ঢাকা     রোববার   ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||  ভাদ্র ২৪ ১৪৩১

সুবর্ণচরে কিছুই নেই প্রশ্নফাঁসে জড়িত সাজেদুলের

মাওলা সুজন, নোয়াখালী || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:৪১, ১১ জুলাই ২০২৪   আপডেট: ২১:৩১, ১১ জুলাই ২০২৪
সুবর্ণচরে কিছুই নেই প্রশ্নফাঁসে জড়িত সাজেদুলের

মরিচা ধরা টিন দিয়ে ঘেরা ঘর, ইনসেটে সাজেদুল ইসলাম

দেশের আলোচিত পিএসসির প্রশ্নফাঁস কাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছেন নোয়াখালীর সুবর্ণচরের সাজেদুল ইসলাম (৪১)। ঢাকার পল্টন মডেল থানায় দায়ের হওয়া মামলায় তাকে ৪ নম্বর আসামি করা হয়েছে। সাজেদুল পিএসসির অফিস সহায়ক পদে কর্মরত ছিলেন। এলাকায় তিনি শরীফ নামে পরিচিত।

সাজেদুল ইসলাম নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলার মধ্যচরবাটা গ্রামের মৃত শামসুল আলমের ছেলে। বর্তমানে পরিবার নিয়ে ঢাকার মতিঝিলের এজিবি কলোনীতে থাকেন তিনি।

সরেজমিনে সাজেদুলের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, মরিচা ধরা টিন দিয়ে ঘেরা একটি ঘর রয়েছে মাত্র। অযত্ন অবহেলায় টিনের মরিচা ধরা অংশ ঝরে ঝরে পড়ছে। কোথাও আবার টিনের ভাঙা অংশ বেরিয়ে পড়েছে। ঘরের মেঝে মাটির। ঘরটি ২০০৪ সালে নির্মাণ করেছিলেন সাজেদুলের বাবা শামসুল আলম। তার আগের বাড়ি একই উপজেলার চরক্লার্ক ইউনিয়নে হলেও তিনি শ্বশুর বাড়িতে জমি কিনে এই বাড়ি করেছিলেন। পরে এখানেই তার পরিবার বসবাস শুরু করে। সাজেদুলের বাবা সরকারি পরিবহন পুলে চাকরি করার সুবাদে সাজেদুল ঢাকায় থাকতেন। এক পর্যায়ে বাবার তদবিরের সুবাদে তিনি পিএসসিতে চাকরি পেয়ে যান।

এলাকাবাসী মোহাম্মদ বাবর (৮০) বলেন, ‘সাজেদুলের বাবা শামসুল আলমকে আমি ভালো করেই চিনি। একজন ভালো মানুষ ছিলেন। অনেক বছর সরকারি চাকরি করেও কিছুই করতে পারেনি। শেষ জীবনে শ্বশুরের সহযোগীতায় কিছু জমি কিনে বাড়ি করেছেন। তার ছেলে সাজেদুলকে আমরা শরীফ হিসেবে চিনি।’

সিদ্দিক উল্যাহ (৭০) নামে আরেকজন বলেন, ‘সাজেদুল এলাকায় শরীফ নামে পরিচিত। তার বাবা চরক্লার্ক ইউনিয়ন থেকে এখানে এসে বাড়ি করেছেন। তাও শ্বশুর বাড়ির সহযোগীতায়। তিনি ভালো লোক ছিলেন। আমরা তাকে আলেম হিসেবে জানি।’

স্থানীয় বাসিন্দা শেখ ফরিদ (৩০) বলেন, ‘শরীফ এলাকায় তেমন একটা আসেন না। সর্বশেষ কোরবানীর ঈদের পরে এসেছেন। এলাকায় তার কোনো ব্যক্তিগত সম্পত্তি নেই। সে যদি কোনো অপরাধ করে তাহলে আইন অনুযায়ী তার বিচার হবে।’

সাজেদুল ইসলাম ওরফে শরীফের ফুফাতো ভাই শামসুল হক (৩৫) বলেন, ‘যে ঘরটি দেখতে পাচ্ছেন সেটি তার বাবার করা। আশেপাশে কিছু জমি আছে তাও তার বাবার খরিদকৃত। তার নিজের কোনো সম্পত্তি নেই। তবে অন্য কোনো জায়গায় আছে কিনা তা আমরা জানি না। বর্তমানে সে জেলে আছে সেটা জানি।’

আরেক ফুফাতো ভাই আবুল খায়ের (২৫) বলেন, ‘আমি শরীফ ভাইয়ের ঘরে থাকি। বৃষ্টি হলে পুরো ঘরে পানি পড়ে। আমি কোনো রকমে একটি কক্ষে বাইরে-ভিতরে পলিথিন দিয়ে থাকি। তাও অঝোরে বৃষ্টি হলে রাতের বেলায় বসে থাকতে হয়। মাঝে মাঝে তিনি আসেন। সর্বশেষ কোরবানীর ঈদের পরে এসেছিলেন।’ 

খালাতো ভাই মো. মোস্তফা (৪৫) বলেন, ‘আমরা তাকে শরীফ নামে চিনি। সে ঢাকায় সরকারি চাকরি করে এ পর্যন্ত জানি। এখানে যে ঘরটি দেখতে পাচ্ছেন সেটার জমি তার বাবার কেনা সম্পত্তি। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে জীর্ণশীর্ণ হয়ে পড়েছে। প্রায় ভেঙে পড়ার উপক্রম। তারা দুই ভাই দুই বোন। শরীফ সবার বড়। আমরা জানি সে সরকারি চাকরি করে। অন্যরা কী করে তা জানি না। টেলিভিশনে দেখলাম সে গ্রেপ্তার হয়েছে। পরে শুনলাম প্রশ্ন ফাঁসের সাথে জড়িত।’

চরবাটা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম রাজিব বলেন, ‘সাজেদুলকে এলাকায় শরীফ নামে ডাকা হয়। এছাড়া তাকে নিকট আত্মীয় স্বজন ছাড়া অল্প কয়েকজন পাড়া প্রতিবেশী চিনে। কারণ, এলাকায় সে খুব কম আসে। তবে তার বাবা একজন ভালো মানুষ ছিলেন। শরীফ যদি অপরাধি প্রমাণিত হয়, দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী বিচার হবে।’

//সনি


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়