ঢাকা     সোমবার   ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪ ||  পৌষ ৮ ১৪৩১

৫ বছরেও শেষ হয়নি মডেল মসজিদ নির্মাণকাজ

মাদারীপুর প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:২৭, ৪ জুলাই ২০২৪  
৫ বছরেও শেষ হয়নি মডেল মসজিদ নির্মাণকাজ

মাদারীপুরে সদর উপজেলা মডেল মসজিদ ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের কাজ শেষ হয়নি ৫ বছরেও। শুধু পাইলিং করেই কোটি টাকার বিল নিয়ে লাপাত্তা হয়েছে ঠিকাদার।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশের জেলা ও উপজেলায় ৫৬০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপন প্রকল্পের আওতায় মাদারীপুর সদর উপজেলায় তিনতলা বিশিষ্ট মসজিদ ভবন এবং ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পটির কাজ শুরু হয় ২০১৯ সালের মে মাসে। ইসলামিক ফাউন্ডেশন ও মাদারীপুর গণপূর্ত বিভাগ প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন করে। ইউনুস অ্যান্ড ব্রাদার্স নামে বরিশালের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্রকল্পের ঠিকাদারী কাজ পায়। চুক্তিমূল্য অনুযায়ী ১৪ কোটি ৭১ লাখ টাকা ব্যয়ে এই প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২০ সালের মাঝামঝি সময়।

গত ৫ বছরে শুধুমাত্র পাইলিং-এর কাজ করা হয়েছে। এরপর থেকেই বন্ধ রয়েছে কাজ। চলতি বছর ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কাজ করবে না বলে চিঠি দিয়েছে গণপূর্ত বিভাগকে। এদিকে পাইলিং বিল বাবদ তুলে নিয়েছে প্রায় ১ কোটি টাকা।

আরো পড়ুন:

তবে গণপূর্ত বিভাগের দাবি স্থান নির্ধারণ সংক্রান্ত জটিলতার কারণে বন্ধ ছিলো কাজ। তবে স্থান নির্ধারণ সংক্রান্ত জটিলতা থাকলে পাইলিং-এর কাজ কিভাবে করা হয়েছে জানতে চাইলে জবাব দিতে পারেনি গণপূর্ত বিভাগ।
বিষয়টি নিয়ে গত বছরের ২৪ আগস্ট দুদকের গণশুনানিতে আলোচনাও হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে মাদারীপুর গণপূর্ত বিভাগের সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী মো. কামরুল ইসলাম খান ও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মালিকের যোগসাজশে নামমাত্র কাজ করে কোটি টাকার বিল তুলে নেওয়া হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, মাদারীপুর সদর উপজেলা পরিষদের পাশেই মডেল মসজিদ নির্মাণের জন্য পাইলিং করা হয়েছে। পাইলিং কাজে ব্যবহৃত রডে ইতোমধ্যে মরিচা ধরে গেছে।

কাজের অনিয়ম ও বিল তুলে নেওয়ার বিষয় তুলে ধরে গত বছরের ২৪ আগস্ট নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি দুদকের গণশুনানিতে অভিযোগ করেন। অভিযোগের ভিত্তিতে তৎক্ষণাৎ বিষয়টি তদন্ত করার নির্দেশ দেন দুদকের তৎকালীন সচিব মাহবুব হোসেন। তবে এরপরও শুরু হয়নি কাজ। ইতোমধ্যে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কোটি টাকার বিল তুলে নিয়ে আর কাজ করবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে।

গণপূর্ত বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ঠিকাদার কাজ না করার কারণে দ্বিতীয় দফায় দরপত্র আহ্বান করে আবার নতুন ঠিকাদার নির্ধারণ করে তারপর কাজ শুরু করা হবে। নতুন করে দরপত্র আহ্বান করা হলে নির্মাণ ব্যয় কয়েকগুণ বেড়ে যাবে বলে ধারণা সংশ্লিষ্টদের।

মাদারীপুরের নির্মাণ সামগ্রী বিক্রেতা (রড, সিমেন্ট ব্যবসায়ী) মো. সালাহ উদ্দিন জানান, ২০১৯ রডের কেজি ছিল ৫০ টাকা। বর্তমানে এই রডের দাম প্রায় ১০০ টাকা। সব ধরনের নির্মাণ সামগ্রীর দামই বেড়েছে।

মাদারীপুর উন্নয়ন সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি আ্যাডভোকেট মাসুদ পারভেজ বলেন, নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ হলেও দ্বিতীয় দফা দরপত্র আহ্বান করার দরকার হতো না। এক বছরের একটি কাজ ৫ বছরেও শেষ করতে পারেনি। সব কিছুর দাম বেড়ে গেছে। এখন দ্বিতীয় দফায় দরপত্র আহ্বান করে কাজ শেষ করতে হলে তো নির্মাণ ব্যয় কয়েকগুণ বেড়ে যাবে।

স্থানীয় বাসিন্দা মিজান শিকদার বলেন, সারাদেশের মডেল মসজিদ নির্মাণকাজ শেষ হলেও মাদারীপুরের সদর উপজেলা মডেল মসজিদের কোনো হদিস নেই। কয়েক বছর থেকে কাজ পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে।

মাদারীপুর গণপূর্ত বিভাগের সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী মো. কামরুল ইসলাম খান তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, যতটুকু কাজ করা হয়েছে সেই হিসাবেই ঠিকাদারের বিল পরিশোধ করা হয়েছে।

মাদারীপুর গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহরিয়ার হোসেন বলেন, স্থান নির্ধারণ সংক্রান্ত ঝামেলার কারণে কাজ বন্ধ ছিলো। বর্তমান ঠিকাদার কাজ করবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে। তবে শীঘ্রই দরপত্র আহ্বান করে কাজ শুরু করা হবে।

মাদারীপুর ইসলামী ফাউন্ডেশনের উপ-পরিচালক আব্দুর রাজ্জাক রনি বলেন, আমরা দ্রুত কাজ শেষ করার চেষ্টা করছি। এ ব্যাপারে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মালিকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাদের পাওয়া যায়নি।

মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মারুফুর রশিদ খান বলেন, কাজটি অনেকদিন বন্ধ ছিলো। পুনরায় মডেল মসজিদের নির্মাণকাজ শুরু করার চেষ্টা করছি।

মডেল মসজিদ ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মো. নজীবুর রহমান বলেন, পাইলিং-এর কাজ করা হয়েছে। স্থানীয় লোকজন এবং জনপ্রতিনিধিরা চাচ্ছেন না কাজটা ওখানে হোক। তাই কাজ বন্ধ ছিল। পুরনো ঠিকাদার কাজ করবেন না। সে কারণে নতুন ঠিকাদার নিযুক্ত করে আবার কাজ শুরু করা হবে।

বেলাল/ফয়সাল

সম্পর্কিত বিষয়:


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়