ঢাকা     রোববার   ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||  ভাদ্র ২৪ ১৪৩১

কক্সবাজারে কদর বেড়েছে খবরের কাগজের 

তারেকুর রহমান, কক্সবাজার || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:৫১, ২৪ জুলাই ২০২৪   আপডেট: ১০:৫৭, ২৫ জুলাই ২০২৪
কক্সবাজারে কদর বেড়েছে খবরের কাগজের 

দেশব্যাপী দুর্বৃত্তদের চালানো সহিংসতার কারণে গত বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) সকালে বন্ধ হয় মোবাইল ইন্টারনেট। পরে বন্ধ হয়ে যায় ব্রডব্যান্ড সেবাও। ইন্টারনেট না থাকায় নিউজ পোর্টালগুলো দেখতে না পেরে টেলিভশন ও পত্রিকাই হয়ে দাঁড়ায় সাধারণ মানুষের কাছে দেশের খবর জানার অবলম্বন। বিশেষ করে বিশদ বিবরণ তথা বিস্তারিত সংবাদের জন্য টেলিভিশনের চেয়ে পত্রিকার ওপরই নির্ভরশীলতা বৃদ্ধি পায় সবার। তাই প্রতিদিন পত্রিকার জন্যই বসে থাকতে হয়েছে পাঠকদের। 

কক্সবাজার শহরের খবর বিতান, সৈকেত পেপার বিতান এবং নিউজ কর্ণারে গিয়ে দেখা যায়, পত্রিকার জন্য ভিড় করছেন পাঠকরা। দুপুর না হতেই শেষ হয়ে যাচ্ছে হকারদের পত্রিকা। অথচ কয়েকদিন আগেও অনেক পত্রিকা অবিক্রিত থেকে যেত হকার ও এজেন্সিগুলোর কাছে। 

কক্সবাজারের হকার মোহাম্মদ শফি বলেন, ‘এক সপ্তাহ আগেও পত্রিকা বিক্রি করে সারাদিন ২০০ টাকা পেতাম না। এখন দুপুরের আগেই সব পত্রিকা শেষ হয়ে যাচ্ছে। অনেক নিয়মিত পাঠককেও পত্রিকা দিতে পারছি না। বেচা-বিক্রি ভালোই হচ্ছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘বাড়ি ও প্রতিষ্ঠানে দেওয়া বাদ দিয়ে একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকার ১৫ পিস নিতাম। এখন প্রতিদিন ৩০ পিসের বেশি ওই পত্রিকাটি বিক্রি করেছি। অন্য পত্রিকার চাহিদাও অনেক।’

কক্সবাজারের রুমালিয়ারছড়া এলাকার শাহেদ মিজান বলেন, ‘আমি অনলাইন পত্রিকার একজন নিয়মিত পাঠক। গত বৃহস্পতিবার থেকে ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় অনলাইনে পত্রিকা পড়তে পারিনি। তাই প্রতিদিন ২০টাকা গাড়ি ভাড়া খরচ করে এজেন্সিতে পত্রিকা নিতে যাই। মোবাইলে সহজে পড়তে পারায় অনেকদিন ছাপা পত্রিকা থেকে দূরে ছিলাম। ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় আবারও সেই কাগজের পত্রিকায় ফিরে এলাম।’

হাসপাতাল সড়কের শেফা ফার্মেসির ম্যানেজার রাজিব দাশ বলেন, ‘নিয়মিত পত্রিকার পাঠক আমি। অনলাইনে বিভিন্ন নিউজ পোর্টালে গিয়ে দেশ-বিদেশের সব খবর জেনে নিতাম। গত কয়েকদিন ইন্টারনেট বন্ধের কারণে অনলাইনে পত্রিকা পড়তে পারছি না। তাই এক হকারকে দুটি জাতীয় পত্রিকা দোকানে দিয়ে যেতে বলেছি। এতে ইন্টারনেট বন্ধ থাকলেও দেশের চলমান পরিস্থিতিসহ সব খবর বিস্তারিতভাবে জানার সুযোগ হয়েছে।’ 

কক্সবাজারে ‘এনটিভি’র স্টাফ রিপোর্টার ইকরাম চৌধুরী টিপু নিয়মিত পত্রিকা পাঠক। তিনি বলেন, ‘খবরের ভেতরের খবর জানতে পত্রিকা পড়ার বিকল্প নেই। পত্রিকায় নানা বিষয়ে বিস্তারিত জানার সুযোগ থাকে। যেমন ফিচার, আন্তর্জাতিক, সারাদেশ ও খেলাধুলার পাশাপাশি অন্যসব খবর। এরপরও ইন্টারনেটের যুগে কাগজের পত্রিকার তেমন পাঠক মেলে না। ইন্টারনেটের কারণে মোবাইলে সবাই তাৎক্ষণিক দেশের সব সংবাদ জেনে যান। বিগত দিনগুলোতে ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় কাগজের পত্রিকার কদর বেড়েছে।’ 

জাতীয় দৈনিক ‘আজকের পত্রিকার’ কক্সবাজার প্রতিনিধি মাইনউদ্দিন হাসান শাহেদ বলেন, ‘ইন্টারনেটের কারণে বিশ্ব এখন হাতের মুঠোয়। মোবাইল দিয়ে দেশ-বিদেশর নানা খবর তাৎক্ষণিক জানা যায়। কয়েকদিন ধরে সহিংসতার কারণে ইন্টারনেট সেবা ব্যাহত হওয়ায় দেশের কোথায় কী হচ্ছে, সে সম্পর্কে খুব বেশি তথ্য পাওয়া যাচ্ছিল না। তাই ছাপা পত্রিকার কদর আবারো বেড়েছে।’

‘কালের কণ্ঠ’ পত্রিকার কক্সবাজারের বিশেষ প্রতিনিধি তোফায়েল আহমদ প্রায় ৪৬ বছর ধরে সাংবাদিকতা করে আসছেন। এখনো তিনি মাঠে-ময়দানে সংবাদের পেছনে ছুটে বেড়ান। তিনি বলেন, ‘একটা সময় শহর ও গ্রাম-গঞ্জের মানুষ পত্রিকার জন্য অপক্ষো করতেন। বর্তমানে তথ্যপ্রযুক্তির প্রসারের কারণে মানুষ অ্যান্ড্রয়েড ফোনে সবকিছু জেনে নিচ্ছেন। করোনা মহামারিতে মানুষ আরো বেশি অনলাইন নির্ভর হয়ে পড়েন। ফলে ছাপা পত্রিকার পাঠক কমে গিয়েছিল। ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় এই কয়েকদিনে ছাপা পত্রিকার কদর বেড়েছে।’

বাংলাদেশ সংবাদপত্র এজেন্ট কল্যাণ অ্যাসেসিয়েশনের সভাপতি মোহাম্মদ হাসিম মোহাম্মদ হাসিম ও খবর বিতান পত্রিকা এজেন্সির মালিক মোহাম্মদ হাসিম বলেন, ‘অন্যান্য সময়ের চেয়ে গত কয়েকদিন ধরে পত্রিকার পাঠক বেড়েছে। পছন্দের পত্রিকা কিনতে আমার এজেন্সিতে ভিড় করছেন নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। হকাররাও পত্রিকা বাড়িয়ে নিচ্ছেন। পত্রিকা ভালো বিক্রি হয়েছে।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘পাঠক বৃদ্ধি পাওয়ায় পত্রিকার সংখ্যা বাড়িয়ে ছাপাচ্ছেন কর্তৃপক্ষ। মূলত ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় মোবাইলে অনলাইন পত্রিকা ও ই-পেপার পড়তে না পেরে খবরের কাগজের প্রতি ঝুঁকছেন সারাদেশের পাঠকরা। ক্সবাজারে আমার নিজস্ব পত্রিকা এজেন্সি খবর বিতানে আগে ‘প্রথম আলো’ ৩০০ পিস রাখা হতো। এখন এই পত্রিকাটি ৬০০’র বেশি রাখা হচ্ছে। কারণ এই পত্রিকার পাঠক বেশি। অন্য পত্রিকার চাহিদাও দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।’

মাসুদ


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়