ঢাকা     রোববার   ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||  ভাদ্র ২৪ ১৪৩১

শিল্পী মমতাজের ভাগনে ভিপি শহিদ ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:৩৭, ১১ জুলাই ২০২৪   আপডেট: ১৪:৩৮, ১১ জুলাই ২০২৪
শিল্পী মমতাজের ভাগনে ভিপি শহিদ ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

সাড়ে তিন কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন ও তথ্য গোপনের অভিযোগে মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. শহিদুর রহমান (৫০) ওরফে ভিপি শহিদ এবং তার স্ত্রী জেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক নারগীছ আক্তারের (৪৫) বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন।

ভিপি শহিদ মানিকগঞ্জ-২ (সিংগাইর-হরিরামপুর) এর সাবেক সংসদ সদস্য সংগীত শিল্পী মমতাজ বেগমের ভাগনে হিসাবে এলাকায় পরিচিত।

মঙ্গলবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে (ঢাকা ১) মামলা দুটি দায়ের করেন দুদকের সহকারি পরিচালক আল-আমিন। 

মামলা সূত্রে জানা গেছে, অবৈধ সম্পদ অর্জনের প্রাথমিক তথ্য প্রমাণ পাওয়ায় শহিদুর রহমানের বিরুদ্ধে সম্পদ বিবরণী দাখিলের নোটিশ দেওয়া হয়। ২০২১ সালের ১৯ জানুয়ারি তিনি কমিশনে তার সম্পদ বিবরণী দাখিল করেন। সম্পদ বিবরণীতে তার নামে ৩৭ লাখ ৪৩ হাজার ৬৫০ টাকার স্থাবর সম্পদ এবং ১ কোটি ৪৭ লাখ ৯১ হাজার ৪০৫ টাকার অস্থাবর সম্পদসহ মোট ১ কোটি ৮৫ লাখ ৩৫ হাজার ৫৫ টাকার সম্পদ অর্জনের তথ্যাদি প্রদর্শন করেন। যাচাই করে দেখা যায়, শহিদুর রহমানের নামে ১ কোটি ৮৫ লাখ ৩৫ হাজার ৫৫ টাকার সম্পদ অর্জনের রেকর্ড পত্র পাওয়া যায়। তার আয়কর নথি পর্যালোচনায় ২০১৯-২০২০- ও ২০২০-২০২১ করবর্ষে সম্পদ অর্জনকালীন তার পারিবারিক ও অন্যান্য ব্যয় পাওয়া যায় ১৯ লাখ ৫৪ হাজার ৮১০ টাকা ফলে তার ব্যয়সহ অর্জিত সম্পদের পরিমান দাঁড়ায় ২ কোটি ৪ লাখ ৮৯ হাজার ৮৬৫ টাকা।

দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণীতে তার স্ত্রীর সঙ্গে যৌথ নামে ব্যাংক ঋণ (মোট ঋণের ৫০% বা অর্ধেক) পাওয়া যায় ১৮ লাখ ৬ হাজার ২২৭ টাকা। এক্ষেত্রে ব্যাংক ঋণ বাদে সম্পদের পরিমাণ দাঁড়ায় ১ কোটি ৮৬ লাখ ৮৩ হাজার ৬৩৮ টাকা। তার অর্জিত সম্পদের বিপরীতে গ্রহণযোগ্য আয় পাওয়া যায় এক কোটি ৩১ লাখ ১১ হাজার ২৬৮ টাকা। এক্ষেত্রে তার আয় অপেক্ষা অতিরিক্ত সম্পদ পাওয়া যায় ৫৫ লাখ ৭২ হাজার ৩৬৯ টাকা। যা তার জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ সম্পদ বলে প্রতীয়মান হয়। দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪ এর ২৭ (১)  ধারায় মামলাটি করা হয়।

অন্যদিকে দ্বিতীয় মামলায় শহিদুর রহমানের স্ত্রী নারগীছ আক্তারের বিরুদ্ধে স্বামীর অবৈধভাবে অর্জিত সম্পদকে বৈধতা দানের অসৎ উদ্দেশ্য নিজ নামে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত ২ কোটি ৯২ লাখ ৫০ হাজার ৯২১ টাকার সম্পদ অর্জন ও দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণীতে ৩০ লাখ ৭৮ হাজার ৭৬৪ টাকার সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগ আনা হয়েছে। ওই মামলার এজাহারে বলা হয়, অবৈধ সম্পদ অর্জনের প্রাথমিক তথ্য প্রমাণ পাওয়ায় নারগীছ আক্তারের বিরুদ্ধে সম্পদ বিবরণী দাখিলের নোটিশ করা হয়।

২০২১ সালের ১৯ জানুয়ারি তিনি সম্পদ বিবরণী কমিশনে দাখিল করেন। সম্পদ বিবরণীতে তার নামে ২ কোটি ৭৪ লাখ ৫৩৮  টাকার স্থাবর সম্পদ এবং ৬১ লাখ ৫৪ হাজার ৮৪০ টাকার অস্থাবর সম্পদসহ মোট ৩ কোটি ৩৫ লাখ ৫৫ হাজার ৩৭৮ টাকা সম্পদ অর্জনের  তথ্যাদি প্রদর্শন করেন। তবে দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণী যাচাইকালি নারগীছ আক্তারের নামে স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ বাবদ ৩ কোটি ৬৬ লাখ ৩২ হাজার ১৪২ টাকার সম্পদ অর্জনের তথ্যাদি পাওয়া যায়। 

মানিকগঞ্জ জেলার সিংগাইর থানাধীন সিঙ্গাইর মৌজা ১২ দশমিক ৫০ শতাংশ জমির উপর নির্মিত বাড়ি নির্মাণ ব্যয়ের ক্ষেত্রে তিনি ৩০ লাখ ৭৮ হাজার ৭৬৪ টাকার সম্পদের তথ্যাদি গোপন করেছেন। তার স্বামীর সঙ্গে যৌথ নামে ব্যাংক ঋণ বাদে সম্পদের পরিমাণ দাঁড়ায় ৩ কোটি ৮০ লাখ ২৩ হাজার ৯৮৬ টাকা। তার অর্জিত সম্পদের বিপরীতে গ্রহণযোগ্য আয় পাওয়া যায় ৮৭ লাখ ৭৩ হাজার ৬৫ টাকা। এক্ষেত্রে আয় অপেক্ষা অতিরিক্ত সম্পদ পাওয়া যায় ২ কোটি ৯২ লাখ ৫০ হাজার ৯২১ টাকা। যা তার জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ। অভিযুক্ত নারগীছ আক্তার একজন গৃহিণী। তার নিজের আয়ের কোন উৎস নেই। তিনি স্বামীর আয়ের উপর নির্ভরশীল। ওই টাকার সম্পদ তার স্বামী শহিদুর রহমান অবৈধভাবে অর্জন করেছ যা দুদকের অনুসন্ধানে প্রাথমিকভাবে প্রতীয়মান হয়।  দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪-এর ২৭ (১) ধারা ২৬ (২) ধারা ও দণ্ডবিধির ১০৯ ধারায় মামলাটি করা হয়েছে। 

এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সালাম জানান, দুদকে মামলার বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। যেহেতু তারা এখনো দোষী নয়, বিষয়টি আইনীভাবে মোকাবেলা করার সুযোগ রয়েছে। যদি তারা দোষী প্রমাণিত হয় তাহলে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। 

এ বিষয়ে সিংগাইর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. শহিদুর রহমান ওরফে ভিপি শহিদ বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশন থেকে আমার ও আমার স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুটি মামলা করা হয়েছে। বিষয়টি আমি আইনগতভাবে মোকাবেলা করবো এবং আমি কোন দুর্নীতি করিনি। রাজনৈতিকভাবে আমাকে হেয়প্রতিপন্ন করার জন্য একটি প্রভাবশালী মহল কাজ করছে। যেহেতু বিষয়টি আইনগত আর আমিও আইনিভাবে লড়বো।

চন্দন/টিপু


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়