ঢাকা     রোববার   ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||  ভাদ্র ২৪ ১৪৩১

ফেনী যুব দক্ষতা অর্জনে পিছিয়ে 

মো. সাহাব উদ্দিন, ফেনী || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:৪০, ১৫ জুলাই ২০২৪  
ফেনী যুব দক্ষতা অর্জনে পিছিয়ে 

জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যুবদের দক্ষ করে গড়ে তুলতে সরকারি-বেসরকারি নানা প্রশিক্ষণ চালু থাকলেও যুব দক্ষতা অর্জনে ফেনী জেলা পিছিয়ে রয়েছে। যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর, সমাজসেবা অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন সংস্থা থেকে প্রতি বছর হাজার হাজার যুবক প্রশিক্ষণ নিলেও তা কাজে আসছে না। বরং যুবদের বড় অংশ দেশ ছেড়ে বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছে। ফলে জেলার বিভিন্ন কারখানা ও প্রতিষ্ঠানে অন্য জেলার মানুষ কাজের সুযোগ করে নিচ্ছে। যুবকরা কেন দক্ষতা অর্জনের পিছিয়ে এর উত্তর খুঁজতে গিয়ে দেখা যায়, তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর প্রশিক্ষণের অভাব, প্রশিক্ষণার্থীর আয় নিয়ে উচ্চাকাঙ্ক্ষা, স্থানীয় পর্যায়ে কাজ করতে অনীহা ও পারিপার্শ্বিক অসহযোগিতার বিষয়গুলো উঠে এসেছে।

যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর ফেনীর সহকারী পরিচালক আহাম্মদ কবীর জানান, ফেনীর মোট জনসংখ্যার ১০ দশমিক ৭০ শতাংশ প্রবাসী। যা সংখ্যায় দেড় লাখেরও বেশি। স্বাভাবিকভাবে এখানে বিদেশগমনের প্রবণতা বেশি। 

তিনি বলেন, ‘যুবদের প্রশিক্ষণ দিতে গিয়ে একটা বিষয় লক্ষ্য করেছি, এ অঞ্চলের মানুষ সময় নিয়ে কোনো কাজ শিখতে খুব কম আগ্রহ দেখান। আবারও যারা কাজ শেখা পর্যন্ত সময় দেন, তারাও ওই কাজ নিয়ে ক্যারিয়ার গড়তে চান না। অনেকে আবার পূঁজি সংকটের কারণে আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি বা নিজ উদ্যোগে কিছু করতে চান না। যদিও সরকার উদ্যোক্তাদের সহযোগিতার জন্য বিভিন্ন ঋণ-প্রণোদনা দিয়ে থাকে।’  

এ কর্মকর্তা আরও জানান, যুব দক্ষতা বৃদ্ধিতে এ বছরও জেলার ৬ উপজেলায় ৫টি বিষয়ে ৩ হাজার ৪৬৮ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। ২০২৩-২৪ বছরে ৩৩৩ জন যুবককে ১ কোটি ৫৩ লাখ ৩০ হাজার ঋণ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া কর্মসংস্থান ব্যাংক, কৃষি ব্যাংক থেকেও যুব উন্নয়নের প্রশিক্ষণার্থীরা চাইলে ঋণ নিতে পারেন। মূলতঃ দেশে সন্তোষজনক আয় করতে পারেন না বলেই যুবরা প্রবাসের দিকে ঝুঁকছে। এ জন্য এ জেলায় কাজের ক্ষেত্র থাকলেও নিজেদের কর্মী পাওয়া যায় না। 

মহিল বিষয়ক অধিদপ্তর ফেনীর উপপরিচালক নাসরিন আক্তার বলেন, ঘরের বাইরে নারীদের কাজের সুযোগ পুরুষের তুলনায় অনেক কম। তবুও কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রতি বছর জেলার ৪০০ জন নারীকে ৫টি বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।  সোনাগাজী ও দাগনভূঞায় বছরে ২৪০ জন সেলাই প্রশিক্ষণ পেয়ে থাকে। এছাড়া নারীদের স্বাবলম্বী করতে ক্ষুদ্র ঋণের আওতায় ২৫২ জনকে ঋণ দেওয়া হয়েছে।

সমাজসেবা অধিদপ্তর ফেনীর উপপরিচালক সাইফুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, যুব দক্ষতা বৃদ্ধিতে প্রশিক্ষণ, উপজেলা পর্যায়ে ক্ষুদ্র ঋণ বিতরণ, সমাজ কল্যাণ অধিদপ্তরের মাধ্যমে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যদের প্রশিক্ষণসহ নানা কার্যক্রম করে থাকে সমাজসেবা অধিদপ্তর।

যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর ফেনীর তথ্যমতে, ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার যুবককে তারা প্রশিক্ষণ দিয়েছে। তাদের অধিকাংশই শিক্ষার্থী। প্রশিক্ষণ শেষে তারা কেউ দক্ষতা কাজে লাগাতে চেষ্টা করে না। প্রশিক্ষণে পুরনো উপকরণ ব্যবহার ও সনাতন পদ্ধতিতে প্রশিক্ষণ কর্মশালা পরিচালিত হওয়ায় তাতে যুবদের আগ্রহও কম। তেমনি প্রয়োজনের তুলনায় প্রশিক্ষকও কম রয়েছে। এছাড়া প্রশিক্ষণ শেষে নিয়মিত ফলোআপ না করায় প্রশিক্ষণার্থীরা কর্মমুখী হয় না। ফলে নামমাত্র এসব প্রশিক্ষণ যুব দক্ষতা উন্নয়নে তেমন কাজে আসছে না। 

যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর ফেনীর সহকারী পরিচালক সাইফ উদ্দিন আহমেদ জানান, যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আধুনিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা জরুরি। সেই জন্য পর্যাপ্ত জনবল, যন্ত্রপাতি বরাদ্দ দেওয়া প্রয়োজন।

ফেনী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ইন্টারন্যাশনাল লেবার অর্গানাইজেশন (আইএলও) পরিচালিত স্কিল-২১ এর সাবেক প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর সামিয়া মাহবিন মনে করেন, যুবকদের দক্ষতা অর্জনে উন্নতমানের আধুনিক প্রশিক্ষণের বিকল্প নেই। প্রশিক্ষণ শেষে চাকরির নিশ্চয়তা পেলে যুবকরা এ বিষয়ে আগ্রহী হয়ে উঠবে।

ফেনী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের মেকানিক্যাল টেকনোলজির শিক্ষক হযরত আলী বলেন, বাস্তব শিক্ষা বা প্রশিক্ষণের প্রতি তরুণ বা যুবকদের আগ্রহ হতাশাজনক। পৃথিবীর যতগুলো দেশ অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে গেছে, তারা সকলে বাস্তবমুখী শিক্ষার প্রতি শতভাগ গুরুত্বারোপ করেই এগিয়েছে। অথচ এ দেশের মানুষ এখনও কারিগরি বা বাস্তবমুখী শিক্ষার গুরুত্ব অনুধাবন করছে না। তরুণ ও যুবরা বাস্তবমুখী শিক্ষা অর্জনে ব্যর্থ বলেই দক্ষতা প্রমাণে ব্যর্থ হচ্ছে।
 

/বকুল/


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়