ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ০৪ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ২০ ১৪৩১

টানা বৃষ্টিতে নোয়াখালী শহরে জলাবদ্ধতা, শহরবাসীর দুর্ভোগ 

নোয়াখালী প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:০৯, ২ জুলাই ২০২৪  
টানা বৃষ্টিতে নোয়াখালী শহরে জলাবদ্ধতা, শহরবাসীর দুর্ভোগ 

পানিতে তালিয়ে গেছে একটি সরকারি অফিস

নোয়াখালী জেলাশহরে দুই দিনের ভারী ও টানা বর্ষণে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এতে বাসিন্দারা দুর্ভোগে পড়েছে। বিভিন্ন সড়ক ডুবে গেছে। বাসা-বাড়িতে পানি ঢুকেছে। জলাবদ্ধতা থেকে বাদ যায়নি সরকারি অফিসও। ফলে সেবা বিঘ্নিত হচ্ছে। জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পেতে দুই দিন সময় লাগতে পারে বলে জানিয়েছেন নোয়াখালী পৌর মেয়র। 

মঙ্গলবার (২ জুলাই) দুপুরে আবহাওয়া অধিদপ্তরের নোয়াখালী কার্যালয় জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় জেলাশহরে ১০৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, পানিতে বিভিন্ন সরকারি অফিস ডুবে গেছে। এর মধ্যে জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়, জেলা আবহাওয়া অফিস, জেলা মৎস্য অফিসসহ গুরুত্বপূর্ণ সরকারি-বেসরকারি অফিস রয়েছে। পানিতে ডুবে গেছে জেলা প্রশাসক, জেলা পুলিশ সুপার, জেলা সিভিল সার্জনের বাসভবনের সড়ক। জীবিকার তাগিদে বের হওয়া শ্রমজীবী-কর্মজীবী মানুষ, অফিসগামী মানুষ ভোগান্তির মধ্যে পড়েছে। স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থী ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা বিপাকে পড়েছে।

শহরের বাসিন্দা মোজাম্মেল হোসেন বলেন, বর্ষার সময় বৃষ্টি হবে এটাই স্বাভাবিক। বৃষ্টির পরে শহরে যে জলাবদ্বতা সৃষ্টি হয়েছে, তাতে ভোগান্তি চরমে। বড় মেয়ে এইচএসসি পরীক্ষার্থী, তাকে নিয়ে পানি মাড়িয়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে যেতে কষ্ট হয়েছে।

আলাউদ্দিন নামে আরেকজন বলেন, পুরো শহরে যে অবস্থা তাতে বৃষ্টি এভাবে অব্যাহত থাকলে সবই ডুবে যাবে। সামিহা নামে একজন শিক্ষার্থী বলেন, তাদের স্কুলের সড়ক পানিতে ডুবে গেছে। যাওয়া-আসা করতে কষ্ট হচ্ছে।

সরকারি অফিসে সেবা নিতে আসা কামরুন নাহার বলেন, ‘এমন আজব পরিস্থিতিতে কখনও পড়িনি। এত গুরুত্বপূর্ণ অফিস অথচ পানিতে তালিয়ে গেছে। সেবা প্রত্যাশীদের অসুবিধা হচ্ছে। যারা সেবা দিচ্ছেন তারাও পানির মধ্যে সেবা দিচ্ছেন।’ 

পৌর বাসিন্দা আবদুর জলিল বলেন, সড়কের থেকে ড্রেনের উচ্চতা বেশি, তাই পানি রাস্তায় জমে থাকে। এতে করে জলাবদ্ধতা যেমন হয়, তেমন সড়কেরও ক্ষতি হয়। কারা এসব ড্রেন তৈরি করে মাথায় আসে না। বেশিরভাগ ড্রেন ও নালা বন্ধ রয়েছে।

জেলা মৎস্য অফিসে সেবা নিতে আসা মো. সাইফ বলেন, মৎস্য অফিসে মাছ চাষ করার মতো জলাবদ্ধতা হয়েছে। এ অবস্থা যদি জেলাশহরে হয়, তাহলে বলার কিছু থাকে না। যারা ভোগান্তিতে আছে তারাই বুঝবে কত কষ্ট।

জেলা প্রশাসকের বাংলোর একজন কর্মচারী বলেন, ‘ডিসি স্যারের বাংলোর সামনের সড়কে পানি উঠে গেছে। বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে বাংলোতেও পানি ঢুকবে। বিব্রতকর অবস্থার ভেতরে আছি।’

জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ইব্রাহিম বলেন, ‘পুলিশ সুপার কার্যালয়ের নিচ তলায় আমার অফিস। আমার অফিসে পানি ডুকেছে। আমি নিজে জলাবদ্ধতায় আটকে আছি। পুলিশ সুপার কার্যালয়ের দাপ্তরিক কার্যক্রম প্রায় বন্ধের পথে। পাশাপাশি বিভিন্ন নথিপত্র ও আসবাবপত্র ক্ষতির মুখে পড়েছে। কী বলব আমার বাসভবনের সড়কটিও ডুবে গেছে।’  

জেলা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘গত ২৪ ঘণ্টায় শহরে ১০৯ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। আজও সারা দিন বৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে। ভারী বর্ষণের ফলে আমার অফিস ও সড়কও ডুবেছে। আমিও জলাবদ্ধতায় আটকে আছি।’

পানি উন্নযন বোর্ড নোয়াখালীর নির্বাহী প্রকৌশলী আমির ফয়সাল বলেন, জলাবদ্ধতা রোধ প্রকল্পে শহর ও আশপাশের ১৬১ কিলোমিটার খাল খনন করা হয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে নোয়াখালী খালও খনন করা হয়েছে। যেটা নোয়াখালীর দুঃখ ছিল। তবে পুরোপুরি জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পেতে ড্রেন ও নালা রক্ষণাবেক্ষণ প্রয়োজন।

নোয়াখালীর পৌরসভার মেয়র সহিদ উল্যাহ খান সোহেল বলেন, ‘সরকারি অফিসসহ বিভিন্নস্থানে জলাবদ্ধতার ফলে ভোগান্তির বিষয়ে আমি খবর পেয়েছি। ড্রেনগুলো পরিষ্কার না থাকায় এমন হয়েছে। পৌরসভার কর্মীরা কাজ করছে। অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে সাময়িকভাবে এটা হয়েছে। আগামী দু-এক দিনের মধ্যে সমাধান হয়ে যাবে বলে আশা করছি।’ 

সুজন/বকুল 

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়