ঢাকা     শনিবার   ০৫ অক্টোবর ২০২৪ ||  আশ্বিন ২০ ১৪৩১

আজ ঐতিহাসিক কাঁটাখালি যুদ্ধ দিবস

শেরপুর প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৩৫, ৬ জুলাই ২০২৪  
আজ ঐতিহাসিক কাঁটাখালি যুদ্ধ দিবস

আজ ৬ জুলাই। শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার ঐতিহাসিক কাঁটাখালী যুদ্ধ দিবস। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ১৯৭১ সালের এই দিনে ‘অপারেশন কাঁটাখালি’ নামের ঐতিহাসিক যুদ্ধ সংঘটিত হয়। ওই সম্মুখযুদ্ধে শহীদ হন ময়মনসিংহের কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃতি শিক্ষার্থী অপারেশন কমান্ডার নাজমুল আহসান (স্বাধীনতা পদক প্রাপ্ত) এবং তার পরিবারের অপর দুই বীর মুক্তিযোদ্ধা মোফাজ্জল হোসেন ও আলী হোসেনসহ ১২ জন। এই দিনটিকে স্মরণ করতে প্রতিবছর জেলা প্রশাসন ও মুক্তিযুদ্ধারা আয়োজন করেন আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল। 

স্থানীয়দের তথ্যমতে, শেরপুর-ঝিনাইগাতী-নালিতাবাড়ী আঞ্চলিক মহাসড়কে কাঁটাখালী ব্রিজটি পারি দিয়ে মাত্র ১০ কিলোমিটার দূরে ঝিনাইগাতী উপজেলার আহাম্মদ নগরে ছিলেন ১১নং সেক্টরের বিপরীতে পাক আর্মির হেডকোয়ার্টার। তাই এটি ধ্বংস করে পাকবাহিনীর যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে দিতে এই ব্রিজটি ধ্বংস করা অপরিহার্য হয়ে উঠে। মুক্তিবাহিনী কয়েকবার অভিযান করেও ব্যর্থ হয়। অবশেষে এই ব্রিজ ভাঙার দায়িত্ব আসে কোম্পানি কমান্ডার নাজমুলের উপর। অবশেষে ১৯৭১ সালের ৫ জুলাই রাতে কোম্পানি কমান্ডার নাজমুলের নেতৃত্বে অপারেশন কাঁটাখালী সফল হয়। ডিনামাইট দিয়ে কাঁটাখালি ব্রিজটি উড়িয়ে দিতে সক্ষম হন তারা। ফলশ্রুতিতে উল্লেখযোগ্য এলাকার যুদ্ধ পরিস্থিতি বদলে যায়।

সফল ওই অপারেশন শেষ করতে ভোর হয়ে যাওয়ায় পার্শ্ববর্তী রাঙামাটি খাঠুয়াপাড়া গ্রামে আশ্রয় নেয় মুক্তিযোদ্ধারা। কিন্তু ওই গ্রামের জালাল মিস্ত্রী নামের এক রাজাকার পাক বাহিনীর স্থানীয় হেড কোয়ার্টার আহাম্মদনগর ক্যাম্পে মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থানের খবরটি পৌঁছে দেয়। সংবাদ পেয়ে পাক হানাদার বাহিনী ৬ জুলাই সকালে রাজাকার, আল-বদরদের সাথে নিয়ে রাঙ্গামাটি গ্রাম তিনদিক থেকে ঘিরে ফেলে গুলিবর্ষণ শুরু করে। শুরু হয় সম্মুখ যুদ্ধ। সেই যুদ্ধে শহীদ হন কমান্ডার নাজমুল আহসান, তার চাচাতো ভাই আলী হোসেন ও মোফাজ্জল হোসেন নামের তিন বীর মুক্তিযোদ্ধা। এরপর পাক বাহিনী রাঙ্গামাটি গ্রামে হানা দিয়ে ৬০ থেকে ৭০ জন গ্রামবাসীকে লাইনে দাঁড় করিয়ে ব্রাশ ফায়ার করে। এতে ঘটনাস্থলেই শহীদ হন আরও ৯ জন। এছাড়া গ্রামের বেশ কয়েকজন নারীর ওপর পাশবিক নির্যাতন চালানো হয়। 

স্বাধীনতা অর্জনের পর মুক্তিযুদ্ধে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে শহীদ নাজমুলকে স্বাধীনতা পদকে ভূষিত করে সরকার। পরে তার প্রিয় বিদ্যাপীঠ ময়মনসিংহ কৃষি বিদ্যালয়ে শহীদ নাজমুলের নামে একটি হল তৈরি করে। তার গ্রামের বাড়ি নালিতাবাড়ীতে একটি কলেজ স্থাপন করে, পরবর্তীতে তা সরকারীকরণ করা হয়। সর্বশেষ শেরপুর জেলা প্রশাসন সেই যুদ্ধের স্মৃতি চিহ্ন হিসেবে কাঁটাখালী ব্রিজের পাশে নির্মিত হয়েছে দৃষ্টিনন্দন শহীদ নাজমুল চত্তর।

তারিকুল/ইমন


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়