ঢাকা     রোববার   ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||  ভাদ্র ২৪ ১৪৩১

কী ঘটেছিল জানালেন পাঁচতলা থেকে পড়া ছাত্রলীগ কর্মী

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২০:১৬, ১৭ জুলাই ২০২৪   আপডেট: ২০:৩৮, ১৭ জুলাই ২০২৪
কী ঘটেছিল জানালেন পাঁচতলা থেকে পড়া ছাত্রলীগ কর্মী

ছাত্রলীগ কর্মী জালাল উদ্দিন চট্টগ্রাম মেডিক্যালে চিকিৎসাধীন

চট্টগ্রামের মুরাদপুরে পাঁচতলা ভবন থেকে কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীদের ফেলে দেওয়া ছাত্রলীগ কর্মী জালাল উদ্দিন ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন। ভাগ্যগুণে বেঁচে ফেরা জালাল হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে ওই হামলার বিবরণ দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘ছাদ থেকে লাথি মেরে ফেলে দেওয়ার পরও কোটা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা আমাকে মেরে ফেলার জন্য লাঠিপেটা করে। ‘ও ছাত্রলীগ করে, ওকে মেরে ফেল’ বলে চিৎকার করে তারা। 

চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন জালাল উদ্দিন বলেন, ‘‘মুরাদপুর এলাকায় কোটাবিরোধী আন্দোলনের সময় আমরা ১৫-২০ জন একটি ভবনের ছাদে ছিলাম। এ সময় লাঠি, হকিস্টিক ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে ৫০-৬০ জন আন্দোলনকারী ছাদে উঠে আসে। এদের মধ্যে কয়েকজন আমার দিকে এগিয়ে এসে আক্রমণ করার চেষ্টা করে। তাদের বলি, আমি আপনাদের মতো সাধারণ শিক্ষার্থী। আপনারা চলে যান। তাদের মধ্যে একজন আমার হাতে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপ দেয়। তখন তারা চিৎকার করে বলছিল, ‘কাল তোরা আমার বোনকে মেরেছিস না, আজ তোকে মেরে ফেলবো।’ এই কথা বলে একজন লাথি দিলে আমি ছাদ থেকে নিচে পড়ে যাই।’’ 

পাঁচতলা ভবনের ছাদ থেকে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের ফেলে দেওয়ার ভিডিও থেকে নেয়া ছবি
 

তিনি আরও বলেন, ‘‘নিচে ইটের স্তূপ ছিল। আমি অচেতন হলেও কিছুক্ষণের মধ্যে জ্ঞান ফিরে পাই। আমি যেখানে পড়েছিলাম, সেখানে লাঠি নিয়ে দেয়াল টপকে এগিয়ে আসে আন্দোলনকারীরা। ক্রিকেটের স্টাম্প এবং হকিস্টিক ছিলো তাদের হাতে। তারা এসেই আমাকে মারতে থাকে। এ সময় তাদের একজনকে বলতে শোনা যায়, ‘ওকে আমি চিনি, ও ছাত্রলীগ করে, ওকে মেরে ফেল।’ এরপর আমি আর কিছু বলতে পারি না।’’ 

গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে চট্টগ্রামে কোটাবিরোধী আন্দোলনে সংঘর্ষ চলাকালে নগরীর মুরাদপুর এলাকায় একটি পাঁচতলা ভবনের ছাদ খেকে ১৫ থেকে ২০ জন ছাত্রলীগ কর্মীকে নিচে ফেলে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে ছাত্রলীগ। এ ঘটনায় আহত কয়েকজন ছাত্রলীগকর্মীর অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে।

চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান আওয়ামী লীগের যুব ক্রীড়া উপ-কমিটির সদস্য নুরুল আজিম রনি ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন, ‘আন্দোলনকারীরা আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করেছে। তাদের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য ২০ জন কর্মী ওই পাঁচতলা ভবনের ছাদে আশ্রয় নিয়েছিল। আন্দোলনকারীর ছদ্মবেশে বিএনপি-জামায়াতের লোকজন তাদের পিটিয়ে ছাদ থেকে ফেলে দেয়। খবর পেয়ে রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির সদস্যরা আমাদের ১৫ জন কর্মীকে সেখান থেকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে।’

গতকাল কোটা সংস্কার আন্দোলনের চট্টগ্রামের সদস্য মোশাররফ হোসেন গণমাধ্যমে বলেন, ‘ওই ছয়তলা ভবনের ছাদ থেকে ছাত্রলীগের কয়েকজন উচ্ছৃঙ্খল কর্মী আমাদের লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেছিল। এতে কয়েকজন ছাত্র আহত হন। একপর্যায়ে তাদের ছাদ থেকে নামিয়ে আনা হয়। ছাদ থেকে কাউকে ফেলে দেওয়া হয়নি। তারা ভয়ে পাইপ বেয়ে নামতে গিয়ে পড়ে গিয়ে আহত হয়েছেন।’

উল্লেখ্য চট্টগ্রামের মুরাদপুরে মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) কোটাবিরোধী আন্দোলনকালীদের সঙ্গে ছাত্রলীগ-যুবলীগের সংঘর্ষ চলাকালে একটি ভবনের ছাদ থেকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ফেলে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। ফেলে দেওয়ার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওতে দেখা যায়, ছাদ থেকে মাটিতে পরার পরও তাদের পেটানো হচ্ছে। 

বুধবার সকালে ঘটনাস্থলে যান চট্টগ্রাম নগর পুলিশের (সিএমপি) কমিশনার সাইফুল ইসলাম। এ ঘটনায় কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি আশ্বাস দেন।

রেজাউল/মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়