ঢাকা     রোববার   ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||  ভাদ্র ২৪ ১৪৩১

কোটা সংস্কার আন্দোলন

বশেমুরবিপ্রবিতে বহিরাগতদের প্রবেশ নিষেধ

গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২১:৫০, ১৬ জুলাই ২০২৪   আপডেট: ২২:০৬, ১৬ জুলাই ২০২৪
বশেমুরবিপ্রবিতে বহিরাগতদের প্রবেশ নিষেধ

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবি ও আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ করছে গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

এদিকে, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) থেকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মো. কামরুজ্জামান স্বাক্ষরিত এক পত্রে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

মঙ্গলবার বিকাল সাড়ে ৩টা থেকে গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের লিপুস ক্যান্টিনের সামনে জড়ো হতে থাকে কোটা বিরোধী শিক্ষার্থীরা। সেখান থেকে একটি মিছিল বের করা হয়। মিছিলে আন্দোলনকারীরা ‘কোটা না মেধা, মেধা মেধা’; ‘বঙ্গবন্ধুর বাংলায় বৈষম্যের ঠাঁই নাই’; ‘কোটা বৈষম্য নিপাত যাক, মেধাবীরা মুক্তি পাক’ ইত্যাদি স্লোগান দেয়। 

এসময় পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশ্যে করে ‘ভুয়া ভুয়া’ এবং পুলিশ দিয়ে আন্দোলন থামানো যাবে না বলে স্লোগানও দেয় শিক্ষার্থীরা।

পরে বেলা ৫টার দিকে বিক্ষোভ মিছিল শেষ করে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক এসে বিভিন্ন শ্লোগান দিতে থাকে। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে ছাত্রলীগের নেতা কর্মীরা অন্য ফটকে গোপালগঞ্জ সদর থানার পুলিশ সদস্যদের অবস্থান নিতে দেখা যায়। 

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের হাতে এসময় লাঠি, রড, স্টিল ও প্লাস্টিকের পাইপ দেখা যায়। এক পর্যায়ে ছাত্রলীগের নেতা কর্মীদের সামনে দিয়ে গোপালগঞ্জ-টুঙ্গিপাড়া সড়কের অবস্থান নেয় তারা। পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অনুরোধে সড়ক ছেড়ে ক্যাম্পাসের মধ্যে অবস্থান নিয়ে আন্দোলন করতে থাকে শিক্ষার্থীরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মো. কামরুজ্জামান স্বাক্ষরিত ওই পত্রে বলা হয়, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গোপালগঞ্জ-এর সকল বর্ষের শিক্ষার্থীদের জানানো যাচ্ছে যে, নিরাপত্তা জনিত কারণে ১৬ জুলাই তারিখ থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পযর্ন্ত ক্যাম্পাসে সকল বহিরাগত ব্যক্তিদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হলো। সকল শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসে প্রবেশের ক্ষেত্রে সার্বক্ষণিক আইডি কার্ড বহন করা ও প্রয়োজনমত প্রদর্শন করার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হলো।’

আন্দোলনে নেতৃত্ব দানকারী পদার্থ বিজ্ঞানের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী শরীফ আহমেদ বলেন, ‘আমাদের যৌক্তিক আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের উপর হামলা চালানো হয়েছে। এতে কয়েকজন শিক্ষার্থী প্রাণ হারিয়েছে। আমরা তাদের জীবন বৃথা যেতে দেব না।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামি শাসনতন্ত্র আন্দোলনের সভাপতি ও বিএমবি (বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড মনিকুলার বায়োলজি) বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সিফাত আহমেদ বলেন, ‘এটা আমাদের যৌক্তিক আন্দোলন। এ আন্দোলন ভিন্ন খাতে নিতে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। আমরা এ ষড়যন্ত্র রুখে দিব।’

গোপালগঞ্জ সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আনিচুর রহমান বলেন, ‘কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে মিছিল করে। এরপর তারা সড়কে অবস্থান নেয়। কোনো প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা যেন না ঘটে, সেজন্য পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল। তবে শিক্ষকদের অনুরোধে শিক্ষার্থীরা অবরোধ তুলে নেয়। যে কারণে পুলিশ সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক রয়েছে।’

প্রসঙ্গত, ২০১৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে ৫৬ শতাংশ কোটা ছিল। এর মধ্যে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা, ১০ শতাংশ নারী, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষদের জন্য ৫ শতাংশ আর প্রতিবন্ধীদের জন্য ১ শতাংশ আসন সংরক্ষিত ছিল। ওই বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কোটা সংস্কারের দাবিতে বড় বিক্ষোভ হয়। পরে সরকারি চাকরিতে (প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে) কোটা বাতিল করে পরিপত্র জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। 

তবে ২০২১ সালে সেই পরিপত্রের মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের অংশটিকে চ্যালেঞ্জ করে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান উচ্চ আদালতে রিট করেন। সেই রিটের রায়ে গত ৫ জুন পরিপত্রের ওই অংশ অবৈধ ঘোষণা করেন আদালত। এরপর থেকে চাকরিপ্রত্যাশী ও শিক্ষার্থীরা সরকারের জারি করা সেই পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিতে মাঠে নামেন।

বাদল সাহা/সনি

ঘটনাপ্রবাহ

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়