ঢাকা     সোমবার   ০৮ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ২৪ ১৪৩১

নৌকাডুবিতে ৭২ প্রাণহানি 

সেই ঘাটে এগিয়ে চলছে ওয়াই সেতুর নির্মাণ কাজ

পঞ্চগড় প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:৫৮, ৫ জুলাই ২০২৪  
সেই ঘাটে এগিয়ে চলছে ওয়াই সেতুর নির্মাণ কাজ

পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার মাড়েয়া ইউনিয়নের আউলিয়ার করোতায়া নদীর যে ঘাটে নৌকাডুবিতে ৭২ জনের মৃত্যু হয়েছিল সেখানে দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে ওয়াই আকৃতির সেতুর নির্মাণ কাজ। সেতুর কাজ চলমান থাকায় উপজেলার মানুষের মধ্যে বিরাজ করছে আনন্দের আমেজ। নির্মাণ কাজ শেষ হলেই এ সেতুর ওপর দিয়ে চলাচল করতে পারবে দুই ইউনিয়নের নদীর তীরবর্তী মানুষ। সেতুর কাজ দ্রুত শেষ করার দাবি স্থানীয়দের।

জানা যায়, বোদা উপজেলার ১০টির ইউনিয়নের মধ্যে দুইটি বড়শশী ও কালিয়াগঞ্জ ইউনিয়ন করতোয়া নদীর অপরপ্রান্তে। এ দুটি ইউনিয়নের অসংখ্য মানুষ উপজেলা শহরে যেতে নদী পারাপারে ভরসা করেন নৌকার ওপর। যাতায়াত নির্বিঘ্ন করতে দীর্ঘদিন ধরেই উপজেলার মানুষরা দাবি করে আসছেন, করতোয়া নদীর আউলিয়ার ঘাটে সেতু নির্মাণের।

প্রসঙ্গত, ২০২২ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর সনাতন ধর্মাবলম্বীরা দুর্গা পূজার আগে মহালয়ায় অংশ নিতে বড়শশী ইউনিয়নের বোদেশ্বরী শক্তিপীঠ মন্দিরে যেতে আউলিয়ার ঘাট থেকে একটি সেলো ইঞ্জিন চালিত নৌকায় উঠেছিলেন। ধারণক্ষমতার বেশি যাত্রী থাকায় নৌকাটি করতোয়া নদীর মাঝখানে ডুবে যায়। এ ঘটনায় মারা যান নারী-শিশুসহ ৭২ জন। 

নৌকাডুবির ঘটনার পর আউলিয়ার ঘাটে পঞ্চগড় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক রেলমন্ত্রী অ্যাডভোকেট মো.নুরুল ইসলাম সুজন সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেন। সেই প্রতিশ্রুতি আলোর মুখ দেখছে দুই বছরের মাথায়। ১১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে গত বছরের ১৮ অক্টোবর ৮৯১ মিটার পিসি গার্ডার ওয়াই আকৃতির সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন নুরুল ইসলাম সুজন। এর মধ্য দিয়ে ৩১ ডিসেম্বর থেকে নদীর ওপর দৃশ্যমান হয় সেতু নির্মাণ কাজ। বর্তমান সেতু নির্মাণে ব্যস্ত সময় পার করছে শ্রমিকসহ সংশ্লিষ্টরা। সেতু নির্মাণের কাজও চলছে দ্রুত গতিতে। ইতোমধ্যে সেতুর ২৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছেন পঞ্চগড় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। সেতুটির শুরুর অংশ মাড়েয়ার দিকে থাকবে এবং অপর দুই অংশের একটি বড়শশী ও অপরটি কালিয়াগঞ্জের দিকে থাকবে।

স্থানীয়রা জানান, দুটি ইউনিয়নের মানুষদের শহরে যেতে নদী পার হতে ভরসা করতে হয় নৌকার। ফলে ব্যাপক ভোগান্তি পোহাতে হয়। যাতায়াত ব্যবস্থা ঠিক না থাকায় কৃষি ও চিকিৎসাসেবা থেকে শুরু করে শিক্ষাসহ সব সেবা থেকে পিছিয়ে রয়েছেন তারা। সেতু নির্মাণের ফলে তারা অনেক সুফল ভোগ করবেন। 

স্থানীয় বাসিন্দা আব্বাস আলীর বলেন, ‌‌‘আমাদের প্রতিদিন নদী পারাপার হতে হয়। বিশেষ করে বর্ষার সময় খুব কষ্ট হয়। সে সময়টাতে নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নৌকা দিয়ে যাতায়াত করতে খুবই দুর্ভোগ পোহাতে হয়। আউলিয়া ঘাটে নৌকা ডুবির ঘটনার পর অনেকে সন্ধ্যার পর নৌকা পার হতে ভয় পান। এখন এখানে সেতু নির্মাণ হচ্ছে দেখে খুব আনন্দ লাগছে। শুনেছি, সেতুটি ওয়াই আকৃতির ও দৃষ্টিনন্দন হবে। ফলে আমাদের চলাচল যেমন সহজ হবে, তেমনি অনেক মানুষ এ সেতু দেখতে আসবে।’  

তিনি আরও বলেন, ‘আউলিয়া ঘাটটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের নিয়মিত পারাপার হতে হয়। নৌকায় পারাপার না হলে  প্রায় ২০ থেকে ২৫ কিলোমিটার রাস্তা ঘুরে বোদা বাজারসহ পঞ্চগড়ে যেতে হয়। আমাদের এলাকার প্রসূতি নারীসহ এলাকাবাসী দুর্ঘটনার শিকার হলে চরম বিপাকে পড়েন। এই সেতুর কাজ দ্রুত শেষ হলে সব ক্ষেত্রে আমাদের দুর্ভোগ লাঘব হবে।’

এই আউলিয়া ঘাটেই নৌকা ডুবিতে মা-বাবাকে হারিয়েছেন দীপন। তিনি বলেন বলেন, ‘সেদিন মহালয়ায় যাওয়ার সময় নৌকা ডুবিতে ৭২ জনের মৃত্যু হয়েছিল। আমার ৫ বছর বয়সী ছোট ভাই দিপুকে নিয়ে মা-বাবা একই নৌকায় মহালয়ায় যাচ্ছিলেন। ভাই ফিরে আসলেও নৌকা ডুবিতে মারা গেছেন মা-বাবা। সেদিনের স্মৃতি ভুলতে পারছি না। এই সেতুটি যদি আগে নির্মাণ হতো তাহলে ৭২ জন মানুষজনের মৃত্যু হতো না।’ 

সেতু নির্মাণ প্রতিষ্ঠান এনডিই লিমিটেডের প্রজেক্ট ম্যানেজার মো. ওয়াসিম বলেন, ‘সেতু নির্মাণের কাজ হাই লেভেলে চলছে। ইতোমধ্যে আমাদের ২৫ শতাংশের বেশি কাজ এগিয়েছে। এখন তো বর্ষাকাল। নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। তারপরেও আমাদের কাজ থেমে নেই।’

পঞ্চগড় এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মাহমুদ জামান বলেন, ‘সেতুটি দ্রুত নির্মাণে সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ১১০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৮৯০ মিটার দৈর্ঘ্যের ‘ওয়াই’ আকৃতির সেতু নির্মাণের কাজ দৃশ্যমান হয়েছে। সেতুর মাঝ পথ থেকে দুই অংশে বিভক্ত হয়েছে। এক অংশ ৫৪৫ মিটার, আরেক অংশ হবে ৩৪৫ মিটার দৈর্ঘ্য। আশা করছি আগামী দুই বছরের মধ্যেই কাজ সমাপ্ত হবে।’

এদিকে, সম্প্রতি কাজের অগ্রগতি দেখতে ঘাট পরিদর্শন করেছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য ও সাবেক রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন। চুক্তির মেয়াদ অনুযায়ী কাজ সমাপ্ত হবে বলে আশা করে তিনি বলেন, ‘দুই বছর আগে এই ঘাটে যে ঘটনাটি ঘটেছে সেটি অনাকাঙ্খিত। এই সেতু হওয়ার পর এলাকার মানুষের ভাগ্যের চাকা অনেকটাই পরিবর্তন হবে। পর্যটন শিল্প এলাকা গড়ে উঠবে এখানে।’ 

নাঈম/মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়