কেরানীগঞ্জে অবৈধ সিসা তৈরির কারখানা, হুমকির মুখে জনস্বাস্থ্য
কেরানীগঞ্জ প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম
অবৈধভাবে গড়ে ওঠা সিসা গলানোর কারখানা
ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের তেঘরিয়া ইউনিয়নের আব্দুলাপুরে করেরগাঁও এলাকায় পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে সিসা গলানোর কারখানা।
রোববার (১৪ জুলাই) সরেজমিনে দেখা গেছে, কারখানার ভেতরে ২৫-৩০ জন শ্রমিক কাজ করছেন। কেউ পুরোনো ব্যাটারির উপরের অংশ খুলে প্লেট বের করছেন, কেউ ব্যাটারি থেকে অ্যাসিড বের করছেন। এসব শ্রমিক পুরোনো ব্যাটারি ভেঙে অ্যাসিড বের করা ও সিসার কাজ করে রাত-দিন পাশের পুকুরে হাত-মুখ ধুয়ে থাকেন। ফলে পানির রং কালচে আকার ধারণ করেছে। এ ছাড়া ব্যাটারির অ্যাসিডের প্রকট গন্ধে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী।
এসব কারখানায় নষ্ট ও বাতিল ব্যাটারি এবং পুরোনো লোহার বর্জ্য এনে গলানো হচ্ছে। বর্জ্য গলানোর সময় এর ক্ষতিকারক ধোঁয়ায় ক্ষতি হচ্ছে স্থানীয় মানুষের, দূষিত হচ্ছে চারপাশের পরিবেশ, নষ্ট হচ্ছে ফসল ও জমি। পাশাপাশি এখানে কর্মরত কর্মচারীরাও মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছেন। শুধু তাই-ই নয়, সিসা কারখানার আশপাশে জন্মানো ঘাস খেয়ে হুমকির মুখে পড়ছে পশুপাখিও। প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে চলছে এই কারখানা। কারখানাটির কাগজপত্র দূরে থাক নেই ন্যূনতম সাইনবোর্ডও।
কারখানার সার্বিক ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা কালাম বলেন, জাহিদুল ইসলাম, নাসির উদ্দিন, জহির, হারুন, কালু মিয়া ও সুমন এই ৬ জন মালিক অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে এই কারখানা পরিচালনা করেন। এই কারখানায় ২৫-৩০ জন শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন।
এলাকাবাসী জানান, প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় টিনের বেড়া দিয়ে সাইনবোর্ডবিহীন গড়ে ওঠা কারখানায় দীর্ঘদিন ধরেই পুরনো ব্যাটারির সিসা পোড়ানো হচ্ছে। এতে কারখানার আশপাশের তিন কিলোমিটারের মধ্যে খেতের ফসলের ব্যাপক ক্ষতির পাশাপাশি গাছপালা ও সবজির ক্ষতি হচ্ছে। অনেকের শ্বাসকষ্টসহ শারীরিক নানান জটিলতা দেখা দিয়েছে।
অবিলম্বে সিসা কারখানাটি বন্ধসহ সিসা তৈরিতে জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কারখানার এক শ্রমিক বলেন, গরিব মানুষ কাজ করে খেতে হয়। অন্য কাজ না থাকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এই ব্যাটারি কারখানায় কাজ করছি। অন্য কোথাও কাজ না পাওয়া পর্যন্ত এখানেই কাজ করবো।
চিকিৎসকরা জানান, এটা জনস্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর। ব্যাটারির বর্জ্য পুড়িয়ে সিসা তৈরি করলে তা আশপাশে থাকা মানুষের শরীরের রক্তকণিকা ও মস্তিষ্কের কোষের ক্ষতি করে। এর ফলে মানসিক বিকৃতি, রক্তশূন্যতা ও মস্তিষ্কের নানাবিধ সমস্যা দেখা দিতে পারে। গর্ভবতী নারীদের জন্য এটি মারাত্মক ক্ষতিকর। এ সকল কারখানায় যেসব শ্রমিক কাজ করে তাদের জীবনও মারাত্মক হুমকির মুখে থাকে।
সিসা তৈরির কারখানার কোনো অনুমতি আছে কিনা জানতে চাইলে কারখানা মালিক জাহিদুল ইসলাম বলেন, আমার কাছে পরিবেশ অধিদপ্তরের কোনো অনুমতি নেই।
কেরানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবু রিয়াদ বলেন, ‘কেরানীগঞ্জে পরিবেশ দূষিত করছে সিসা কারখানাগুলো। অবৈধ সিসা কারখানার বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান চলমান রয়েছে। কারখানার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
শিপন/ফয়সাল