রাস্তাটির জন্য ৬ গ্রামের মেয়েদের বিয়ে হয় না
রুবেল মজুমদার, কুমিল্লা || রাইজিংবিডি.কম
বরুড়া উপজেলার গালিমপুর ও দক্ষিণ শিলমুড়ী ইউনিয়নের সড়ক
বৃষ্টির পানি জমে সড়কটির বেহালদশা। কাদায় ছোট-বড় গর্তে সড়কটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এ সড়ক দিয়ে অতিকষ্টে যাতায়াত করছে কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার গালিমপুর ও দক্ষিণ শিলমুড়ী ইউনিয়নের ছয় গ্রামের মানুষ। দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী, চাকরিজীবী ও সাধারণ পথচারীদের।
সড়কের সিংহভাগ দক্ষিণ শিলমুড়ী ইউনিয়নের সীমানায়, আর বাকি কিছু অংশ গালিমপুর ইউনিয়নের সীমানায়। মূলত এক রাস্তার দুই অভিভাবক থাকায় মেরামত হচ্ছে না বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
সরেজমিন জানা যায়, সড়কটি উপজেলার গালিমপুর ইউনিয়নের ঘোষ্পা গ্রাম থেকে দক্ষিণ শিলমুড়ী ইউনিয়নের শিয়ালোড়া, জয়াগ হয়ে পাশের উত্তর শিলমুড়ী ইউনিয়নে গিয়েছে। প্রায় ৪ কিলোমিটার সড়কের বেহালদশা। বিশেষ করে বর্ষার মৌসুমে এ রাস্তা দিয়ে মানুষের যাতায়াত করা কষ্টকর।
এ সড়কের পাশে ঘোষ্পা প্রাথমিক বিদ্যালয় ও শিয়ালোড়া আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। প্রায় ৪০০-৫০০ ছাত্র-ছাত্রী এ রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন যাতায়াত করে। শিক্ষার্থী ছাড়াও সর্বস্তরের মানুষের এ সড়ক দিয়ে যাতায়াত।
মালেক নামে স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, ‘আমাদের ছয় গ্রামের মেয়েদের বিয়ে-শাদী হয় না এ রাস্তার কারণে। অনেক বিয়ের প্রস্তাব ফিরে যায় শুধু এ কারণে। জীবনে একবার এ রাস্তায় মাটি ফেলতে দেখেছি।’
আরেক বাসিন্দা রাহেলা বেগম বলেন, ‘আমি ডাক্তার দেখিয়ে আসলাম। এ রাস্তা দিয়ে একজন রোগী কীভাবে বাড়ি যাবে আপনারাই বলেন? এ রাস্তা দিয়ে আমাদের চলাচলে কষ্ট হয়।’
হোসেন নামে স্থানীয় দোকানদার বলেন, ‘রাস্তাটি গালিমপুর ইউনিয়ন এবং দক্ষিণ শিলমুড়ী ইউনিয়নের সংযোগস্থল। দুই ইউনিয়নের মধ্যবর্তী হওয়ার কারণে রাস্তাটির কাজ হচ্ছে না।’
পথচারী দিদার বলেন, ‘আমি এ এলাকার জামাই। বৃষ্টির দিনে শ্বশুর বাড়িতে আসলে হাতে জুতা আর হাঁটু পর্যন্ত প্যান্ট গোটাতে হয়। আমার বিয়ের পর থেকে রাস্তার একই অবস্থা দেখে আসছি।’
গালিমপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বাচ্চু মিয়া বলেন, ‘আমি তিন মাস হলো দায়িত্ব নিয়েছি। আমি নিজেও জানি না ওই রাস্তার কতটুকু আমার ইউনিয়নে পড়ছে। রাস্তার বেশিরভাগ দক্ষিণ শিলমুড়ীর সীমানায় পড়েছে। কোনো প্রজেক্ট আসলে আমি প্রথমে রাস্তাটি করে দেবো।’
দক্ষিণ শিলমুড়ীর ইউপি চেয়ারম্যান ফারুক হোসেন বলেন, ‘রাস্তাটি ইউনিয়নের একবারে ভিতরে পড়ছে। বড় প্রকল্প এখানে আনা যায় না। তিন বছর চেষ্টা করেও আমি ব্যর্থ হয়েছে। তবে পরে কোনো বরাদ্দ আসলে তখন আমি করে দেবো।’
স্থানীয় সংসদ সদস্য এজেডএম শফিউদ্দিন শামীম বলেন, যে সব সড়ক পাকা করতে হবে এবং যেসব সড়কের উন্নয়ন ও মেরামত দরকার, সেগুলোর তালিকা করা হচ্ছে।
/বকুল/