ঢাকা     শনিবার   ০৫ অক্টোবর ২০২৪ ||  আশ্বিন ২০ ১৪৩১

শেরপুরে থামছে না বন্য হাতির তাণ্ডব 

শেরপুর প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:৩৩, ৬ জুলাই ২০২৪   আপডেট: ১৬:২৩, ৬ জুলাই ২০২৪
শেরপুরে থামছে না বন্য হাতির তাণ্ডব 

বন্যহাতির তাণ্ডবে তছনছ হওয়া ফলের বাগান

ভারতের সীমান্তঘেঁষা শেরপুর জেলার তিনটি উপজেলা গারো পাহাড় বেষ্টিত। এতে মোট ১৯ হাজার ২৭৫ একর বনভূমি রয়েছে। এই গারো পাহাড়বেষ্টিত এলাকাগুলোতে হাতির তাণ্ডব থামছেই না। প্রতিরাত গ্রামবাসীদের নির্ঘুম কাটাতে হচ্ছে। ৩০-৩৫টি বন্যহাতির একটি দল বিভিন্ন উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকায় টানা আক্রমণ করে যাচ্ছে। 

গত কয়েকদিন ধরে নালিতাবাড়ি উপজেলার নাকুগাঁও পয়েন্টের বিভিন্ন এলাকায় নিয়মিত তাণ্ডব চালাচ্ছে। এতে পাঁচটি পরিবারের বসতঘরসহ ফলের বাগান বাংলো বাড়ি সবকিছু তছনছ করে দিয়েছে। একইসাথে খেয়ে সাবাড় করেছে এসব পরিবারের গোলায় থাকা ধান, ভেঙে চুরমার করেছে ঘরে থাকা আসবাবপত্র। এছাড়া পায়ে মাড়িয়ে বিনষ্ট করেছে আমনের বীজতলা। 

স্থানীয়রা জানান, গত ৩ জুলাই বুধবার রাত ৯টার দিকে ৩০ থেকে ৩৫টি বন্যহাতির একটি দল আকস্মিক নাকুগাঁও গ্রামের ভারত সীমান্তঘেঁষা রঞ্জিত ঘোষ, সুমন রবিদাস, গ্রাম পুলিশ নিরঞ্জন রবিদাস, সিন্ধু ঢালু ও রূপেন ঢালুর বসতবাড়িতে একযোগে হানা দেয়। এসময় এসব বাড়ির সদস্যরা ভয়ে ঘর থেকে বের হয়ে চিৎকার করে বাইরে যায়। পরে আশপাশের লোকজন এসে হৈ-হুল্লোড় করে, সার্চ লাইট জ্বালিয়ে, পটকা ফাটিয়ে ও নাকুগাঁও স্থলবন্দর থেকে পে-লোডার নিয়ে শব্দ করে হাতি তাড়ানোর চেষ্টা করে। প্রায় ঘণ্টাব্যাপী তাণ্ডব চালিয়ে আবারও পাহাড়ে ফিরে যায় বন্যহাতির দলটি। এসময় হাতির তাণ্ডবে এসব পরিবারের রান্না ঘর, গোয়াল ঘর ও বসতঘরসহ মোট ৬টি ঘর ভেঙে গেছে। খেয়ে ও ছিটিয়ে সাবাড় করেছে গোলায় থাকা ধান ও চাল। ভেঙে চুরমার করেছে ঘরের আসবাবপত্র। বাড়ির টিউবওয়েল থেকে আমনের বীজতলা কিছুই রেহাই পায়নি। হাতির আক্রমণে আহত হয় একটি গরু। 

বন্যহাতির তাণ্ডবে তছনছ হওয়া বাংলো

পরের দিন ৪ জুলাই বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে নাঁকুগাও কাটাবাড়ি এলাকায় মুকুলের টিলায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি চালায় সেই হাতির দলটি। এসময় নাকুগাও স্থলবন্দরের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী বীরমুক্তিযোদ্ধা মোস্তাফিজুর রহমান মুকুলের ৪০ একর জায়গার বিশাল ফলের বাগানসহ বাগান বাড়ি লণ্ডভণ্ড করে ফেলেছে। এসময় কাঁঠাল, আম, নারিকেল, আমলকিসহ অন্তত ৩০ প্রকার ফলের গাছ ভেঙে ফেলে। এছাড়াও কয়েক একরের বড় একটি লেচু বাগানের অনেক গাছ নষ্ট করে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, বন্য হাতিগুলো বাংলাদেশের অভ্যন্তরে চষে বেড়ালেও উত্তর দিকে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের গহীন পাহাড়ের দিকে যেতে দেয় না ভারতীয়রা। যে কারণে যুগের পর যুগ শুধু বাংলাদেশের ভেতরে ছোটাছুটি করে প্রায় প্রতিরাতেই কোথাও না কোথাও তাণ্ডব চালায়। উত্তর দিকে ভারতের মেঘালয় ও আসাম রাজ্যের হাজার হাজার কিলোমিটার বনভূমি রয়েছে। সেখানে হাতির পর্যাপ্ত খাদ্যও রয়েছে। কিন্তু সেখানে হাতিদের ফেরত যেতে দেওয়া হয় না। 

ময়মনসিংহ বন বিভাগের মধুটিলা ফরেস্ট কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলো পরিদর্শন করে ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণ করেছি। তবে বীজতলা ও বাড়িঘর বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্তদের আবেদন করতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ফসলের ক্ষতিগ্রস্তদের ৫০ হাজার টাকা করে ক্ষতিপূরণ দিচ্ছে সরকার। এছাড়াও হাতি দ্বারা নিহত পরিবারকে তিন লাখ, আহতকে এক লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিচ্ছে সরকার।

তারিকুল/টিপু


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়