ঢাকা     রোববার   ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||  ভাদ্র ২৪ ১৪৩১

পাবনায় পাট চাষে আগ্রহ বেড়েছে কৃষকদের

শাহীন রহমান, প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:০৯, ১৬ জুলাই ২০২৪   আপডেট: ১০:১৩, ১৬ জুলাই ২০২৪
পাবনায় পাট চাষে আগ্রহ বেড়েছে কৃষকদের

পাট চাষে আগ্রহ বেড়েছে কৃষি প্রধান এলাকা হিসেবে পরিচিত উত্তরের জেলা পাবনার কৃষকদের মাঝে। গত পাঁচ বছরের পরিসংখ্যান বলছে, প্রতিবছর ৪০ থেকে ৪৫ হাজার হেক্টর জমিতে পাট আবাদ হয়। আর উৎপাদন হয় প্রায় ৬ লাখ বেল পাট।

কৃষকরা জানান, কয়েক বছরের মধ্যে গত বছর (২০২৩) পাটের ভালো দাম পেয়েছিলেন তারা। এবার তারা বেশি জমিতে পাট আবাদ করেছেন। এবারও আশানুরূপ দাম পাবার আশা করছেন। তবে, এ বছর তীব্র খরায় কিছুটা আবাদ ব্যাহত হলেও উৎপাদনের দিক থেকে এগিয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। 

পাবনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছর মৌসুমে জেলায় পাট আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৩ হাজার ৭৬২ হেক্টর, আবাদ হয়েছে ৪২ হাজার ৪১৫ হেক্টর। আর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা আছে ৫ লাখ ৯৬ হাজার ১১৩ বেল।

২০২৩-২৪ অর্থবছর মৌসুমে আবাদ হয় ৪৪ হাজার ৩১৫ হেক্টর। আর উৎপাদন হয় ৫ লাখ ৯৬ হাজার ৮৬৩ বেল।

২০২২-২৩ অর্থবছর মৌসুমে আবাদ লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৫ হাজার ১১৮ হেক্টর। আবাদ হয় ৪৫ হাজার ৫০ হেক্টর। আর উৎপাদন হয় ৫ লাখ ৮২ হাজার ৯৬০ বেল।

২০২১-২২ অর্থবছর মৌসুমে আবাদ আবাদ হয় ৪০ হাজার ৯৫০ হেক্টর। আর উৎপাদন হয় ৬ লাখ ৩ হাজার ২৬৫ বেল।

২০২০-২১ অর্থবছর মৌসুমে আবাদ আবাদ হয় ৪৪ হাজার ২৪৫ হেক্টর। আর উৎপাদন হয় ৬ লাখ ৪১ হাজার ৪৭৫ বেল।

চাটমোহর উপজেলার বরদানগর গ্রামের কৃষক রতন হোসেন বলেন, গত বছর পাট আবাদ কম ছিল আমাদের এলাকায়। এবার পাটের আবাদ বেড়েছে। গতবছর আমি পাট বুনেছিলাম ১৫ কাঠা। এবার দেড় বিঘা বুনেছি। পাটের আবাদ বাড়ার কারণ হিসেবে তিনি জানান, গত বছর পাটের দাম ভালো পাওয়া গেছে। এ কারণে অনেকেই এবার পাট আবাদ বেশি করছে।

চরসেন গ্রামের পাটচাষি মনিরুল প্রামাণিক জানান, এবার তিনি ২ বিঘা জমিতে পাট আবাদ করেছেন। গত বছরের আগের বছরে পাটের দাম ছিল নিম্নমুখী। ১৮০০-২০০০ টাকা মণ। গেলো বছরে পাট কেটেই নতুন পাট বিক্রি করেছেন ৩০০০ হাজার টাকা মণ দরে। এবারও দাম ভালো পাবার আশা তার।

বরদানগর গ্রামের কৃষক রবিউল করিম বলেন, গত বছর পাট আবাদ করেছিলাম ৭ বিঘা জমিতে। এবার প্রায় ৯ বিঘা জমিতে পাট করেছি। গত বছর যে দাম পেয়েছি তাতে কিছু লাভ হয়েছে। তাই এবার বেশি করে আবাদ করছি। যদিও পাট আবাদে খরচ বেশি। তারপরও আশা করছি, এ বছরও ভালো দাম পাবো।

আটঘরিয়া উপজেলার ভবানীপুর গ্রামের পাটচাষি খাইরুল ইসলাম বলেন, খরচ বেশি হলেও আমরা পাট আবাদটা ধরে রেখেছি। সবসময় তো দাম বেশি পাওয়া যায় তা নয়। তবে বেশিরভাগ উৎপাদন খরচটা উঠে আসে। আর যে বছর ভালো দাম হয় সে বছর বেশ ভালো লাভ হয়। এখন উৎপাদন বেশি হলে দাম কমে, আর উৎপাদন কম হলে দাম বাড়ে এটাই নিয়ম।

চাটমোহর উপজেলা কৃষি বিভাগের মাঠ পর্যায়ের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আবু সাইদ বলেন, জেলার সার্বিক পাট আবাদ কমলেও, চাটমোহর উপজেলায় এ বছর পাট আবাদ বেড়েছে। এর কারণ হলো আউসের আবাদ কমে গিয়ে পাট আবাদ বেড়েছে। একইভাবে অন্য উপজেলায় পাটের আবাদ কমে আউস বা অন্য ফসলের আবাদ বেড়েছে। তবে জেলায় পাটের আবাদ খুব একটা কমেনি। এ বছর ভালো দাম পেলে সামনের বছর পাটের আবাদ আরও বাড়বে।

পাবনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. জামাল উদ্দিন বলেন, এবার তীব্র খরার কারণে পাট আবাদ কিছুটা ব্যাহত হয়েছে। 
তবে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী হবে বলে আশা করছি। পাট আবাদে কৃষক এখন দামও ভালো পাচ্ছেন।

পাবনার জেলা প্রশাসক মুহা. আসাদুজ্জামান বলেন, আমরা কিছুদিন আগেও পাটচাষি ও ব্যবসায়ীদের নিয়ে মতবিনিময় করেছি। তাদের উদ্বুদ্ধ করেছি কীভাবে আরও পাট চাষ বাড়ানো যায়। কৃষি ঋণ, উন্নতজাতের বীজ সরবরাহ থেকে শুরু করে কৃষকদের পাট চাষে সব ধরনের সহায়তায় আমরা পাশে থাকার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো। পাট কাটার পর জাগ দিতে অনেক সময় জলাশয়ে পানি সংকট দেখা দেয়। সে বিষয়েও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কৃষি বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় করে আমরা কৃষকদের জন্য কাজ করছি।

/ইভা/


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়