ঢাকা     রোববার   ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||  ভাদ্র ২৪ ১৪৩১

পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসনবিধি-১৯০০ বাতিলের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে মানববন্ধন

বান্দরবান প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:৫৭, ৯ জুলাই ২০২৪   আপডেট: ১৭:৫৮, ৯ জুলাই ২০২৪
পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসনবিধি-১৯০০ বাতিলের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে মানববন্ধন

পাহাড়ি জাতিসত্তার মানুষের স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের স্বীকৃতি দেওয়া ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসনবিধি ১৯০০’ বাতিলের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে বান্দরবান শহরে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীরা মানববন্ধন করেছেন।

পার্বত্য চট্টগ্রাম রেগুলেশন, ১৯০০ (১৯০০ খ্রিষ্টাব্দের আইন-১); যা পার্বত্য চট্টগ্রাম ম্যানুয়াল নামে অধিক পরিচিত। এটি তৎকালীন ব্রিটিশ ভারত সরকার প্রণীত একটি আইন, যা মূলত বর্তমান বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলে অবস্থিত পার্বত্য চট্টগ্রামকে কীভাবে পরিচালনা করতে হবে; সেই সংক্রান্ত নীতিমালা নিয়ে তৈরি।

আজ মঙ্গলবার (৯ জুলাই) সকাল ১১টায় বান্দরবান প্রেস ক্লাবে সামনে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এতে বান্দরবানের ম্রো সোস্যাল কাউন্সিল, খুমি কাহুং হয়না লাম, বাংলাদেশ খেয়াং স্টুডেন্ট কাউন্সিল, বাংলাদেশ মারমা স্টুডেন্ট কাউন্সিল, হেডম্যান কারবারী কল্যাণ পরিষদ, বাংলাদেশ তংঞ্চগ্যা স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার ফোরাম, বাংলাদেশ তংঞ্চগ্যা কল্যাণ সংস্থা, বাংলাদেশ ত্রিপুরা কল্যাণ সংসদ, বোমাং সার্কেলের প্রথাগত নেতৃবৃন্দ ও সর্বস্তরের জনগণের ব্যানারে পাহাড়ি নারী-পুরুষ অংশ নেয়।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, এই আইনে বিভিন্ন বিধান রয়েছে, যা এ অঞ্চলের সুশাসন, ভূমি ও প্রাকৃতিক সম্পদের সংরক্ষণ, জনগণের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সুরক্ষা এবং আন্তঃপ্রজন্মগত চর্চার জন্য অপরিহার্য। 

মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন হেডম্যান কারবারি কল্যাণ পরিষদের সভাপতি হ্লা থোয়াইরী মার্মা, সাধারণ সম্পাদক উনিহ্লা মার্মা, মানবাধিকার কর্মী অংচমং মার্মা, ছাত্র নেতা মংচিং মার্মা, বোমাং সার্কেলে প্রথাগত কমিটির সদস্য সচিব বিরলাল তংঞ্চগ্যা।

মানববন্ধন শেষে পার্বত্য চট্টগ্রাম রেগুলেশন ১৯০০-এ অন্তর্ভুক্ত আদিবাসীদের বিশেষ অধিকার হরণের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে বান্দরবান জেলা প্রশাসক শাহ্ মোজাহিদ উদ্দিনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দেওয়া হয়।

পার্বত্য চট্টগ্রাম ম্যানুয়াল আইনের সংক্ষিপ্ত বিবরণে দেখা যায়, ব্রিটিশশাসনামলে পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়িতে বসবাসরত ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর ঐতিহ্যবাহী সামাজিক বিচার, ভূমি, রাজস্ব এবং অন্যান্য প্রশাসনের একটি ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করার পাশাপাশি, এ প্রবিধানটির মাধ্যমে সামাজিক আইন-বিচারের মতো মামলার প্রক্রিয়াও নির্ধারণ করে। এ অঞ্চলের প্রথা পরিচালনা করার ক্ষেত্রে সার্কেল চিফ তথা রাজা, হেডম্যান, কারবারি এবং সমাজে প্রবীন ব্যক্তিরা প্রধান ভূমিকা দায়িত্ব পালন করে আসছেন। 

স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়, ২০০৩ সালে তৎকালীন বিএনপি সরকারের অ্যাটর্নি জেনারেল এ এফ হাসান আরিফের আবেদনের ভিত্তিতে হাইকোর্টের একটি বিভাগীয় বেঞ্চ ১৯০০ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম রেগুলেশনকে ‘মৃত আইন’ হিসেবে ঘোষণা করেন। পরে তৎকালীন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের আমলে ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হয়। ২০১৭ সালে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ শুনানি শেষে এ আইনকে ‘জীবিত ও বৈধ’ হিসেবে বলবৎ রাখেন। ২০১৮ সালে রাঙ্গামাটি এবং খাগড়াছড়ি জেলায় বসতিস্থাপনকারী আব্দুল আজিজ আখন্দ এবং আব্দুর মালেক সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের ওই রায়ের বিরুদ্ধে দুটি রিভিউ পিটিশন দাখিল করেন।

অ্যাটর্নি জেনারেল রিভিউ পিটিশনের শুনানিতে ওই আইনের ১০টিরও অধিক অনুচ্ছেদ বাদ দেওয়ার জন্য আদালতের কাছে লিখিতভাবে প্রার্থনা করেন। 

গত ৯ মে মামলাটি শুনানির তালিকায় আসলে অ্যাটর্নি জেনারেল আদালতকে আবারও তার পূর্বের আবেদনের ভিত্তিতে ওই আইনে শব্দ, বাক্যাংশ ও অনুচ্ছেদ বাতিল করার জন্য প্রার্থনা করেন। 
 

চাইমং/বকুল 

সম্পর্কিত বিষয়:


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়