ঢাকা     রোববার   ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||  ভাদ্র ২৪ ১৪৩১

বরগুনায় শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের লাঠিচার্জ, আহত ১৫

বরগুনা প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২০:৫৭, ১৬ জুলাই ২০২৪   আপডেট: ২২:৩২, ১৬ জুলাই ২০২৪
বরগুনায় শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের লাঠিচার্জ, আহত ১৫

বরগুনায় শিক্ষার্থীদের কর্মসূচিতে পুলিশের বাধা ও লাঠিচার্জ

সারাদেশে কোটা সংস্কারে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে বরগুনায় শিক্ষার্থীদের কর্মসূচিতে দফায় দফায় লাঠিচার্জ করেছে পুলিশ। এতে আহত হয়েছে অন্তত ১৫ জন।

মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) বিকেলে বরগুনা পৌর সুপার মার্কেটের সামনে এ ঘটনা ঘটে। পৌর শহরের পাবলিক লাইব্রেরি এলাকায় শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ কর্মসূচি শুরু করেছিলেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ব্যানার নিয়ে নিতে চাইলে শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে পড়ে মিছিল বের করতে দেয় পুলিশ। পাবলিক লাইব্রেরি থেকে পৌর সুপার মার্কেট পর্যন্ত তিন স্থানে পুলিশ ব্যারিকেড দিয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের আটকানোর চেষ্টা করে। তবে শিক্ষার্থীরা ব্যারিকেড ভেঙে পৌর সুপার মার্কেটের সামনে অবস্থান নেয়।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ এসময় বরগুনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আবদুল হালিম, বরগুনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) একেএম মিজানুর রহমান, ওসি (তদন্ত) আজিজুর রহমান এর নেতৃত্বে সমাবেশের পিছন থেকে অতর্কিতভাবে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর লাঠিচার্জ করে পুলিশ। লাঠিচার্জের সময় শিক্ষার্থীদের বাঁচাতে অভিভাবকরা ছুটে আসলে তাদের উপরও লাঠিচার্জ করে পুলিশ। এ ঘটনায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে কমপক্ষে ১৫ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছে বলে দাবি করেছেন শিক্ষার্থীরা।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থী সৌরভ বলেন, কোটা সংস্কারের দাবি ও সারাদেশে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদ জানিয়ে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করছিলাম। এসময় পুলিশ এসে লাঠিচার্জ করে আমাদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা চালায়। আতঙ্কে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিলে শিক্ষার্থীদের তাড়া করে বিভিন্ন স্থানে গিয়ে তাদের বেধড়ক পেটায় পুলিশ। এসময় শিক্ষার্থীদের বাঁচাতে অনেক অভিবাবক ছুটে আসলে তাদের উপরও হামলা করা হয়।

লাঠিচার্জে আহত তানিয়া আক্তার ইভা বলেন, পুলিশ পেশাগত দায়িত্ব ভুলে গিয়ে ছাত্রলীগের মতো হামলা করেছে আমাদের উপর। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করছিলাম, কিন্তু পুলিশ আমাদের দফায় দফায় পিটিয়েছে। আমরা অনেক মেয়ে শিক্ষার্থী ছিলাম, পুরুষ পুলিশরা আমাদের উপরে হামলা করেছে। একটা স্বাধীন দেশে একটি শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে এভাবে হামলা করা কোনো সরকারি বাহিনীর কাজ হতে পারে না।

একাধিক শিক্ষার্থী অভিযোগ করে বলেন, আমাদের দেশের সংবিধান সকল নাগরিককে তাদের আন্দোলন ও সভা সমাবেশ করার অধিকার দিয়েছে। সেই দেশে কোন সাহসে শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে পুলিশ এসে আমার ভাই-বোনদের রক্ত ঝরালো। আমরা পুলিশের এই ন্যাক্কারজনক হামলার বিচার চাই। স্বাধীন দেশে শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের সুষ্ঠু পরিবেশ চাই। আমাদের ভাই-বোনদের ওপর হামলার প্রতিবাদ ও কোটা সংস্কারের দাবিতে বুধবার সকাল ১০টা থেকে আন্দোলন চালিয়ে যাবো।

নাজনীন, তানিয়া, তন্বিসহ একাধিক শিক্ষার্থী অভিযোগ করে বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করছিলাম। হঠাৎ করে পিছন থেকে আমাদের উপর হামলা চালায় পুলিশ। এসময় অনেক নারী শিক্ষার্থীদের মারধর করা হয় তবে এসময় পুলিশের কোনো নারী সদস্য উপস্থিত ছিলেন না। নারী পুলিশ সদস্য ছাড়া কিভাবে নারী শিক্ষার্থীদের টেনে হিঁচড়ে পেটালো তা আমাদের বোধগম্য নয়।

শিক্ষার্থীদের অভিভাবক শিমু জাহান বলেন, শিক্ষার্থীদের ওপর লাঠিচার্জ হচ্ছে দেখে আমরা তাদেরকে বাঁচাতে আসলে আমাদের উপরও লাঠিচার্জ করা হয়। স্বাধীন দেশে শিক্ষার্থীদের কি শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করার অধিকারটুকুও নেই। পুলিশ স্বপ্রণোদিত হয়ে দলীয় কর্মীদের মতো আচরণ করছে।

এ বিষয়ে বরগুনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আবদুল হালিম বলেন, পুলিশ কোনো শিক্ষার্থীর উপর লাঠিচার্জ করেনি।

আপনার নেতৃত্বে লাঠিচার্জ করা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা ঘটনাস্থলে আসলে তারা ছোটাছুটি করে চলে যাওয়ার সময় হয়তো পড়ে গিয়ে কেউ আহত হতে পারে। পুলিশ তাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে কোনো বাধা সৃষ্টি করেনি।

ইমরান/ফয়সাল

ঘটনাপ্রবাহ

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়