ঢাকা     রোববার   ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||  ভাদ্র ২৪ ১৪৩১

‘পোষ্য কোটায়’ চাকরি পান খলিলুর, তার বিরুদ্ধে আগেও উঠেছিল প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ

সাকিরুল কবীর রিটন, যশোর || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:২৯, ১২ জুলাই ২০২৪   আপডেট: ১২:১৫, ১২ জুলাই ২০২৪
‘পোষ্য কোটায়’ চাকরি পান খলিলুর, তার বিরুদ্ধে আগেও উঠেছিল প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ

খলিলুর রহমান। ফাইল ফটো

সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগে গ্রেপ্তার পিএসসির অফিস সহকারী খলিলুর রহমানের বিরুদ্ধে দুই বছর আগেও উঠেছিল একই অভিযোগ। সে সময় চাকরি থেকে ‘সাসপেন্ড’ করা হয় তাকে। পরে আপিলে ‘নির্দোষ’ হয়ে ফের চাকরিতে ফেরেন।

বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) যশোরের কেশবপুর উপজেলার মঙ্গলকোট ইউনিয়নের পাচরাই ঘাগা গ্রামে খলিলুরের বাড়িতে গেলে তার চাচা নিছার গাজী (৬৫) এসব তথ্য জানান।

নিছার গাজী বলেন, ‘খলিলুরের বাবা নিজাম গাজী অত্যন্ত সৎ মানুষ ছিলেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন, তবে স্বেচ্ছায় বীর মুক্তিযোদ্ধা পদবি নেননি। অল্প শিক্ষিত হলেও দেশ স্বাধীন হওয়ার পর সততার কারণে পিএসসি খুলনা শাখায় অফিস সহকারী হিসেবে চাকরি পান। পরবর্তীতে তার মৃত্যুর পর পোষ্য কোটায় একই প্রতিষ্ঠানে চাকরি পান খলিলুর ও তার বড় ভাই। বর্তমানে খলিলুর ঢাকায় কর্মরত থাকলেও তার ভাই রয়েছেন রাজশাহীতে।’

তিনি বলেন, ‘দুই বছর আগেও খলিলুরের বিরুদ্ধে প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ উঠেছিল। সে সময় তাকে চাকরি থেকে সাসপেন্ড করা হয়। পরে আপিলে নির্দোষ হয়ে ফের চাকরিতে যোগদান করে।’

প্রশ্নফাঁসের অভিযোগে খলিলুরের গ্রেপ্তারের বিষয়ে জানতে চাইলে নিছার গাজী বলেন, ‘সে এমন দুর্নীতি করতে পারে এটা আমার বিশ্বাস হচ্ছে না। তার আচার-আচরণ খুব ভালো। মাঝেমধ্যে খলিলুর গ্রামের বাড়িতে আসত।’

খলিলুরের চাচা নিছার গাজী ও তার পরিবার। ছবি: রাইজিংবিডি

সরেজমিনে খলিলুরের পৈত্রিক বাড়িতে গিয়ে একটি টিনের কুঁড়ে ঘর দেখা যায়। সেখানে খলিলুরের পরিবারের কেউ থাকে না। ওই ঘরেই বাস করেন তার চাচা নিছার গাজী, চাচি পারুল বেগম ও তাদের ছেলে সাকিব শায়ান।

স্বজনরা জানান, খুলনায় খলিলুর রহমানের মায়ের পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া জমি রয়েছে। সেখানেও টিনের ছাউনির আধাপাকা ঘর আছে। খুলনার রায়ের মহল মোল্লাপাড়া রোডের ওই বাড়িতেই বড় হয়েছেন খলিলুর। তিনি বিয়ে করেছেন, তবে সন্তান নেই। পড়াশোনা করেছেন দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত।

খলিলুরের চাচি পারুল বেগম বলেন, ‘প্রতিবেশীরা টিভিতে খলিলুরের গ্রেপ্তারের খবর দেখে বিষয়টি আমাদের জানায়। এর আগে, আমরা কিছুই জানতাম না। খলিলুর খুব ভালো ছেলে। কিভাবে কী হলো বুঝতে পারছি না। এমন কাজের সঙ্গে ও জড়িত থাকতে পারে না।’

খলিলুরের চাচাতো ভাই সাকিব শায়ান বলেন, ‘দুই বছর আগেও ভাইয়ের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ উঠেছিল। তদন্তের পর আবার সে চাকরি ফিরে পেয়েছে। আশা করি, এবারও সঠিকভাবে তদন্তের পর ভাই নির্দোষ প্রমাণিত হবেন।’

প্রতিবেশীরা জানান, খলিলুর কারও সঙ্গে কখনো খারাপ আচরণ করেছেন এমন দেখেননি। এছাড়া, পাচরাই ঘাগা গ্রামে তিনি কোনো সম্পদ গড়েছেন বলেও তাদের জানা নেই।

খলিলুরের প্রতিবেশী স্থানীয় যুবলীগ কর্মী জিহাদুল ইসলাম বলেন, ‘খলিলকে অনেকদিন ধরে চিনি। পিএসসির প্রশ্নফাঁসের সঙ্গে সে জড়িত থাকতে পারে না। সরকারের কাছে সঠিকভাবে তদন্তের দাবি জানাচ্ছি।’

মহিবুল ইসলাম নামে আরেক প্রতিবেশী বলেন, ‘খলিলুর যখনই বাড়িতে আসত আমাদের সঙ্গে ভালোভাবে মিশত। আমার মনে হয় না ও এমন কাজ করতে পারে।’

মঙ্গলকোট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল কাদের বিশ্বাস বলেন, ‘প্রশ্নফাঁসের অভিযোগে গ্রেপ্তারের খলিলুর রহমানের তার নাম শুনেছি। এমনিতে তাকে আমি চিনি না। তার বাড়ি যে আমার ইউনিয়নে সেটাও জানতাম না।’

কেআই


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়