ঢাকা     রোববার   ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||  ভাদ্র ২৪ ১৪৩১

ঘটনাস্থলে গিয়ে বিরোধ নিষ্পত্তি, প্রশংসায় ভাসছেন বিচারক

পঞ্চগড় প্রতিনিধি  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:৪১, ১৫ জুলাই ২০২৪   আপডেট: ০৮:৪৪, ১৫ জুলাই ২০২৪
ঘটনাস্থলে গিয়ে বিরোধ নিষ্পত্তি, প্রশংসায় ভাসছেন বিচারক

বিরোধ মেটাতে ঘটনাস্থলে ছুঁটে যান সিনিয়র সহকারী জজ আবু সাঈদ

সাধারণত মানুষ আইনি সমস্যার মুখোমুখি হলে দ্বারস্থ হন আদালতের। এ ক্ষেত্রে অনেক সময় বিড়ম্বনায় পড়তে হয় বিচার প্রত্যাশীদের। অনেকেই অসাধু চক্রের খপ্পড়ে পড়ে হন ক্ষতিগ্রস্থ, কেউ আবার মিথ্যা মামলার ভুক্তভোগি হয়ে বছরের পর বছর হয়রানির শিকার হন। এ অবস্থায় দ্রুত বিরোধ নিষ্পত্তি ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়ে প্রশংসায় ভাসছেন পঞ্চগড়ের এক বিচারক।

ওই বিচারকের নাম আবু সাঈদ। সিনিয়র সহকারী জজ পঞ্চগড় জেলা লিগ্যাল এইড অফিসারের দায়িত্বে রয়েছেন। এ জেলায় যোগদানের পর থেকেই বিভিন্ন বিরোধ সহজেই নিষ্পত্তির মাধ্যমে প্রশংসা কুঁড়িয়েছেন তিনি। গুরুত্বপূর্ণ বিরোধ নিরসনে ছুটে যাচ্ছেন প্রত্যন্ত এলাকায়। পরিদর্শন করছেন ঘটনাস্থল।

রোববার (১৪ জুলাই) বিকেলে একটি জমি সংক্রান্ত বিরোধ নিষ্পত্তির লক্ষ্যে এই বিচারক হাজির হন পঞ্চগড় সদরের হাফিজাবাদ ইউনিয়নের জলাপাড়া গ্রামে। সঙ্গে ছিলেন পুলিশ ও জনপ্রতিনিধি। এক পর্যায়ে উভয় পক্ষকে সঙ্গে নিয়ে পরিদর্শন করেন বিরোধপূর্ণ জমি। আশ্বাস দেন দ্রুতই সমাধানের।

স্থানীয়রা জানান, এই বিচারক যোগদানের পর থেকেই বিচার প্রত্যাশীদের আস্থা বেড়েছে। বিচার প্রার্থীদেরও তুলনামূলক ভিড় বেড়েছে লিগ্যাল এইড অফিসে। দ্রুত সময়ের মধ্যে নিষ্পত্তি করে দিচ্ছেন বিভিন্ন মামলা। জমিসংক্রান্ত মামলা জটিল হলে সরাসরি ঘটনাস্থলে ছুটে যাচ্ছেন। মেডিয়েশন বিষয়ে প্রচারণামূলক সভা করছেন। প্রতি মাসে অন্তত দুইটি মামলার সমাধান করছেন সরেজমিন পরিদর্শন করে। এছাড়া, গরিব ও অসহায় বিচার প্রত্যাশীদের সরকারি খরচে আইনি সেবাসহ পরামর্শ দিয়ে আসছেন তিনি। 

জলা পাড়া গ্রামের কৃষক সাবুল ইসলাম বলেন, গত ১২ মে জমি নিয়ে বিরোধের জেড়ে লিগ্যাল এইড অফিসে অভিযোগ দায়ের করেছি। এতে এক টাকাও খরচ হয়নি আমার। আইনজীবী বা মুহূরি কারো কাছে ধন্যা ধরতে হয়নি। বিচারক সরেজমিনে পরিদর্শনে এসেছেন এবং দ্রুত সময়ের মধ্যে সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন। একজন বিচারক ঘটনাস্থলে আসবেন এটা আমার কাছে কল্পনাতিত ছিলো। বিচারকের আন্তরিকতায় আমি মুগ্ধ, ন্যায়বিচার পাবো বলে আশা করছি।

একই গ্রামের ষাটোর্ধ্ব সামছুল হক বলেন, এটা একটা নজিরবিহীন ঘটনা। আমার জীবনে প্রথম দেখলাম বিচারক মাঠে এসে বিরোধ মেটায়। সবখানে এমন হলে সাধারণ মানুষ সহজেই ন্যায়বিচার পাবেন।

হাফিজাবাদ ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আল মামুন বলেন, কিছু বিরোধ আছে আমরা ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে সমাধান করতে ব্যর্থ হই। পরে উভয়পক্ষই আদালতে গিয়ে বছরের পর বছর ঘুরতে থাকেন। কিন্তু লিগ্যাল এইড অফিসে অভিযোগ দায়েরের মাত্র দুই মাসের মাথায় ঘটনাস্থলে স্বয়ং বিচারক এসেছেন। এতে বিরোধ দ্রুত শেষ হবে বলে মনে করছি।

হাফিজাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইসমাইল হোসেন বলেন, লিগ্যাল এইড অফিসের এই বিচারকের বিচার কার্য ন্যায় ও ইনসাফ ভিত্তিক। বিচার প্রার্থীরা তড়িৎ গতিতে সেবা পাচ্ছেন। কাউকে দিনের পর দিন আদালতের বারান্দায় ঘুরতে হয় না, হয়রানি হতে হয় না। তিনি এ জেলায় দীর্ঘ সময় থাকলে গরিব ও অসহায় বিচার প্রার্থীরা দারুণভাবে উপকৃত হবেন। এছাড়া, সম্পূর্ণ বিনা খরচে এভাবে বিরোধ নিষ্পত্তি হলে মানুষের হয়রানি কমে যাবে।

সিনিয়র সহকারী জজ আবু সাঈদ বলেন, অসহায় ও দরিদ্রসহ সর্বস্তরের মানুষ যাতে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে আইনি সহায়তা পায়- সে লক্ষ্যে প্রত্যেক জেলায় লিগ্যাল এইড অফিস হয়েছে। যারা অর্থাভাবে মামলা পরিচালনা করতে পারে না তাদেরকে সহযোগিতাসহ এখান থেকে সরকারি খরচে আইনজীবী নিয়োগ দেওয়া হয়। একইসঙ্গে আপোষযোগ্য মামলা এখানে বিনা খরচে নিষ্পত্তি করা যায়। এরই ধারাবাহিকতায় আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করছি। একইসঙ্গে মানুষকে আইনগত সহায়তা সম্পর্কে সচেতন করছি। 

আবু নাঈম/ইভা 


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়