ঢাকা     রোববার   ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||  ভাদ্র ২৪ ১৪৩১

যমুনার আগ্রাসন থেকে রেহাই পায়নি কবরস্থানও

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:১৮, ১১ জুলাই ২০২৪   আপডেট: ১২:৩২, ১১ জুলাই ২০২৪
যমুনার আগ্রাসন থেকে রেহাই পায়নি কবরস্থানও

ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলায় যমুনা নদীতে দেখা দিয়েছে ব্যাপক ভাঙন। এতে ঘরবাড়ি, ফসলি জমিসহ ভাঙনের আগ্রাসন থেকে রেহায় পায়নি কবরস্থানও। নদীর তীব্র ভাঙনে ভেসে যাচ্ছে ওই কবরস্থানে দাফন করা মরদেহ।

বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ৫ দিন ধরে যমুনার তীব্র স্রোতে উপজেলার ভুতের মোড় থেকে ময়নাল সরকারের কবরস্থান এলাকা পর্যন্ত ভাঙন শুরু হয়েছে। 

স্থানীয়রা জানান, যমুনায় পানি বৃদ্ধির সাথে শুরু হয়েছে তীব্র স্রোত। সেই স্রোতে শুরু হয় ভাঙন। ভাঙনে কবরস্থানের বেশ কিছু অংশ ভেঙে কয়েকটি মরদেহ ভেসে গেছে। এছাড়া পাঁচ থেকে ছয়টি মরদেহ স্বজনরা উদ্ধার করে অন্যস্থানে কবর দিয়েছেন। ভাঙন নিয়ন্ত্রণে জিও ব্যাগ ভর্তি বালির বস্তা ফেলছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। সার্বিক বিষয়গুলো মনিটরিং করছে উপজেলা প্রশাসন।

পানি উন্নয়ন অফিস সূত্রে জানা যায়, গত ৪ জুলাই থেকে যমুনায় পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে জেলার সদর, কাজিপুর, বেলকুচি, শাহজাদপুর ও চৌহালী উপজেলার ৩৪টি ইউনিয়নের ১৮ হাজার পরিবারের প্রায় ৯০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এতে সদরের কাওয়াকোলা ইউনিয়ন, কাজিপুরের খাসরাজবাড়ি, তেকানী, নিশ্চিন্তপুর, চরগিরিস, শাহজাদপুরের পাচিল, হাটপাচিল, জালালপুর, কৈজুড়ী ও চৌহালী উপজেলার ভুতেরমোড় এলাকায় নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। 

ময়নাল সরকারের কবরস্থান এলাকার আমিনুল ইসলাম ও কামরুল ইসলাম বলেন, চারদিন ধরে চৌহালী উপজেলার ভুতের মোড় থেকে ময়নাল সরকারের কবরস্থান পর্যন্ত তীব্র নদী ভাঙন শুরু হয়েছে। এতে কবরস্থানের কিছু জায়গা ভেঙে কয়েকটি মৃতদেহ নদীতে ভেসে গেছে।

তারা আরও বলেন, নদীর স্রোতে ভাঙনে সবকিছু ভেসে যাচ্ছে। যারা ভাঙনের সময় কবরস্থানের পাশে ছিলেন তারা কয়েকজনের মরদেহ নদী থেকে উদ্ধার করেন। কিন্তু রাতের বেলায় কেউ থাকে না। তখন কত মরদেহ ভেসে গেছে কেউ জানে না। 

বাঘুটিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কালাম মোল্লা বলেন, উজানের তীব্র স্রোতে এই এলাকার অনেক ঘরবাড়ি ও ফসিল জমি ভেঙে নদীতে নিয়ে গেছে। এই ভাঙনে কবরস্থানের কিছু অংশ ভেঙে গেছে। আমি ভাঙন এলাকায় গিয়ে চার থেকে পাঁচটি মৃতদেহ ভাসতে দেখেছি। 

চৌহালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহবুব হাসান বলেন, যমুনায় পানি বাড়ায় তীব্র স্রোতের কারণে কিছু এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙনে ঘরবাড়ি, ফসলি জমি ও বিভিন্ন স্থাপনাসহ কবরস্থানের কিছু অংশ ভেঙে নদীতে চলে গেছে। এ সময় কয়েকটি মরদেহও নদীতে ভাসতে দেখা গেছে। সেখানকার কিছু মরদেহ উদ্ধার করে অন্যত্র দাফন করা হয়েছে। তবে তারপরও রাতের আধারে কিছু মরদেহ ভেসে গেছে।

তিনি আরও বলেন, দ্রুত জিও ব্যাগ ভর্তি বালির বস্তা ফেলে ওই এলাকার ভাঙন বন্ধ করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা। ওখানে আর ভাঙন না থাকলেও পাশের আরেকটি এলাকাতে আছে। নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে ওই এলাকা থেকে আগেই স্থাপনাগুলো সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এছাড়াও ভাঙন কবলিতদের মাঝে নিয়মিত ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে। 

বন্যা পূর্বাভাস সতর্কীকরণ কেন্দ্রের বরাত দিয়ে সিরাজগঞ্জে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, দুইদিন পানি কমার পরে আবারও পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত ১২ ঘণ্টায় শহর রক্ষা হার্ড পয়েন্টে যমুনার পানি ২ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদ সীমার ৩৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত ও কাজিপুর মেঘাই ঘাট পয়েন্টে ১ সেন্টিমিটার বেরে বিপদসীমার ১৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে এ মৌসুমে বড় ধরনের বন্যার আশঙ্কা নেই।

অদিত্য/ইমন 


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়