ঢাকা     রোববার   ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||  ভাদ্র ২৪ ১৪৩১

কোটা সংস্কার আন্দোলন

সাতমাথা পুলিশের দখলে, আ.লীগ কার্যালয়ে আগুন, বিজিবি মোতায়েন

বগুড়া প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:৫৬, ১৬ জুলাই ২০২৪  
সাতমাথা পুলিশের দখলে, আ.লীগ কার্যালয়ে আগুন, বিজিবি মোতায়েন

প্রায় চার ঘণ্টা পর বগুড়া সাতমাথা দখলে নিয়েছে পুলিশ। এর আগে বেলা সাড়ে ৩টা থেকে পুরো সাতমাথা ছিলো কোটা সংস্কার আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দখলে। 

এসময় শিক্ষার্থীরা বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল, প্রধান ডাকঘর, মুজিবমঞ্চ, জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়, অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্পসহ বেশকিছু স্থাপনায় ভাঙচুর চালায়। এছাড়া আটটি মোটরসাইকেল ভাংচুর এবং আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয় তারা। 

মঙ্গলবার (১৬  জুলাই) বিকাল সাড়ে তিনটা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত শহরের সাতমাথা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এসময় সাংবাদিকসহ বেশ কয়েকজন আহত হন।

এর আগে দুপুর ৩টার দি‌কে কোটা সংস্কার আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা লাঠিসোটাসহ বি‌ক্ষোভ মি‌ছিল নি‌য়ে সাতমাথায় সম‌বেত হতে থাকে। তারা বগুড়া জিলা স্কুলের ভেতরেও অবস্থান নেয়। 

বিষয়টি জানার পর বগুড়া জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সজিব সাহা ও সাধারণ সম্পাদক আল মাহিদুল ইসলাম জয়ের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাদের ধাওয়া করে। এসময় জিলা স্কুল কর্তপক্ষ মূল ফটক তালাবদ্ধ করে দেয়। সেসময় ওই স্কুলের ভেতরে আটকা পড়ে আন্দোলনের সমর্থকরা। এখবর পেয়ে তাদের সহযোগিরা মিছিল নিয়ে সাতমাথা চত্বরে এলে ছাত্রলীগ তাদের ধাওয়া করতে দেয়। 

এর কিছুক্ষণ পর জিলা স্কুলের পেছন দিয়ে প্রাচীর টপকিয়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা ভেতরে ঢুকে স্কুলে আটকে শিক্ষার্থীদের নিয়ে সম্মিলিতভাবে স্কুল গেটের তালা ভেঙে বাইরে বের হয়ে যায়। এসময় তারা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ধাওয়া দেয়। 

এরপর সাতমাথা এলাকায় আন্দোলনকারীদের একদল সমবেত হয় এবং জিলা স্কুল থেকে বের হয়ে যাওয়া আন্দোলন সমর্থকরা নবাববাড়ী সড়কে সমবেত হয়। তারা দুই দিক থেকে অগ্রসর হয়ে সাতমাথা চত্বরে অবস্থান নেয়। পরে নবাববাড়ী সড়কে অবস্থান নেওয়া শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে সাতমাথায় অগ্রসর হলে প্রধান ডাকঘরের কাছে পৌছালে ডাকঘরের ওপাশে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে থেকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আন্দোলনকারীদের দিকে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। এসময় আন্দোলনকারীরাও তাদের দিকে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। 

এসময় সেখানে বেশ কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ হয়। পরে দুইপ্রান্তে অবস্থান নেওয়া আন্দোলনকারীরা একত্রে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দিকে ধাওয়া দিলে তারা পিছু হটে পালিয়ে যায়। ছাত্রলীগ পিছু হটে যাওয়ার পরপরই তারা আওয়ামী লীগ অফিসে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করে। 

ওই কার্যালয়ে ব্যাপক ভাঙচুরের পাশাপাশি তার সাথেই অবস্থিত জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সুলতান মাহমুদ খান রনির ব্যক্তিগত কার্যালয়েও ভাংচুর করে। সেসময় আন্দোলনকারীরা অফিসের আসবাবপত্র আওয়ামী লীগ অফিসের সামনে নিয়ে তাতে আগুন ধরিয়ে দেয়। আওয়ামী লীগ অফিসে অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প ভাংচুর করে তাতেও আগুন ধরিয়ে দেয়। 

এসময় সেখানকার পুলিশ সদস্যরা নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যান। এছাড়াও কয়েকটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে তাতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। একই সময়ে বগুড়া প্রধান ডাক ঘরে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করা হয়। এছাড়া সাতমাথার লোহার পাত দিয়ে তৈরি রোড ডিভাইডার, আশেপাশে ফুটপাতের অসংখ্য দোকান ভাংচুর করা হয়। 

বগুড়া জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সজীব সাহা বলেন, ‘ছাত্রলীগের কেউ কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপরে হামলা করেনি। তারা বিনা উস্কানিতে প্রথমে শাহ সুলতান কলেজে এবং পরে সাতমাথায় এসে আওয়ামী লীগ কার্যালয়সহ বিভিন্ন সরকারি ও রাষ্ট্রীয় স্থাপনায় হামলা করে অগ্নিসংযোগ করেছে। এটা কোনোভাবেই কোটা আন্দোলনে সম্পৃক্তদের কাজ নয়, দাবি করে তিনি বলেন, ‘শিবির ও ছাত্রদল মিলে এই তাণ্ডব চালিয়েছে।’

বগুড়ার পুলিশ সুপার জাকির হাসান বলেন, ‘আমরা দীর্ঘ সময় ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছি। আমরা চেয়েছি তাদের কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে করবে। যখন দেখলাম তারা এগ্রেসিভ হয়ে গেছে। বিভিন্ন মার্কেটে দোকান পাটে ক্ষয়ক্ষতি করছে। সাধারণ জনগণের ওপর যখন এটা চলে যাচ্ছে, তখন আমরা আর বসে থাকিনি। কারণ, জনগণের জানমালের নিরাপত্তার খাতিরেই আমাদেরকে তখন ফোর্স অ্যাপ্লাই করতে হয়েছে। খুব সীমিত ফোর্স অ্যাপ্লাইয়ের পর সাতমাথা থেকে বিক্ষোভকারীরা চলে গেছে। সাতমাথা এখন আমাদের নিয়ন্ত্রণে আছে।’ 

এদিকে, কোটাবিরোধী আন্দোলন নিয়ে অনাকাঙিক্ষত ঘটনা এড়াতে বগুড়ায় তিন প্লাটুন বিজিবি সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। বিজিবির সদস্যরা নওগাঁ থেকে বগুড়ার দিকে রওনা দিয়েছেন। 

বিষয়টি নিশ্চিত করে বগুড়া জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘নওগাঁ-১৬ ব্যাটালিয়ান থেকে তিন প্লাটুন বিজিবি সদস্যরা বগুড়ায় আসছে। বিজিবি সদস্যদের একটি অংশ শহরের সাতমাথায় অবস্থান নেবে। আরেকটি অংশ শহরের বনানী মহাসড়কে অবস্থান নেবে।’

এনাম/সনি

ঘটনাপ্রবাহ

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়