চুরির অভিযোগে নারী নির্যাতন, ইউপি সদস্যসহ আটক ২
ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম
গ্রেপ্তারকৃত সাবেক ও বর্তমান দুই ইউপি সদস্য
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলায় মুঠোফোন চুরির অপবাদ দিয়ে শারমিন বেগম (৩৫) নামে এক নারীকে শ্লীলতাহানিসহ শরীরে গরম পানি ঢেলে নির্যাতনের অভিযোগে সাবেক ও বর্তমান দুই ইউপি সদস্যকে আটক করেছে পুলিশ।
শনিবার (১৩ জুলাই) রাতে বিজয়নগর উপজেলার বিষ্ণুপুর গ্রাম থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- উপজেলার বিষ্ণুপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ইসহাক মোল্লা ও একই ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য হোসেন মিয়া। শ্লীলতাহানি ও নির্যাতনের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। শনিবার রাতে শ্লীলতাহানি ও নির্যাতনের শিকার ওই নারী বাদী হয়ে চারজনকে আসামি করে বিজয়নগর থানায় মামলা দায়ের করেন।
৫ সন্তানের জননী শারমিন বেগম বিজয়নগর উপজেলার বিষ্ণপুর ইউনিয়নের কালাছড়া গ্রামের বাসিন্দা ও চৌকিদার মহরম আলীর স্ত্রী।
কিশোরগঞ্জ অষ্টগ্রামের বাসিন্দা লিটন মিয়ার সঙ্গে প্রথমে শারমিনের বিয়ে হয়। সেই সংসারে তিনি এক মেয়ে ও চার ছেলে সন্তান জন্ম দেন। লিটন ৮-১০ বছর আগে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বিজয়নগরের মহেশপুরে জায়গা কিনে বসতি গড়েন। সাড়ে তিন বছর আগে লিটন মারা যান। পরে একই গ্রামের বাসিন্দা ও চৌকিদার মহরম আলীর সঙ্গে শারমিনের বিয়ে হয়।
নির্যাতনের শিকার ওই নারী, স্থানীয় লোকজন ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েকদিন আগে বিষ্ণুপুরের মহেশপুর গ্রামের হুমায়ুনের আত্মীয়ের মুঠোফোন চুরি হয়। গত ৮ জুলাই বেলা আড়াইটার দিকে হুমায়ুনের ভাই হারুনের স্ত্রী শারমিনকে ডেকে তাদের বাড়িতে নিয়ে যান। সেখানে মুঠোফোন চুরির অপবাদ এনে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান ও সাবেক ইউপি সদস্য ইসহাক ও হোসেনসহ কয়েকজন শারমিনকে মুঠোফোন চুরির ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করেন ও ঘটনা স্বীকার করতে বলেন।
সাবেক ইউপি সদস্য ইসহাক এক পর্যায়ে উপস্থিত একজনকে গরম পানি ও বড় গামছা আনতে বলেন। পরে ইউপি সদস্য ইসহাক গামছা দিয়ে ওই নারীর মুখ বাঁধেন। ইউপি সদস্যসহ স্থানীয় লোকজন ওই নারীকে বেধড়ক মারধর ও শ্লীলতাহানি করেন। এক পর্যায়ে তারা ওই নারীর শরীরে গরম পানি ঢেলে দেন। পরে ইউপি সদস্য হোসেন মিয়া তার ঘর থেকে সন্তানের মাদ্রাসার বেতনের জন্য রাখা ৩ হাজার টাকা নিয়ে যান।
নির্যাতনের শিকার শারমিন বেগম বলেন, গ্রামের হারুনের স্ত্রী আমাকে তাদের বাড়িতে ডেকে নিয়ে যান। ইউপি সদস্য ইসহাক সকলের সামনে আমাকে আপত্তিজনক কথাবার্তা বলেন। তারা আমাকে মারধর শুরু করেন। সে সময় তিন বছরের সন্তান সাইমন আমার কোলে ছিল। তাকেও তারা মারধর করেছে। একপর্যায়ে গামছা দিয়ে মুখ বেঁধে সারা শরীরে গরম পানি ঢেলে দেন ইউপি সদস্য ও স্থানীয় লোকজন।
এই সালিসে ইউপি চেয়ারম্যান উপস্থিত ছিলেন কি না প্রশ্ন করলে চেয়ারম্যান ছিলেন না বলে জানান তিনি। বিষ্ণুপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিন ভূঁইয়া এ ব্যাপারে বলেন, যেদিন ঘটনা ঘটেছে তার আগেরদিন আমি ব্যক্তিগত কাজে ঢাকা গিয়েছি। ঘটনা ঘটে যাওয়ার তিনদিন পর ঢাকা থেকে এলাকায় ফিরেছি। মুঠোফোনেও আমাকে কেউ জানায়নি। বাড়িতে এসে এই ন্যক্কারজনক ঘটনা শুনেছি। বিচার ব্যবস্থা কোনোভাবেই এমনভাবে হয় না। বিচারের জন্য আইন-আদালত আছে।
তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সকালে একটি অনলাইন পত্রিকায় দেখলাম সালিসে নাকি আমি উপস্থিত ছিলাম এমন বক্তব্য বিজয়নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) জামিল খান দিয়েছেন। যেখানে আমি উপস্থিত ছিলাম না সেখানে এমন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় থেকে কিভাবে তিনি (তদন্ত কর্মকর্তা) বক্তব্য দিলেন তা জানতে আমি এসপিসহ আইজিপি বরাবর লিখিত দেবো।
বিজয়নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আসাদুল ইসলাম বলেন, চুরির অপবাদ দিয়ে ওই নারীর শ্লীলতাহানি করেছে। গরম পানি ঢেলে নির্যাতনসহ মারধর করেছে। এ ঘটনায় ওই নারী বাদি হয়ে ইউপি সদস্যসহ চারজনকে আসামি করে মামলা দিয়েছেন। সাবেক ও বর্তমান দুই ইউপি সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। রোববার দুপুরে তাদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
মাইনুদ্দীন/ফয়সাল