪৩১

দুই বন্ধুর লিঙ্গ কর্তন: স্কুলছাত্রীর সঙ্গে ২ বন্ধুর প্রেম, অতঃপর...

গাইবান্ধা প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:১৬, ৩০ জুন ২০২৪   আপডেট: ১৭:১৬, ৩০ জুন ২০২৪
দুই বন্ধুর লিঙ্গ কর্তন: স্কুলছাত্রীর সঙ্গে ২ বন্ধুর প্রেম, অতঃপর...

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সিরাজুল ইসলাম

গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলায় একইদিনে বেলাল হোসেন (২২) ও সিরাজুল ইসলামের  (২০) লিঙ্গ কর্তনের ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে বেলাল হোসেন বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই দিনই মারা যান। সিরাজুল ইসলামকে একই হাসপাতালে কয়েক দিন চিকিৎসা শেষে স্থানীয় সাঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। তার অবস্থা এখন আশঙ্কামুক্ত বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক। এক স্কুলছাত্রীর সঙ্গে দুই বন্ধুর প্রেমের পরিণতিতে গত ১৮ জুন দুপুরে উপজেলার কামালের পাড়া ইউনিয়নের সুজালপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

বেলাল হোসেন সুজালপুর গ্রামের মফিজল হকের ছেলে এবং সিরাজুল ইসলাম পাশের ঘুরিদহ ইউনিয়নের পবনতাইড় গ্রামের তোতা মিয়ার ছেলে।

আরও পড়ুন: প্রেমিকা নিয়ে দ্বন্দ্ব: পুরুষাঙ্গ খোয়ানো ২ বন্ধুর ১ জনের মৃত্যু 

কী কারণে এবং কীভাবে লিঙ্গ কর্তন করা হয়, সেই ব্যাপারে বিস্তারিত জানান নিহত বেলাল হোসেনের বন্ধু ভুক্তভোগী সিরাজুল ইসলাম।

সিরাজুল ইসলাম বলেন, 'আমি ভাবতেও পারিনি বন্ধু বেলাল হোসেন আমার এত বড় ক্ষতি করতে পারে। বেলাল আমার খুব কাছের এবং বিশ্বস্ত বন্ধু ছিল। সেই সূত্র ধরে বেলালের বাড়িতে আমি যাতায়াত করতাম। এক পর্যায়ে পাশের বাড়ির ১০ম শ্রেণীর ছাত্রী বেলালের খালাত বোনের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। তার সঙ্গে আমার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। চার বছর ধরে আমাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক চলে আসছিল। হঠাৎ করে বেলালও তার ওই খালাত বোনকে ভালোবাসতে শুরু করে এবং তাদের মধ্যেও মন দেওয়া-নেওয়া হয়। বেলাল তার খালাত বোনকে ভালোবাসার বিষয়টি আমাকে বলে এবং তার খালাত বোনের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে নিষেধ করে। বেলালের পরিবারেরও সিদ্ধান্ত ছিল, তার খালাত বোনোর সঙ্গে বেলালকে বিয়ে দেবে। তারপরও আমি তার খালাত বোনকে ভুলতে পারিনি। আমি মাঝে-মধ্যে সুযোগ বুঝে তার সঙ্গে লুকিয়ে দেখা করতাম।’

সিরাজুল আরও বলেন, ‘নিষেধ করার পরও সম্পর্ক রাখার বিষয়টি বেলাল হযত মেনে নিতে পারেনি। ঈদের পরের দিন বেলাল এবং তার ওই খালাত বোন আমাকে মোবাইলে এসএমএস দিয়ে বেলালের বাড়িতে যেতে বলে। তাদের ম্যাসেজ পেয়ে আমি বেলালের বাড়িতে যাই। বেলালের খালাত বোন তখনও আসেনি। ঘটনার আগ-মুহূর্তে আমি বেলালের শোবার ঘরে বিছানায় শুয়ে মোবাইলে ফেসবুক ব্যবহার করছিলাম। এ সময় বেলাল পাশে বসেছিল। হঠাৎ করে অনেকটা ইয়ার্কির ছলে বেলাল আমার প্যান্টের চেন খুলে ফেলে। আমি কিছু বুঝে ওঠার আগেই ব্লেড দিয়ে লিঙ্গ কর্তন করে বিচ্ছিন্ন করে দেয়। এরপর আমাকে মেরে ফেলার চেষ্টা করলে ধস্তাধ্বস্তি শুরু হয়। এ সময় আমি চিৎকার করলে বেলালের মা ও বোন ঘরে এসে স্থানীয়দের সহযোগিতায় আমাকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে প্রথমে সাঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। পরে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে।’

বেলালের মা বলেন, ‘ছেলের ঘরের ভেতর সিরাজুলের চিৎকার, চেচামেচি শুনে আমি দৌড়ে সেখানে যায়। এ সময় সিরাজুলকে রক্তাক্ত অবস্থায় বিছানায় ছটফট করতে দেখি। তখন আমার ছেলেকে আটক করার চেষ্টা করি এবং জানতে চাই কী কারণে এ কাজ করেছে? আমি তাকে পুলিশে দেওয়ার কথা বলি। এ সময় বাড়ির অন্যান্য লোকজন এগিয়ে এলে বেলাল পালিয়ে যায়। পরে সিরাজুলকে হাসপাতালে পাঠানো হয় এবং তার পরিবারকে খবর দেওয়া হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘এ ঘটনার দুই-তিন ঘণ্টা পর জানতে পারি, মাঠে লিঙ্গ, পেট ও গলাকাটা রক্তাক্ত অবস্থায় বেলাল অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে। লোকজন তাকে উদ্ধার করে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাতে তার মৃত্যু হয়।’

ঘটনার পর বেলালকে অভিযুক্ত করে সাঘাটা থানায় লিখিত অভিযোগ করেন সিরাজুলের বাবা তোতা মিয়া। বেলাল মারা যাওয়ার পর তার বাবা মফিজুল হক ছেলে আত্মহত্যা করেছে বলে থানাকে লিখিতভাবে জানান।

আরও পড়ুন: গাইবান্ধায় প্রেমিকা নিয়ে দ্বন্দ্বে পুরুষাঙ্গ খোয়ালেন দুই বন্ধু

সাঘাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মততাজুল হক বলেন, বেলালের লিঙ্গ কর্তনের সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়টি তদন্তাধীন ছিল। যেহেতু অভিযুক্ত মারা গেছে এবং তার বাবা তাদের ছেলে আত্মহত্যা করেছে বলে থানায় লিখিত দিয়েছেন, তাই এ ঘটনায় আর তদন্তের প্রয়োজন হয়নি।

সিরাজুল ইসলাম এখন সুস্থ আছেন বলেও জানান ওসি।

মাসুম/বকুল

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়