ঢাকা     সোমবার   ০৮ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ২৪ ১৪৩১

রাজবাড়ীতে পদ্মায় ভাঙন 

ঝুঁকিতে ফেরিঘাটসহ শত শত বসতবাড়ি

রাজবাড়ী প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:১৫, ৫ জুলাই ২০২৪  
ঝুঁকিতে ফেরিঘাটসহ শত শত বসতবাড়ি

পদ্মায় পানি বাড়ায় ভাঙন দেখা দিয়েছে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়ার ৭ নম্বর ফেরিঘাট এলাকায়। এরইমধ্যে নদীতে বিলীন হয়েছে অন্তত ২শত মিটার এলাকা। ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে দৌলতদিয়ার ৩, ৪, ৬ ও ৭ নাম্বার ফেরিঘাটসহ কয়েক শত বসতবাড়ি। ভাঙন রোধে স্থায়ী পদক্ষেপ চায় স্থানীয়রা। আর বিআইডবিব্লিউটিএ বলছে, বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন রোধের চেষ্টা চলছে। 

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পদ্মায় পানি বাড়ায় ভাঙন দেখা দিয়েছে দৌলতদিয়ার সাত্তার মেম্বার পাড়ায়। ৭ নম্বর ফেরিঘাটের পূর্ব পাশে পন্টুন থেকে দশ ফিট দূরেই ভাঙন রোধে বালু ভর্তি বালুর ব্যাগ ফেলছে বেশ কয়েকজন শ্রমিক। শ্রমিকেরা বিআইডব্লিউটিএর নির্দেশে এ কাজ করছেন। 

এদিকে ৭ নম্বর ফেরিঘাটের পশ্চিম পাশেও ভাঙন দেখা দিয়েছে। কয়েকদিনের ভাঙনে বেশ কয়েকটি পরিবারের ঘরের পাশেই নদী চলে এসেছে। অনেকের বসতঘর থাকলেও রান্নাঘর নদীতে ভেঙে গেছে। কেউ কেউ বাড়ির গাছগুলো কেটে ফেলছে যেন নদীতে বিলীন হয়ে না যায়। ভাঙন ঝুঁকিতে থাকা পরিবারের মানুষদের চোখে-মুখে রয়েছে চাপা কষ্টের ছাপ। 

৭ নম্বর ফেরিঘাটের পূর্ব পাশেই বাড়ি ইদ্রিস প্রামানিকের। তিনি বলেন, ‘নদীতে ভাঙে সব চলে যাচ্ছে। এহন দেখছি বস্তা ফেলাচ্ছে, ক্যা বস্তা পানি কমার সময় ফেলালে কি হয়? পানি যহন বাড়ে তহন বস্তা ফেলায়। পানি কমার সুময় যদি বস্তা ফেলায় তালি ভাঙন হয় না কিন্তু বস্তা ফেলায় পানি বাড়ার সুময়। যা কোনো কামেই আসে না।’ 

পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন রশিদ মোল্লা। তিনি বলেন, ‘আমাদের বার বার ভাঙনের কবলে পড়তে হইছে। এই যে দুই এক বস্তা যাই দেয় তা তো থাহে না। ভালো করে নদী শাসন করলি আমরা থাকপের পারতাম। এহন যে অবস্থা আমাদের জীবনই বাঁচে না।’ 

৭ নম্বর ফেরিঘাটের পশ্চিম পাশে এসে কথা হয় সালাম কাজির সাথে। তিনি বলেন, ‘আমরা তো রাতে ঘুমাতে পারি না। রাত হলেই ছেলে-মেয়ে নিয়ে নদীর পাড়ে বসে থাকি। এই নদী শাসন কবে হবে? বস্তা না ফেললে বাড়িতে থাকতে পারবো না। এভাবে কয়দিন রাত জাগা যায়? আমরা কি এদেশের মানুষ না? আমাদের কোনো জায়গা জমি নাই, বাড়ি ঘর ভেঙে গেলে যাওয়ার জায়গা থাকবে না।’ 

স্থানীয় বাসিন্দা মো. বাহাদুর খান বলেন, ‘আমাদের এখানে সাতটা ফেরিঘাটের মধ্যে এখন চারটা আছে। তিনটা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এখন চারটা ঘাটের মধ্যে তিনটা ফেরিঘাট সারা বছর ভালো থাকে। বাকি একটা শুধু বর্ষা মৌসুমে ফেরি ভিড়ে। যদি ভালো থাকা ফেরিঘাটগুলো ভেঙে যায় তাহলে যাতায়াত ব্যাহত হবে।’ 

আরেক বাসিন্দা মো. কাদের মোল্লা বলেন, ‘রাতে তো ঘুম হয় না। নদী ঘরের কাছে। আমার ঘরের আগে একটা বাড়ি আছে সেটা গেলেই আমার বাড়ি নদীতে চলে যাবে। এ জন্য রাতে মাঝে মধ্যেই দেখি ভাঙছে কি না। অনেকের কয়েকটি গাছ ও রান্নাঘর নদীতে চলে গেছে। আমদের যাওয়ার আর কোনো জায়গা নাই। এবার বাড়ি ভেঙে গেলে পথে গিয়ে থাকতে হবে।’ 

বিআইডব্লিউটিএর টেকনিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্ট নাছিম হোসেন বলেন, গত কয়েকদিনের ভাঙনে ৭ নম্বর ফেরিঘাটের পূর্ব ও পশ্চিম পাশে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙন রোধে বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। দুইপাশ মিলিয়ে ২শ মিটারের বেশি ভেঙে গেছে। 

ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে দৌলতদিয়ার ৩, ৪, ৬ ও ৭ নাম্বার ফেরিঘাটসহ আশপাশের বসতবাড়িগুলো বলেও জানান তিনি। 

দৌলতদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান মণ্ডল বলেন, বাবা-মা, আত্মীয়-স্বজনের কবর, বাড়িঘর, গাছপালা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এসব ছোট থেকেই দেখে আসছি অথচ আজ পর্যন্ত এর কোনো প্রতিকার হলো না। অস্থায়ীভাবে এখানে কিছু বস্তা ফেলানো হয় তবে সেটা বর্ষা মৌসুমে। শুষ্ক মৌসুমে যদি বস্তাগুলো ফেলানো হতো তাহলে বর্ষার সময় ভাঙন দেখা দেয় না। 

তিনি আরও বলেন, আমাদের যারা নেতারা আছে তাদের অনেকবার বলার পর তারা এই বস্তাগুলো নিয়ে আসে। আবার যখন নদীতে ফেলে তখনও যেখানে ফেলার দরকার সেখানে না ফেলে অন্য জায়গায় ফেলায়। তারা ফেলায় ফেরিঘাট রক্ষার জন্য। তাদের লক্ষ্য থাকে ঘাট রক্ষা করা। ঘাটের পাশে যে শতশত পরিবার আছে তাদের কথা চিন্তা করে না। এখানকার বাসিন্দাদের বর্ষার সময় চোখে ঘুম থাকে না। রাত জেগে নদীর পাড়ে পাইচারি করে এই ভেবে কখন যেন তাদের বাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে যাবে। ঘাট এলাকায় সাড়ে ৩শ থেকে ৪শ বাড়ি ভাঙন ঝুঁকিতে আছে।

সম্প্রতি ভাঙন এলাকা পরিদর্শনে এসে বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান কমডোর আরিফ আহমেদ মোস্তফা বলেন, ঘাট যেখানে হুমকির মুখে পড়বে আমরা সেখানেই কাজ করবো। এখানে সরকারের বড় পরিকল্পনা রয়েছে। আমরা একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছি। পূর্বে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাথে একটি সমীক্ষা করা হয়েছিল। আর এখন যেভাবে ঘাট ভাঙছে তাতে আবারও সমীক্ষার প্রয়োজন হচ্ছে। যে কারণে প্রকল্পর খরচও বেড়ে যাচ্ছে। খুব শীগ্রই আমরা একটা সিদ্ধান্তে এসে এখানে কাজ শুরু করবো। আপাতত ভাঙন রোধে জিও ব্যাগ ফেলেই চেষ্টা করা হবে।

রবিউল/ইমন

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়