ঢাকা     মঙ্গলবার   ০২ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ১৮ ১৪৩১

পাদপ্রদীপের তলায় অন্ধকার

তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের এলাকাতেই থাকে না বিদ্যুৎ

পটুয়াখালী(উপকূল)প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২১:৫৪, ৩০ জুন ২০২৪  
তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের এলাকাতেই থাকে না বিদ্যুৎ

নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের দাবিতে কলাপাড়াবাসীর মানববন্ধন

পটুয়াখালীর পায়রায় তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র থাকা সত্ত্বেও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পাচ্ছেন না কলাপাড়াবাসী। তাই ক্ষোভ জানিয়ে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের দাবিতে মানববন্ধন করেছেন এলাকাবাসী।

লোডশেডিং থেকে পরিত্রাণের দাবিতে শনিবার (২৯ জুন) সকাল ১১টায় মানববন্ধন করেছে নাগরিক উদ্যোগ কমিটি। কলাপাড়া পৌর শহরের শহীদ সুরেন্দ্র মোহন চৌধুরী সড়কের মনোহরী পট্টিতে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এসময় বক্তব্য রাখেন কলাপাড়া নাগরিক উদ্যোগের আহ্বায়ক কমরেড নাসির তালুকদার, প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা ফজলুর রহমান সিকদার ও ধানখালী ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক জিসান আলমগীরসহ বাংলাদেশ উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী কলাপাড়া শাখার সদস্যরা।

পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় ১৩২০ মেগাওয়াট পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালে। ২০২০ সাল থেকে এ কেন্দ্রটি বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করে। এ কেন্দ্রের জন্য ধানখালী ইউনিয়নের ভূমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে ১ হাজার একর। এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের এলাকার মধ্যেই আরও দু’টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যে নির্মাণ কাজ চলছে।

পায়রার পাশে নির্মাণ হচ্ছে পটুয়াখালী ১৩২০ মেগাওয়াট নামের আরও একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র। এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নির্মাণ কাজ শেষের দিকে। এ বছরের সেপ্টেম্বর মাসেই এ কেন্দ্রটি থেকে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে চায় কর্তৃপক্ষ। এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য ধানখালী ইউনিয়নের জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে ৯১৫ একর। এ ছাড়া এর পাশে নির্মাণের প্রক্রিয়া চলছে আশুগঞ্জ পাওয়ার প্ল্যান্ট নামের আরও একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের। এলএনজি গ্যাস ভিত্তিক এই প্ল্যান্টের জন্য ধানখালী ও চম্পাপুর ইউনিয়নের জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে ৯২৫ একর। জেলার এই উপজেলায় তিন বিদ্যুৎ কেন্দ্রে জমি অধিগ্রহণের কারণে মানুষ হারিয়েছে বাড়িঘর, মসজিদ, মন্দির ও গোরস্থানসহ অনেক কিছু। অথচ এই এলাকার মানুষই পাচ্ছে না ঠিক মতো বিদ্যুৎ। ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে তারা। বার বার বিদ্যুৎ যাওয়া আসায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানসহ পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া। হাসপাতালসহ সেবা নির্ভর প্রতিষ্ঠানগুলো সাধারণ মানুষকে দিতে পারছে না কাঙ্খিত সেবা। এ ছাড়া শহরে বসবাসকারী মানুষের দৈনন্দিন কাজ সারতেও বেগ পেতে হচ্ছে।

কলাপাড়া নাগরিক উদ্যোগের আহ্বায়ক কমরেড নাসির তালুকদার জানান, বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জমি অধিগ্রহণের ফলে আমাদের এলাকার অনেক মানুষ এখন বাস্তুহারা। অনেকে সব কিছুই হারিয়েছে। তারপরও আমরা ঠিক মতো বিদ্যুৎ পাচ্ছি না। প্রতিদিন ৭ থেকে ৮ বার বিদ্যুৎ যাওয়া আসা করে। এতে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া ব্যাহত হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। তাই আমরা লোডশেডিং থেকে পরিত্রাণ চাই। এরপরও যদি ঘন ঘন লোডশেডিং দেওয়া হয় তাহলে আমরা আরও কঠোর আন্দোলন করবো।

বাংলাদেশ উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী কলাপাড়া শাখার সদস্য অমল কর্মকার জানান, মানুষ এখন রাসেল’স ভাইপারের চেয়েও লোডশেডিংকে বেশি ভয় পায়। অথচ বর্তমানে আমাদের এলাকাতেই ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। হয়তো দুই বছরের মধ্যে ৬ হাজার মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ এখান থেকে উৎপাদন হবে। তাই এখান থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ সরাসরি কলাপাড়াবাসীকে দিয়ে অন্যত্র বিতরণ করতে হবে। তা না হলে আমরা আরও কঠোর কর্মসূচি পালন করবো।

কলাপাড়া পল্লী বিদ্যুতের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার সজিব পাল জানান, আমরা চাহিদার তুলনায় অনেক সময় অর্ধেক বিদ্যুৎ পাই। অনেক সময় ১৬ মেগাওয়াট, অনেক সময় ২৮ মেগাওয়াট আসে। কিন্তু আমাদের বিদ্যুতের চাহিদা ৩৫ মেগাওয়াট। আমরা চাহিদা মতো বিদ্যুৎ পেলে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারবো।

ইমরান/ফয়সাল

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়