ঢাকা     রোববার   ০৭ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ২৩ ১৪৩১

বাবাকে খুঁজে পেতে চাটমোহরের পথে পথে ঘুরছেন রূপা

পাবনা প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২২:১৭, ৪ জুলাই ২০২৪  
বাবাকে খুঁজে পেতে চাটমোহরের পথে পথে ঘুরছেন রূপা

রূপা খাতুন

‘বাবার চেহারা আবছা আবছা মনে আছে, পরিষ্কার মনে নেই। বাবার কথা যখন কেউ জিজ্ঞেস করে, তখন কলিজাটা ফেটে যায়। সব সময় বাবার কথা মনে পড়ে। বিভিন্ন সমস্যার কারণে খুঁজতে বের হতে পারিনি। ইদানিং বাবার কথা খুব বেশি মনে পড়ছিল। বিয়ের পর শ্বশুর বাড়িতে বাবার প্রসঙ্গ উঠলে কটূ কথা শুনতে হয়েছে। আমি তো জারজ সন্তান নই। আমার তো বাবা আছে। বাবা তো কত বছর আমাদের সঙ্গে ছিলেন। আমার নানার বাড়ি এলাকায় থেকে ব্যবসা করেছেন। কত মানুষ চেনে তাকে। বাবাকে খুঁজতে প্রথম চাটমোহরে এসেছি।’  

কথাগুলো বলতে বলতে বার বার কাঁদছিলেন নড়াইল থেকে পাবনার চাটমোহরে বাবাকে খুঁজতে আসা রূপা খাতুন (২৫)। 

এ তরুণী চাটমোহরের বিভিন্ন এলাকায় তার বাবাকে খুঁজে বেড়াচ্ছেন। গত মঙ্গলবার (২ জুলাই) বিকেলে চাটমোহর উপজেলা গেট এলাকায় দেখা যায় তাকে। রুপা নড়াইলের কালিয়া উপজেলার ছোট কালিয়া গ্রামের বাসিন্দা। তার বাবার নাম নুর ইসলাম মোল্লা।

রুপা খাতুন বলেন, ‘৩০-৩৫ বছর আগে আমার বাবা চাটমোহরের নুর ইসলাম মোল্লা নড়াইল জেলার কালিয়া উপজেলার শুক্তগ্রামে যান। শুক্তগ্রামের গফফার আলীর সঙ্গে ভাইয়ের সম্পর্ক স্থাপন করে তার আশ্রয়ে বসবাস শুরু করেন। দুই-তিন বছর গফফার আলীর বাড়িতে বসবাস করেন। তখন ছোট কালিয়া গ্রামের আলতাব মোল্লার মেয়ে রহিমা বেগমকে (রুপার মা) বিয়ে করেন। বিয়ের পর আলতাব মোল্লার বাড়িতে স্ত্রীসহ বসবাস করতে থাকেন। এলাকায় কাঁচা মালের (সবজি) দোকান দেন বাবা। বড় কালিয়া এলাকায় ছয় শতাংশ জায়গাও কেনেন। তাদের সংসারে আমার এবং আমার বোন নুরজাহানের জন্ম হয়। ভালোই কাটছিল আমাদের সংসার।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘শুক্তগ্রাম, ছোট কালিয়া ও বড় কালিয়া এলাকায় ১৪-১৫ বছর বসবাসের পর আমার যখন চার বছর, একদিন বাবা বাঁধাকপি বিক্রি করতে খুলনায় যান। এটি প্রায় ২০ বছর আগের কথা। এরপর বাবা আর বাড়িতে ফেরেননি। আমার মা, মামারা সম্ভাব্য সব স্থানে খোঁজ করেও বাবার সন্ধান পাননি।’

অভিমানে রহিমা বেগম কখনও স্বামীকে চাটমোহরে খুঁজতে আসেননি। তারা শুধু এটুকু শুনেছেন নুর ইসলাম মোল্লার বাড়ি চাটমোহরের দিয়ার বা দিয়ারা বা এমন নামের কোনো গ্রামে। রহিমা বেগম তার মেয়ে রুপা ও নুরজাহানকে নিয়ে ভাইয়ের আশ্রয়ে রয়েছেন। দুই মেয়েকে বিয়েও দিয়েছেন।

রুপা জানান, বাবার বয়স এখন ৫০ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে হবে। ৫ ফিট ৬ ইঞ্চির মতো লম্বা হবে। মুখে ছোট ছোট হালকা চাপ দাড়ি ছিল। বাবার কোনো ছবিও নেই। রূপার মা, মামারা চাটমোহরে বাবার বাড়ি বলেছেন, এটাও সত্য, না মিথ্যা তাও জানা নেই। বাবা বেঁচে আছেন, না মরে গেছেন তাও জানেন না। যতদুর শুনেছেন তার দাদার নাম আব্দুল মোল্লা। ইদানীং বাবাকে খুব মনে পড়ছে রূপার। 
 

শাহীন/বকুল

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়