মৃত্যুর আগেই চল্লিশা, ৪০০ গ্রামবাসীকে খাওয়ালেন বৃদ্ধ
ময়মনসিংহ প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম
বাড়ির সামনে সামিয়ানা টাঙিয়ে চল্লিশার আয়োজন করেন মারফত আলী
মৃত্যুর আগে চল্লিশা ভোজ আয়োজন করলেন ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার বড়হিত ইউনিয়নের রাজেন্দ্রপুর গ্রামের কৃষক মো. মারফত আলী (৭০)। গত সোমবার (১ জুলাই) দুপুরে নিজ বাড়ির উঠোনে আয়োজিত ভোজে অতিথি ছিলেন গ্রামের প্রায় ৪০০’র বেশি বাসিন্দা। নারী, পুরুষদের পাশাপাশি শিশুরাও ভোজে অংশ নিয়েছেন। মৃত্যুর পরের আনুষ্ঠানিকতা মৃত্যুর আগেই আয়োজন করার বিষয়টি রাজেন্দ্রপুর গ্রামের মানুষের কাছে ছিল আলোচনার বিষয়।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সাধারণত কেউ মারা গেলে ৪০ দিন পর ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতার পাশপাশি এ ধরনের ভোজ আয়োজন করতে দেখা যায়। অনেকে ধারণা করেন, এর ফলে মৃতের আত্মা শান্তি পায়। তবে এ নিয়ে অনেকে দ্বিমতও পোষণ করেছেন।
জীবদ্দশায় চল্লিশার ভোজ আয়োজনের কারণ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে মারফত আলী জানান, তার যথেষ্ট পরিমাণ সহায় সম্পদ ও ফসলি জমিজমা রয়েছে। তিনি দুটি বিয়ে করেছেন। দুই সংসারে ছয় সন্তান রয়েছে। তিনি মারা গেলে সন্তানরা গ্রামের মানুষকে দাওয়াত করে তৃপ্তি সহকারে খাওয়াবে কি-না তাতে তিনি সন্দিহান। তাই জীবদ্দশায় তিনি নিজেই এই আয়োজন করে গেলেন।
ভােজ আয়াজনের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করার পর মারফত আলী নিজে গ্রামে হেঁটে হেঁটে প্রত্যেক বাড়িতে গিয়ে নিজের অভিপ্রায়ের কথা ব্যক্ত করে মানুষকে আমন্ত্রণ করেছেন ভোজে অংশ নেওয়ার জন্য। মানুষ তার ডাকে সাড়াও দিয়েছেন। অনেকে তার এই আয়োজনের প্রশংসা করেছেন।
মারফত আলীর আয়োজন করা ভোজে অতিথি ছিলেন রাজেন্দ্রপুর গ্রামের মো. আবু সিদ্দিক। তিনি বলেন, ‘সামর্থ্যবান পরিবারের কোনো সদস্য মারা গেলে ৪০ দিন পর মৃত ব্যক্তির আত্মার শান্তি কামনা করে মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়। মিলাদে আগত লোকজনকে খাওয়ানো হয়। যার আর্থিক সক্ষমতা নেই তার কথা আলাদা। মারফত আলী রাজেন্দ্রপুর গ্রামের স্বচ্ছল কৃষক। তার ইচ্ছা হয়েছে, জীবদ্দশায় চল্লিশার আয়োজন করে গ্রামবাসীকে দাওয়াত করে খাওয়ানোর। তিনি সেটা করেছেন।’
সোমবার দুপুরে মারফত আলীর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির উঠোনে সামিয়ানা টাঙিয়ে চেয়ার-টেবিল বসানো হয়েছে। মধ্যহ্নের সময় গ্রামের লোকজন ভোজে অংশ নিচ্ছেন। মারফত আলীর ছেলেসহ প্রতিবেশী ও স্বজনরা নিমন্ত্রিতদের খাবার পরিবেশন করছেন। মাঝেমধ্যে মারফত আলীকেও মেহমানদের সামনে তরকারির বাটি এগিয়ে দিতে দেখা গেছে।
স্থানীয় আবদুর রেজা বলেন, মারফত আলীর আয়োজন খুব ভালো ছিল। আয়োজনে ত্রুটি রাখেননি মারফত আলী।
মারফত আলীর মেয়ে মোছা. রেনুয়ারা বেগম জানান, তিনি স্বামীর বাড়িতে থাকেন। ভোজ উপলক্ষে বাবা তাকে নিমন্ত্রণ করে ডেকে এনেছেন।
মৃত্যুর পরের আনুষ্ঠানিকতা মৃত্যুর আগে আয়োজন করা প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে রেনুয়ারা বলেন, বাবার মৃত্যুর পর তার ভাইয়েরা সামর্থ্য অনুযায়ী এই অনুষ্ঠান অবশ্যই আয়োজন করতেন। কিন্তু, বাবা মৃত্যুর আগে মানুষকে খাওয়াবেন বলে মনস্থির করে ফেলেছেন। তাই দুই সংসারের ভাই-বোনেরা বাবার ইচ্ছের প্রতি সম্মান জানিয়েছেন।
খাবার রান্নার দায়িত্বে ছিলেন রাজেন্দ্রপুর গ্রামের বাবুর্চি কাজী নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, রান্নার উপকরণ হিসেবে যা চাওয়া হয়েছে মারফত আলী তারই যােগান দিয়েছেন। মেহমনারাও রান্নার প্রশংসা করেছেন। খাবারের শেষপাতে মেহমানদের পায়েস ও মিষ্টি দেওয়া হয়েছে।
ভোজের আসর থেকে ফেরার পথে কথা হয় স্থানীয় কপাটি বাজার জামে মসজিদের ইমাম আবুল কাশেমের সঙ্গে। জানতে চাইলে আবুল কাশেম বলেন, ‘এ ধরনের আয়োজন ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে সমর্থন যোগ্য নয়।’
মিলন/মাসুদ