ঢাকা     রোববার   ০৬ অক্টোবর ২০২৪ ||  আশ্বিন ২১ ১৪৩১

ঢেউহীন গোমতীতে ফিরেছে প্রাণ

কুমিল্লা প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:০৩, ৮ জুলাই ২০২৪  
ঢেউহীন গোমতীতে ফিরেছে প্রাণ

বিগত বছরগুলোতে একসময়কার খরস্রোতা গোমতী নদীকে খাঁখাঁ বালুচরে পরিণত হতে দেখা গেছে। ভরা বর্ষায়ও কাঙ্ক্ষিত পানির দেখা পাওয়া যায়নি। কিন্তু চলতি বছর বর্ষার শুরুতে ভারী বর্ষণ ও উজানের পাহাড়ি ঢলে যেন যৌবনের রং লেগেছে গোমতীর গায়ে। কুমিল্লার ঐতিহ্যবাহী এই নদীটি ফিরে এসেছে নিজের স্বরূপে। 

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, গোমতীতে থইথই করছে পানি। দুপুরের সূর্যের আলোয় চিক চিক করছে গোমতীর বুক। পানিতে দোল খাচ্ছে ছোট ছোট নৌকা। এ যেন প্রকৃতির এক অপরূপ দৃশ্য। 

ভারত-বাংলাদেশের যৌথ নদীগুলোর একটি হলো গোমতী নদী। এটি ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের উত্তর-পূর্ব পার্বত্য অঞ্চলের ডুমুর নামক স্থানে উৎপত্তি হয়ে এঁকেবেঁকে কুমিল্লা সদর উপজেলার কটকবাজার হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। নদীটি কুমিল্লা সদর, বুড়িচং, দেবিদ্বার, মুরাদনগর, তিতাস ও দাউদকান্দি হয়ে মিলিত হয়েছে মেঘনা নদীর সঙ্গে। নদীটির দৈর্ঘ্য ৯৫ কিলোমিটার, গড় প্রস্থ ৬৫ মিটার। এক সময়ের তীব্র খরস্রোতা গোমতীতে দীর্ঘদিন পানি না থাকায় নাব্যতা হারাতে থাকে। ‘খরস্রোতা’ পরিচয় মুছে এটি রূপ নিতে থাকে ‘রোগা খালে’। আর মানুষ হেঁটেই চলে যেত একসময়ের উন্মত্ত যৌবনা গোমতীর এপার থেকে ওপারে। বছরের অধিকাংশ সময় পানি না থাকায় স্থানে স্থানে বিশাল এলাকাজুড়ে জেগে উঠেছে চর। এসব চরে সবজিসহ নানা ফসলের আবাদ হয় বারো মাস। এ বছর আকস্মিক টানা বর্ষণে মৌসুমি ফসলের কিছুটা ক্ষতি হলেও গোমতীর বুকে থইথই পানি দেখে খুশি গোমতীপাড়ের মানুষ। 

কুমিল্লার গোমতী নদী তীরবর্তী কুমিল্লা সদর উপজেলার শাহপুর, সংরাইশ, বিবিরবাজার, কটকবাজার, চাঁনপুর, জালুয়াপাড়াসহ ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার মালাপাড়া ইউনিয়নের মালাপাড়া, আসাদনগর, মনোহরপুর, অলূয়া, রামনগর ও আশপাশের এলাকা ঘুরে দেখা যায়, গত কয়েক দিনের ভারী বর্ষণে এবং উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে থইথই করছে নদীটি। 

জালুয়াপাড়া এলাকার গোমতীর চরের ব্যবসায়ী আমির মিয়া বলেন, গোমতী নদীকে কেন্দ্র করে ৩০০ বছর আগে মালাপাড়া বাজার গড়ে ওঠে। এক সময় গোমতীতে বড় বড় নৌকা ভীড়তো। বিভিন্ন এলাকা থেকে ব্যবসায়ীরা এখানে আসতো। কিন্তু, নদীতে পানি না থাকায় ধীরে ধীরে গোমতীর সেই যৌবন হারিয়ে যায়। কিন্তু, টানা বর্ষণে সেই যৌবন যেন ফিরে আসছে। 

বিবির বাজার এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুস সোবহান বলেন, একসময় এই অঞ্চলে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রধান পথ ছিলো গোমতী নদী। এখানে ছিলো অর্থকরী ফসল পাটের বৃহত্তম বাজার। সেই সঙ্গে চাল, আলু ও মাছের বিশাল বাজার বসত।  সেই ভরা নদী মরা নদীতে পরিণত হয়। এ বছর নদীতে আবার পানি এসেছে দেখে অনেক ভালো লাগছে। 

স্থানীয় এলাকাবাসীরা জানায়, গ্রীষ্মের মাঝামাঝি থেকেই পাল্টে যেতে থাকে সেই চিত্র। কয়েক সপ্তাহের মাঝারি ও ভারী বর্ষণের সঙ্গে পাহাড়ি বানে যৌবন ফিরিয়ে দিতে থাকে তার। টানা বর্ষণে ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে পানি, সঞ্চার হতে থাকে প্রাণ। রোগা ভাব কাটিয়ে সে এখন পূর্ণ যৌবনা। খরস্রোতা না হলেও প্রবহমান। 

গোমতীর সুদর্শন বেড়িবাঁধ ও নদীর পাড়ঘেঁষা বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, কিছু জায়গায় গড়ে তোলা হয়েছে ছোট ছোট বিনোদনকেন্দ্র। এগুলো ঘিরে শেষ বিকেলে জমে দর্শনার্থীদের ভিড়। নদীর সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতিদিনই বিভিন্ন বয়সী নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের ভিড় বাড়ে নদীর পারে।

রুবেল/ইমন


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়