সুনামগঞ্জে বন্যায় ৬১৫ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত
মনোয়ার চৌধুরী, সুনামগঞ্জ || রাইজিংবিডি.কম
সুনামগঞ্জে বন্যার পানিতে ভেঙে যাওয়া সড়ক পার হচ্ছেন এক যুবক
সুনামগঞ্জে বন্যার পানি নামতে শুরু করায় স্পষ্ট হতে শুরু করেছে ক্ষতির চিহ্ন। পানির নিচ থেকে ভেসে উঠতে শুরু করেছে সড়ক, ব্রিজ ও কালভার্ডসহ গ্রামীণ রাস্তাঘাটের ক্ষয়ক্ষতির চহ্নি। এসব সড়কে চলাচলে এখন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে স্থানীয়দের। চলতি বছর জেলার ১২টির মধ্যে ১১টি উপজেলা দুই দফা বন্যার কবলে পড়ে।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ এবং এলজিইডি সূত্রে জানা গেছে, সুনামগঞ্জ জেলার প্রায় ৬১৫ কিলোমিটার সড়ক ও ৪৭টি ব্রিজ-কালভার্ট বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যার মধ্যে এলজিইডির আওতাধীন ১১টি উপজেলার ৫০০ কিলোমিটার সড়ক ও ১৭টি ব্রিজ-কালভার্টের ক্ষতি হয়েছে। যার আর্থিক পরিমাণ ৯২৬ কোটি টাকা। সড়ক ও জনপথ বিভাগের আওতাধীন ৯টি সড়কের ১১৫ কিলোমিটার ও ৩০টি ব্রিজ-কালভার্ট দীর্ঘস্থায়ী মেরামতের জন্য ৩২৫ কোটি টাকার বাজেট প্রয়োজন। বন্যার পানি পুরোপুরি নেমে গেলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে বলেও জানিয়েছে সূত্রটি।
সরজমিনে দেখা যায়, সুনামগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলার সড়ক ও গ্রামীণ রাস্তাঘাট পানির তোড়ে ভেঙে গেছে। জেলার ১২টি উপজেলার মধ্যে বানের স্রোতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দোয়ারাবাজার, ছাতক, বিশ্বম্ভরপুর ও সদর উপজেলার বিভিন্ন সড়ক। এসব সড়কের পিচ-খোয়া উঠে ছোট ও বড় অসংখ্য গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। গর্ত এড়িয়ে ধীর গতিতে চালকদের যানবাহন নিয়ে যেতে দেখা গেছে।
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার বেতগঞ্জ এলাকার রনবীর দাস বলেন, ‘বন্যার পানির স্রোতের কারণে রাস্তাঘাট ভেঙে গেছে। ফলে আমাদের যাতায়াতে অনেক অসুবিধা হচ্ছে। শিশুদের স্কুলে নিতে রিকশা ও অটোরিকশা পাওয়া যাচ্ছে না। ১০ টাকার ভাড়া ৪০ টাকা দিয়ে যাওয়া লাগছে।’
সুনামগঞ্জ শহরতলীর ধারারগাঁও-খাইমতর-ব্রাহ্মণগাঁও সড়ক সুরমা নদীর পানিতে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কোথাও কার্পেটিং ও কোথাও আবার ১০ থেকে ৩০ ফুট পর্যন্ত মাটি সরে সড়ক বিছিন্ন হয়ে গেছে। যান চলাচল বন্ধ রয়েছে প্রায় এক মাস ধরে।
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার ধারারগাঁও গ্রামের বাসিন্দা মোহাম্মদ আব্দুর নূর বলেন, ‘আমাদের চলাফেরায় অনেক অসুবিধা হচ্ছে। বন্যায় রাস্তা ভেঙে গেছে। বন্যা আমাদের বাড়িঘরও ভেঙে নিছে।’
পৌর শহরের হাসননগর এলাকার বাসিন্দা রাজীব চন্দ্র দাস বলেন, ‘আমাদের প্রতিটি রাস্তাই ভাঙা। রাস্তায় গাড়ি চলাচলের সময় উল্টে যায়। অনেক সময় পথচারীদের গাড়ি ধাক্কা দিয়ে ফেলে যায়। আমরা এই রাস্তা নিয়ে অনেক বিপাকে আছি। এই রাস্তা বর্তমানে চলাফেরা করার মতো না।’
এদিকে, সুনামগঞ্জের নিচু এলাকার অনেক সড়ক এখনো পানির নিচে থাকায় ওই সব এলাকার মানুষদের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে।
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার বুড়িস্থল গ্রামের বাসিন্দা মোহাম্মদ আফতাব উদ্দিন বলেন, ‘ঘর থেকে নৌকা ছাড়া বের হওয়ার কোনো উপায় নেই। বাচ্চাদের স্কুল-মাদরাসায় নিয়ে যেতে পারছি না। নানা অসুবিধায় আমরা আছি।’
সুনামগঞ্জ এলজিইডি’র নির্বাহী প্রকৌশলী আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘সুনামগঞ্জের ১১টি উপজেলার সড়ক ও কালভার্ট মেরামতের জন্য আমাদের প্রায় ৯২৬ কোটি টাকার প্রয়োজন হবে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে। কারণ এখনও আমাদের অনেক সড়ক পানিতে তলিয়ে রয়েছে। পানি না নামলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও বেড়ে যেতে পারে।’
বন্যা ভেঙে যাওয়া সড়ক ও ব্রিজ মেরামতে কতো দিন লাগতে পারে? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এই বিষয়ে আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি। তারা সড়ক ও সেতু মেরামতের উদ্যোগ গ্রহণ করছেন।’
সুনামগঞ্জ জেলা সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল ইসলাম প্রাং বলেন, ‘আমাদের প্রায় ১১৫ কিলোমিটার সড়ক ও প্রায় ৩০টি সেতু-কালভাটের এপ্রোচ সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব সেতু ও সড়ক মেরামতের জন্য আমরা দুই ধরণের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। একটা হলো স্বল্প মেয়াদী। অন্যটি দীর্ঘস্থায়ী। মেরামত কাজ করতে আমাদের প্রায় ৩২৫ কোটি টাকার বাজেট প্রয়োজন।
মাসুদ