ঢাকা     রোববার   ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||  ভাদ্র ২৪ ১৪৩১

‘বীজে ভেজাল’, গজায়নি ধানের চারা

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৪৫, ১২ জুলাই ২০২৪   আপডেট: ১১:৫৯, ১২ জুলাই ২০২৪
‘বীজে ভেজাল’, গজায়নি ধানের চারা

কুষ্টিয়ার ছয় উপজেলার অনেক কৃষক বায়ার কোম্পানির ‘ধানী গোল্ড’ হাইব্রিড জাতের ধানের বীজ কিনে প্রতারিত ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভালো ফলনের আশায় চড়া দামে কিনলেও ৪০ শতাংশ বীজ থেকে গছাচ্ছে না চারা। এছাড়াও গজানো চারাগুলো রোগাটে হওয়ায় ফলন নিয়েও শঙ্কা রয়েছে। এতে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ার আশঙ্কা কৃষকদের। তাদের দাবি, ক্রয় করা বীজগুলোর মধ্যেই ভেজাল ছিলো।

কুমারখালী উপজেলার কৃষক সোহেল রানা জানান, কুষ্টিয়া কলেজ মোড় থেকে চার ব্যাগ (চার কেজি) ‘ধানী গোল্ড’ ধানের বীজ কিনেছিলাম। প্রতি কেজি বীজের দাম ৪৩৫ টাকা করে নিয়েছিলো। আমি তাদের নির্দেশনা মতো সবকিছু সুন্দরভাবে করেছি। কিন্তু বীজের অর্ধেক পরিমাণ চারা গজায়নি। আমি গরীব মানুষ। এ বীজে ভেজাল ছিলো। ‘ধানী গোল্ড’ বীজ কিনে প্রতারিত ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। আমি ক্ষতিপূরণ চাই। এই সমস্যার সমাধান চাই। আমার এলাকায় ও আশেপাশের এলাকার কৃষকরাও ‘ধানী গোল্ড’ বীজ কিনে প্রতারিত হয়েছেন। 

কুমারখালী উপজেলার চাপড়া ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের শিংদহ গ্রামের জিন্দার আলীর ছেলে কৃষক সাইদুল ইসলাম জানান, ১৫ দিন আগে কুষ্টিয়া কলেজ মোড় থেকে ১০ কেজি ‘ধানী গোল্ড’ বীজ কিনেছি। অর্ধেক বীজ থেকে চারা হয়েছে। বাকিটা নষ্ট হয়ে গেছে। কোম্পানির নির্দেশনা মেনে প্রথমে পানিতে ধান বীজ ভিজিয়ে রাখি। পরে পানি থেকে তুলে চারা গজানোর জন্য জাগ দেই। এসব মেনেও আমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। 

কৃষি উদ্যোক্তা মনিরুল ইসলাম জানান, ১০ বিঘা জমিতে ধান রোপণের জন্য ২০ কেজি ‘ধানী গোল্ড’ বীজ কিনেছি। কিন্তু ৩০ শতাংশ বীজ থেকে চারা হয়নি। ফলে আমি ক্ষতিগ্রস্ত ও প্রতারিত হয়েছি। ধানের চারাগুলোও দুর্বল ও রোগাটে। এ নিয়ে আমরা টেনশনে আছি। ধান লাগানোর জন্য ১০ বিঘা জমি লিজ নিয়েছি। কিন্তু বীজ থেকে চারা না হওয়ায় তিন থেকে চার বিঘা জমিতে ধান লাগাতে পারবো না। ‘ধানী গোল্ড’ বীজ কিনে আমার মতো অসংখ্য কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ডাবল করে বীজ কিনতে হচ্ছে চাষিদের। ডাবল ডাবল খরচ হচ্ছে। আমরা এ সমস্যার সমাধান চাই। একই সাথে ক্ষতিপূরণের দাবি জানাচ্ছি। 

ভাদালিয়া বাজারের বীজ ব্যবসায়ী আব্দুল হান্নান জানান, ‘ধানী গোল্ড’ ধানের বীজ থেকে ঠিকমতো চারা হচ্ছে না। ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ বা তারও বেশি বীজ থেকে চারা গজায়নি। ৫-৬ জন কৃষক আমার দোকান থেকে বীজ কিনেছিলো। তাদের এমন সমস্যা হওয়ার কারণে তিন-চার দিন আগে থেকে ‘ধানী গোল্ড’ ধানের বীজ বিক্রি করা বন্ধ করে দিয়েছি।

এদিকে কুষ্টিয়া সদর উপজেলা কৃষি অফিসার সৌতম কুমার শীল এ বিষয়ে কিছু জানেন না বলে দাবি করেছেন। তিনি বলেছেন, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের অভিযোগ পেলে যথাযথ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

কুমারখালী উপজেলা কৃষি অফিসার দেবাশীষ কুমার দাসও একই দাবি করেছেন। তিনি বলেছেন, খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

বায়ার কোম্পানির কুষ্টিয়ার এরিয়া ম্যানেজার আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘ধানী গোল্ড’ বীজের মান খুবই ভালো। কিন্তু এবার অতিরিক্ত তাপমাত্রার কারণে হয়তো চারা গজায়নি। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। ভুক্তভোগীদের কেউ অভিযোগ দিলে তাদেরকে ক্রয়ের সমপরিমাণ বীজ আবারও দেওয়া হবে।’ 

এ বিষয়ে কুষ্টিয়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক সুফি মো. রফিকুজ্জামান জানান, এখনও কোনো কৃষক অভিযোগ দেয়নি। বিষয়টি আমরা জানি না। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

জেলা বীজ প্রত্যয়ন অফিসার এ কে এম কামরুজ্জামান জানান, বিষয়টি আমি জানতাম না। আজ কালকের মধ্যে ওই বীজ সংগ্রহ করে যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

কাঞ্চন/ইমন


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়