ঢাকা     রোববার   ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||  ভাদ্র ২৪ ১৪৩১

কে এই ৪০০ কোটি টাকার পিয়ন?

মাওলা সুজন, নোয়াখালী || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৪১, ১৫ জুলাই ২০২৪   আপডেট: ১২:৫৫, ১৫ জুলাই ২০২৪
কে এই ৪০০ কোটি টাকার পিয়ন?

জাহাঙ্গীর আলম। ছবি: সংগৃহীত

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘দুর্নীতি করে হাতেনাতে ধরা পড়লে ব্যবস্থা নেওয়া চলবেই। হাত যখন দিয়েছি, আমি ছাড়ব না। আপন পর দেখব না। কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। আমার বাসায় চাকরি করে গেছে পিয়ন। এখন ৪০০ কোটি টাকার মালিক। হেলিকপ্টার ছাড়া চলতে পারে না। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কোন ড্রাইভার কি করলো, এসব বের করা হয়েছে বলেই জানতে পারছেন।’

রোববার (১৪ জুলাই) বিকেলে গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের পরই দেশজুড়ে আলোচনা শুরু হয়েছে- কে তিনি? কী তার পরিচয়? কে এই ৪০০ কোটি টাকার পিয়ন?

পড়ুন: প্রধানমন্ত্রীর সাবেক ব্যক্তিগত সহকারীর ব্যাংক হিসাব ফ্রিজের নির্দেশ

জানা গেছে, ‘৪০০ কোটি টাকার মালিক’ এই ব্যক্তির নাম জাহাঙ্গীর আলম। তার বাড়ি নোয়াখালীর চাটখিল থানাধীন খিলপাড়া ইউনিয়নে। বাবা রহমত উল্ল্যাহ (মৃত)। মা অজিফা খাতুন। জাহাঙ্গীর আলম সবার বড়। তার আরেক ভাই দীর্ঘদিন ধরে উপজেলার খিলপাড়া উপজেলার চেয়ারম্যান। তার ভাগিনা মাকসুদুর রহমান শিপন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিরোধীদলে থাকার সময় জাহাঙ্গীর আলম তার বাসভবন ‘সুধা সদনের’ ব্যক্তিগত স্টাফ হিসেবে কাজ করেছেন। সে সময় বিভিন্ন প্রোগ্রামে শেখ হাসিনার জন্য যে খাবার পানি বাসা থেকে নেওয়া হতো, সেটা এই জাহাঙ্গীর বহন করতেন। বিভিন্ন কর্মসূচিতে দলীয় নেতাকর্মীদের পানি খাওয়াতেন। এজন্য তিনি ‘পানি জাহাঙ্গীর’ হিসেবে পরিচিতি পান। পরবর্তী সময়ে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হলে তিনি তার ব্যক্তিগত কর্মচারী হিসেবে কাজ করেন।

স্থানীয়রা জানান, জাহাঙ্গীর আলম গণভবনে থাকাকালীন অত্যন্ত ক্ষমতাধর বলে এলাকায় নিজেকে জাহির করতেন। সরকারি কোনো পদ পদবী না থকালেও নিতেন সরকারি সুযোগ সুবিধা। বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক বা ধর্মীয় অনুষ্ঠানে নিজেকে প্রধানমন্ত্রীর অত্যন্ত বিশ্বস্ত হিসেবে তুলে ধরতেন। প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারী পরিচয় দিয়ে নানা তদবির করে কোটি কোটি টাকা কামিয়েছেন। তিনি নোয়াখালী ও ঢাকায় বিপুল সম্পদ গড়ে তুলেছেন। সঙ্গে নিয়ে ঘুরতেন লাইসেন্সকৃত পিস্তল।

পড়ুন: ‘আমার পিয়ন ছিল, এখন ৪০০ কোটি টাকার মালিক, তাকে ধরা হয়েছে’

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত সহকারী পরিচয় দিয়ে জাহাঙ্গীর আলম বিভিন্ন অনৈতিক কাজ করছেন এমন অভিযোগে গত বছরের ৬ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কোনো সম্পর্ক নেই। এ বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে প্রয়োজনে নিকটস্থ আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সহায়তা নিতেও বলা হয়।

এলাকাবাসী জানিয়েছেন, জাহাঙ্গীর আলম ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু দল তাকে মনোনয়ন না দেওয়ায় তিনি নির্বাচন করতে পারেননি। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তিনি দুই হাতে টাকা বিতরণ করতেন। মসজিদ, মাদ্রাসা, স্কুল-কলেজ, বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনকে দান করতেন। কিন্তু তার এই টাকার উৎস নিয়ে এলাকায় মানুষের মাঝে কৌতূহল রয়েছে।

নাম প্রকাশ নার করার শর্তে এলাকার কয়েকজন জানান, এক সময় তাদের পরিবার ছিলো দরিদ্র। বর্তমানে জাহাঙ্গীর আলম অঢেল সম্পদ ও টাকার মালিক।

স্থানীয় সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পিয়ন হিসেবে কাজ করার সময় ব্যক্তিগত পরিচয় দিয়ে তদবির, টেন্ডারবাজি, নিয়োগ বাণিজ্যসহ নানা অপকর্ম করে বেড়িয়েছেন জাহাঙ্গীর। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচয় ব্যবহার করে গাজীপুরের ইপিজেড এলাকার ঝুট ব্যবসাও নিয়ন্ত্রণ করতেন তিনি।

এ বিষয়ে জাহাঙ্গীর আলমের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তবে তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। তার ভাগিনা জেলা পরিষদের সদস্য ও প্যানেল চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমান শিপন রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘তিনি বর্তমানে আমেরিকায় অবস্থান করছেন। কিছুদিনের মধ্যে ফিরবেন। ’

ব্যাংক হিসাব ফ্রিজের নির্দেশ
জাহাঙ্গীর আলম ও তার স্ত্রী কামরুন নাহার এবং তাদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যাংক হিসাব ফ্রিজের নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তাদের হিসাবের যাবতীয় তথ্য আগামী ৫ দিনের মধ্যে পাঠাতে সবগুলো ব্যাংক-আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। বিএফআইইউ থেকে রোববার (১৪ জুলাই) ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে দেওয়া নির্দেশনায় বলা হয়েছে, জাহাঙ্গীর এবং তার স্ত্রীর মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের নামে কোনো হিসাব থাকলে আগামী ৩০ দিনের জন্য স্থগিতের নির্দেশনা দেওয়া হলো। এছাড়া এসব ব্যক্তি ও তাদের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের নামে খোলা হিসাবের কেওয়াইসি, হিসাব খোলার ফরম, শুরু থেকে হালনাগাদ লেনদেনের তথ্য আগামী পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে বিএফআইইউতে পাঠানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

/এসবি/


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়