ঢাকা     রোববার   ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||  ভাদ্র ২৪ ১৪৩১

‘একটা হাত-পা ভাঙিল না ক্যান, কী জন্য চারটা গুলি কইল্যো’ 

আমিরুল ইসলাম, রংপুর || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:২২, ১৭ জুলাই ২০২৪   আপডেট: ১৮:০৬, ১৭ জুলাই ২০২৪
‘একটা হাত-পা ভাঙিল না ক্যান, কী জন্য চারটা গুলি কইল্যো’ 

ভাইকে হারিয়ে আহাজারি করছেন বোন (ইনসেটে নিহত আবু সাঈদ)

‘আমার ভাই তো মরার বয়সি হয় নাই। একটা পা ভাঙিল না ক্যান, একটা হাত ভাঙিল না ক্যান। কী জন্য চারটা গুলি কইল্যো? আমার কলিজা তো মানোছে না। আমাগ তিনডা গুলি মারি গেলো না ক্যান? আমার ভাই এতো কষ্ট করে মরিছে ভাই...।’ 

সবার ছোট ভাইকে হারিয়ে এভাবেই বিলাপ করছিলেন রংপুরে কোটা সংস্কার আন্দোলনে বুকে গুলি লেগে নিহত বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদের বোন সুমি। 

সুমির কান্না যেন থামছেই না। তিনি বিলাপ করতে করতে বলেন, ‘হামার ভায়ের এতো মেধা, আমার ভাই ফাইভে বৃত্তি পাইছে, এইটে বৃত্তি পাইছে। হামার ভাই সরকারি কলেজে স্কলারশিপ পাইছে। বাপে আমার খুশিতে কানদি দিছে। হায়রে ভাই! এতো মেধাবী ছাত্র আমার ভাই। কী জন্যত মারিলো। আমার ভাইক কয়ছুলিম, মানিষেত বিসিএস করে ক্যাং করে ভাই। তুমারা নাত করেন তো। আমরা তখন কবার পারুম, আমরা গরিব মানুষ, আমার ভাইত বিসিএস করে চাকরি করে। ভাই কইছিলো আমি চেষ্টা করিম।’ 

আরও পড়ুন: পুরো পরিবারের স্বপ্ন ছিল সাঈদকে ঘিরে, হতে চেয়েছিলেন বিসিএস ক্যাডার

রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার বাবনপুরে আবু সাঈদের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, ছেলেকে হারিয়ে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন মা। নির্বাক বাবা। সাঈদের ছয় ভাই ও তিন বোনের মধ্যে এক ভাই উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেছেন। অন্যরা প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের পাঠ চুকিয়েছেন। পুরো পরিবারের স্বপ্ন ছিলো তাকে ঘিরে। কিন্তু অকালে ঝরে গেলো পরিবারের সেই স্বপ্ন। আদরের ছোট ভাইকে হারিয়ে হতভম্ব বড় ভাই রমজান। 

রমজান বলেন, ‘বাবা অনেকদিন ধরে অসুস্থ। ভাই বোনদের মধ্যে সাঈদ ছিলো সবচেয়ে মেধাবী। এজন্য পরিবারের সবার উপার্জন দিয়ে তাকে এতদূর পর্যন্ত পড়ালেখা চালিয়ে নিয়ে এসেছি। ওর স্বপ্ন ছিলো বিসিএস ক্যাডার হওয়ার। আমাদের আশা ছিলো, একদিন সে অনেক বড় হবে, সমাজে প্রতিষ্ঠিত হবে। এখন তো সব শেষ হয়ে গেলো।

আরও পড়ুন: ৯ ভাইবোনের মধ্যে সবচেয়ে মেধাবী ছিলেন আবু সাঈদ 

প্রতিবেশী আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আবু সাঈদ ছিল ওই পরিবারের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। সব ভাইবোনের মধ্যে কেবল সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছিলো। কিন্তু শেষ সময়ে এসে সব তছনছ হয়ে গেলো!’

তিনি আরো বলেন, ‘আবু সাঈদ যেমন মেধাবী, তেমনি নম্র ও ভদ্র ছিলো। তার মৃত্যুতে আমরা গ্রামবাসী গভীর শোকাহত।’

কোটা সংস্কার নিয়ে সারা দেশে শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে অগ্রণী ভূমিকা ছিল আবু সাঈদের। সেখানে তিনি ছিলেন এই আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক। মঙ্গলবার দুপুর ২টার দিকে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক দিয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী ছাত্ররা মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাসে প্রবেশের চেষ্টা করে। পুলিশ তাদের বাধা দিলে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। একপর্যায়ে পুলিশের ছোড়া রাবার বুলেটে ক্ষতবিক্ষত হওয়ার পর মাটিতে লুটিয়ে পড়েন আবু সাঈদ। হাসপাতালে আনার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন তিনি।

/ইভা/


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়