ঢাকা     মঙ্গলবার   ০২ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ১৮ ১৪৩১

‘দাফনের’ ৯ দিন পর বাড়ি ফিরে বলেন ‘কে বলেছে, আমি মারা গেছি?’

কুমিল্লা প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:২৬, ৩০ জুন ২০২৪   আপডেট: ১৮:০৫, ৩০ জুন ২০২৪
‘দাফনের’ ৯ দিন পর বাড়ি ফিরে বলেন ‘কে বলেছে, আমি মারা গেছি?’

রোকসানা আক্তার

কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে ‘দাফনের’ ৯ দিন পর সশরীরে বাড়ি ফিরে এসেছেন রোকসানা আক্তার (৩০) নামে এক নারী! অবাস্তব হলেও আসল ঘটনা হলো—ওই তরুণী গত ১ জুন ভাইয়ের বাসা থেকে নিখোঁজ হন। পরিবারের সদস্যরা অনেক খোঁজাখুঁজির পর খবর পায়, ফেনী শহরে রোকসানার মত দেখতে একজনের মরদেহ ড্রেনে পাওয়া গেছে। এরপর তারা পুলিশের মাধ্যমে মরদেহ শনাক্ত করে গ্রামে এনে দাফন করে। দাফনের ৯ দিন পর গত ২৬ জুন বিকেলে ঘটে বিপত্তি। হঠাৎ ‘দাফন করা’ রোকসানা বাড়িতে হাজির হলে আঁতকে ওঠেন সবাই। ফিরে আসা তরুণী এলাকাবাসীর প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, ‘কে বলছে, আমি মারা গেছি? আমি ঢাকায় ঘুরতে গেছিলাম। শরীর খারাপ থাকায় কারও সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারিনি।’

ঘটনাটি উপজেলার গুণবতী ইউনিয়নের রাজবল্লভপুর গ্রামের। এ নিয়ে পুরো এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। রোববার (৩০ জুন) রাজ্ল্লভপুর গ্রামে গেলে স্থানীয়রা জানান, গত মে মাসের শেষের দিকে রোকসানা চৌদ্দগ্রামের নিজ বাড়ি থেকে ছোট ভাই সালাহউদ্দিনের চট্টগ্রামের ষোলশহরের বাসায় বেড়াতে যান। ১ জুন ভোরে কাউকে না জানিয়ে বাইরে থেকে দরজা লাগিয়ে তিনি বাসা থেকে বের হন। দীর্ঘদিন আত্মীয়স্বজনসহ সম্ভাব্য সব স্থানে খোঁজাখুঁজি করেও তার সন্ধান পাননি পরিবারের সদস্যরা।

গত ১৭ জুন ঈদুল আজহার দিন বিকেলে ফেনী শহরে থাকা তার খালাতো বোন হাজেরা আক্তার ও খালাতো ভাই শাহজাহান খবর পান, শহরের জিয়া মহিলা কলেজের সামনে ড্রেনে একজন নারীর মরদেহ পড়ে আছে। তারা সেখানে গিয়ে মরদেহের চেহারা রোকসানা আক্তারের চেহারার সঙ্গে মিল দেখে ভাই এবায়দুল হককে খবর পাঠান। ফেনী শহর পুলিশ ফাঁড়ি মরদেহের সুরতহাল শেষে মর্গে পাঠায়।

ওইদিন রাতেই এবায়দুল হক জিয়া মহিলা কলেজের সামনে পৌঁছান। তিনি আশপাশের মানুষকে বোনের ছবি দেখিয়ে মরদেহটি ‘একইরকম কি না’ জিজ্ঞেস করেন। সবাই ছবির সঙ্গে মরদেহের মিল রয়েছে বলে জানান। পরে এবায়দুল হকসহ আত্মীয়স্বজন ফেনী শহর পুলিশ ফাঁড়িতে গিয়ে লাশ উদ্ধারকারী উপ-পরিদর্শক প্রতুল দাসের সঙ্গে দেখা করেন এবং বোন রোকসানার ছবি দেখান। তারা রোকসানার লাশ শনাক্ত করেন। 

পরদিন ময়না তদন্ত শেষে পুলিশ এবায়দুল হকের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করে। ওইদিন আছরের নামাজের পর গুণবতী ইউনিয়নের রাজবল্লবপুর মধ্যমপাড়ায় সামিশকরা দীঘির দক্ষিণ পাড়ে মরদেহটি দাফন করা হয়। 

মরদেহ দাফনের ৯ দিন পর গত ২৬ জুন রোকসানা সশরীরে বাড়িতে হাজির হন। ঘটনা জানাজানি হলে আশপাশের লোকজন একনজর রোকসানাকে দেখতে ভিড় জমায় বাড়িটিতে। এ সময় রোকসানা বলেন, ‘আমি চট্টগ্রাম ভাইয়ের বাসা থেকে কাউকে কিছু না বলে ঢাকায় যাই। সেখানে আমি একটি চাকরি পেয়েছি। যেহেতু, আমি বাড়ি থেকে কাপড় নিয়ে যাইনি, তাই কাপড় নিয়ে যাওয়ার জন্য বাড়িতে ফিরে আসি।’ 

রোকসানার ভাই এবায়দুল হক বলেন, ‘খালাতো ভাই-বোনের কাছে সংবাদ পেয়ে ছবিতে কিছুটা মিল থাকার কারণে মরদেহটি বোনের মনে করি। পরে পুলিশের কাছ থেকে মরদেহটি এনে দাফন করি। গত বুধবার বিকেলে রোকসানা জীবিত বাড়ি ফিরলে ফেনী মডেল থানায় গিয়ে পুলিশকে বিষয়টি অবহিত করেছি।’ 

স্থানীয় ইউপি সদস্য আবু মুসা বলেন, ‘লোক মারফতে বিষয়টি শুনেছি। সেদিন কার মরদেহ দাফন করা হয়েছে, সেটিই এখন দেখার বিষয়।’ 

ফেনী শহর পুলিশ ফাঁড়ির উপ-পরিদর্শক প্রতুল দাস শনিবার সন্ধ্যায় বলেন, ‘উদ্ধার করা মরদেহটি বিকৃত ছিল। এবায়দুল হক ও তার স্বজনরা মরদেহটি রোকসানার বলে শনাক্ত করে আমার কাছ থেকে নিয়ে যান। এখন যেহেতু, তাদের বোন সশরীরে বাড়িতে উপস্থিত হয়েছেন, তাই আমরা বিষয়টি নতুন করে তদন্ত করব।’

কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ত্রিনাথ সাহা বলেন, ‘তরুণী নিখোঁজ, উদ্ধার, দাফন ও আবার ফিরে আসার বিষয়ে কেউ আমাকে অবগত করেনি। খবর নিয়ে দেখবো কী ঘটেছে।’

ফেনী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ রুহুল আমীন বলেন, ‘ঈদের দিন সন্ধ্যায় এক নারীর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। সুরতহাল শেষে ময়না তদন্তের জন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়। এ সময় খবর আসে মারা যাওয়া নারীর স্বজনদের খোঁজ পাওয়া গেছে। পরে ভাইরা এসে মরদেহের পরিচয় শনাক্ত করেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘পুলিশ সব আইনি কার্যক্রম শেষে মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে। পরে যারা বাদী হয়ে মরদেহ নিয়ে যান, তারা এসে জানান, তাদের বোন ফিরে এসেছে। যেহেতু, নিখোঁজ নারী ফিরে এসেছেন, তাহলে মারা যাওয়া নারীর পরিচয় শনাক্তে আইনি কার্যক্রম শুরু করব।’

রুবেল/মাসুদ/এনএইচ

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়