ঢাকা     বুধবার   ০৩ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ১৯ ১৪৩১

ফের বাড়ছে তিস্তার পানি, শঙ্কায় নদী তীরবর্তী পরিবার

রংপুর প্রতিনিধি  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৫৩, ১ জুলাই ২০২৪   আপডেট: ১১:০২, ১ জুলাই ২০২৪
ফের বাড়ছে তিস্তার পানি, শঙ্কায় নদী তীরবর্তী পরিবার

ভারতের উত্তর সিকিমে ভারী বর্ষণসহ উজান থেকে নেমে আসা ঢলে রংপুরের তিস্তা নদীতে ফের দ্বিতীয় দফায় পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। সোমবার (০১ জুলাই) সকাল ৯টায় পাওয়া তথ্যমতে, তিস্তা নদীর পানি ডালিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও কাউনিয়া পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অন্য নদ-নদীর পানিও বেড়েই চলেছে। এতে নদ-নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল প্লাবিত ও ভাঙন শঙ্কায় রয়েছে। 

তিস্তা ছাড়াও দেশের উত্তরাঞ্চলের ধরলা ও দুধকুমার নদীর পানি সমতলে বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা আগামী ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যার পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। এ সময় পাউবোর নিয়ন্ত্রণ কক্ষ জানায়, রংপুর জেলার সব নদ-নদীর পানি বাড়ছে। রোববার সকাল থেকে সোমবার সকাল পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় রংপুর ৫৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। 

এদিকে পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জেলার কাউনিয়া, পীরগাছা ও গঙ্গাচড়া উপজেলার তিস্তা অববাহিকার নিম্নাঞ্চল, চর ও দ্বীপ চরের কিছু এলাকা প্লাবিত হতে শুরু করেছে। তিস্তা নদীতে পানি বাড়া-কমায় ভাঙনের মুখে পড়েছে বিভিন্ন এলাকা। বেশ কিছু চরাঞ্চলের বাড়িঘরের চারপাশে পানি প্রবেশ করার খবর পাওয়া গেছে। তিস্তার তীরবর্তী কিছু এলাকার সবজিক্ষেত ডুবে গেছে। 

পাউবো কোনো প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা না নেওয়ায় ভাঙনকবলিত পরিবারের অনেকে নিরুপায় হয়ে বসতি সরিয়ে নিচ্ছে। জরুরি ভিত্তিতে ভাঙন প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেওয়া না হলে তারা সর্বস্বান্ত হয়ে পড়বে বলে জানিয়েছে ভুক্তভোগী পরিবারগুলো। 

কাউনিয়া উপজেলার বালাপাড়া গদাই এলাকার শাহ জামাল, শমসেল, ইলিমাসহ বেশ কয়েকজন জানায়, গত প্রায় মাস খানেক ধরে কাউনিয়া রেল গেটে এই এলাকা থেকে যাওয়া রাস্তাটি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙন প্রতিরোধে আমরা নিজেরাই বস্তায় বালু ভরাট করে চেষ্টা করছি। তারপরেও আমাদের এলাকায় বেশ কয়েকটি বাড়ি ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে বারবার জিও ব্যাগ চেয়েও কোনো সাড়া মেলেনি। 

গঙ্গাচড়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিদ তামান্না জানান, তিস্তা নদী এলাকায় বন্যা ও ভাঙনের বিষয়ে আমরা সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রাখছি। কোথাও কোনো সমস্যা হলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

তিস্তা বাঁচাও, নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম হক্কানি বলেন, অসময়ের বন্যা ও ভাঙনে প্রতি বছর এক লাখ কোটি টাকার সম্পদ তিস্তার গর্ভে চলে যায়। এ সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য তিস্তা খনন, সংরক্ষণ ও তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা ছাড়া বিকল্প নেই। 

তিস্তা নদী তীরবর্তী কাউনিয়া উপজেলার বালাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনছার আলী বলেন, তিস্তার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নদী তীরবর্তী ও চরাঞ্চলের মানুষদের মধ্যে দুর্ভোগের আতঙ্ক রয়েছে। নদী তীরবর্তী আবাদি জমিগুলো তলিয়ে গিয়ে বাদাম ও শাক-সবজিসহ উঠতি বিভিন্ন ফসল নিয়ে নদীপাড়ের মানুষ বিপাকে রয়েছে। নদীর নিম্নাঞ্চল হালকা প্লাবিত হয়েছে। 

রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, গত কয়েকদিনের তুলনায় আজ সোমবার ডালিয়া ও কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি বাড়তে শুরু করেছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে গতকাল ডালিয়া ব্যারাজের সব গেট খুলে রাখা হয়েছে। কাউনিয়া পয়েন্টে পানি প্রবাহ কিছুটা বাড়ছে। এছাড়া ভাটি অঞ্চলে সার্বক্ষণিক নদীপাড়ের পরিস্থিতির খোঁজখবর রাখা হচ্ছে।

আমিরুল/ইমন

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়