ঢাকা     রোববার   ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||  ভাদ্র ২৪ ১৪৩১

নদীপাড়ে ড্রেজার ‘আতঙ্ক’

জাহিদুল হক চন্দন, মানিকগঞ্জ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:৫৩, ২৬ জুলাই ২০২৪   আপডেট: ১০:০২, ২৬ জুলাই ২০২৪
নদীপাড়ে ড্রেজার ‘আতঙ্ক’

মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার ওপর দিয়ে বয়ে গেছে ইছামতী ও কালিগঙ্গা নদী। বর্ষার শুরুতে প্রাকৃতিক কারণে দুই নদীপাড়ের বিভিন্ন এলাকায় ভাঙন দেখা দেয়। তবে গত অর্ধযুগে এই উপজেলায় নদীভাঙনের মাত্রা কয়েকগুণ বেড়েছে।

স্থানীয়দের দাবি, অবৈধ ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলনের কারণে নদীভাঙন বেড়েছে। তাই নদীপাড়ের মানুষের কাছে এখন বড় আতঙ্কের নাম এই ড্রেজার। পরিবেশবাদী সংগঠনের নেতার দাবি, অবৈধ ড্রেজার বন্ধে প্রশাসন অভিযান চালালেও তা যৎসামান্য।

শুক্রবার (২৬ জুলাই) সরেজমিনে উপজেলার শ্রীধরনগর, সিধুনগর, জাবরা, সাইংজুড়ি, বাইলজুড়ি, বড়টিয়াসহ ১৫টি স্পট ঘুরে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন বন্ধ দেখা যায়। তবে এসব এলাকায় নদীভাঙনের মাত্রা ছিল বেশি। ভাঙন ঠেকাতে পানি উন্নয়ন বোর্ড অস্থায়ীভাবে জিও ব্যাগ ফেললেও তা কাজে আসছে না।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বর্ষায় ইছামতি ও কালীগঙ্গা নদীর পানি বাড়ায় ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন বন্ধ থাকে। বর্ষার দুই মাস ছাড়া সারা বছরই নদী থেকে বালু উত্তোলন করা হয়।

সাইংজুড়ি এলাকায় কালীগঙ্গা নদীতে বসানো ড্রেজারের পাশে গোসল করছিলেন লোকমান হোসেন। প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ‌কালীগঙ্গা নদীর আশেপাশে কয়েকটি ড্রেজার চলে। পানি বাড়লে এসব ড্রেজার বন্ধ থাকে। শুষ্ক মৌসুমসহ প্রায় সারা বছর ড্রেজার দিয়ে তোলা বালু নদীর আশপাশে ফেলা হয়। বর্ষার দুই মাস ড্রেজার বন্ধ থাকলেও যা ক্ষতি হওয়ার তা আগেই হয়ে যায়। বর্ষার পানি নদীতে আসার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় ভাঙন।

ইছামতি নদীরপাড়ে কথা হয় আক্কাস মিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, বাপ-দাদার আমলে নদীর হাবভাব দেখলই বুঝতাম নদী এবার কতটুকু ভাঙব। কার কার ভিটাবাড়ি নদীতে যাইবো। আমাগো সঙ্গে প্রকৃতিরও কেমন জানি মহব্বত ছিল। আর এহন তো ড্রেজার দিয়া নদী শেষ কইরা ফালাইছে। বুঝাই যায় না, কহন কার বাড়িঘর নিয়া যাইবো। ড্রেজার দিয়া মাইনসে নদীডারে ক্ষ্যাপাই দিছে। আর নদীও প্রতি বছর আমাগো এলাকার ঘরবাড়ি গিলতাছে।

আমেনা বেগম নামে এক নারী বলেন, নদীর যেইখানে ড্রেজার বসায় ওইখানে সঙ্গে সঙ্গে তেমন ভাঙে না। বর্ষায় পানি আইলেই সব ভাইঙ্গা যায়। যদি সারা বছর ড্রেজার চালানো বন্ধ থাকতো তাইলে আমরা বাঁচকে পারতাম। তা না অইলে একদিন সব গাঙ্গে (নদী) নিয়া যাইবো।

বানিয়াজুড়ি জাবরা এলাকার ড্রেজার ব্যবসায়ী জনি বলেন, এলাকার বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে মাটির প্রয়োজন হয়। এছাড়া বর্ষাকালে নদী ভরাট হয়ে যায়। ড্রেজার দিয়ে বালু মাটি উত্তোলন করায় নদীর গতিপথ ঠিক থাকে। সেই সঙ্গে এলাকার বিভিন্ন নিচু জায়গা ভরাট করাতে মানুষের উপকার হয়। এলাকার মানুষের সমর্থন নিয়েই ড্রেজার বসাই। এতে কারো কোনো ক্ষতি হয় না।

নদী ও প্রাণ প্রকৃতি কমিটির মানিকগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি অ্যাডভোকেট দীপক কুমার ঘোষ বলেন, অপরিকল্পিতভাবে ড্রেজিং পরিচালনার ফলে নদীতে ভয়াবহ ভাঙন সৃষ্টি হয়। সংশ্লিষ্ট প্রশাসন অভিযান পরিচালনা করলেও এসব ড্রেজিং বন্ধ হচ্ছে না। কেন হচ্ছে না বিষয়টি প্রশাসন ভালো বলতে পারবে। শুধু অভিযান পরিচালনা করে ড্রেজার বন্ধ না হলে কী করা যায়, সে বিষয়ে প্রশাসনকে ব্যবস্থা নেওয়ার জোড় দাবি জানাচ্ছি।

ঘিওর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ( ইউএনও) আমিনুল ইসলাম বলেন, গত তিন মাসে ড্রেজার বন্ধে প্রায় ১৫টি অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে নদী থেকে বালু উত্তোলনে জড়িত থাকার অপরাধে শাস্তিও দেওয়া হয়েছে। ড্রেজারের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হবে।

মানিকগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাইনুদ্দিন বলেন, ড্রেজার দিয়ে বালু থেকে উত্তোলনের ফলে নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়। প্রাকৃতিকভাবে নদীভাঙলেও যেসব এলাকায় ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করা হয় ওই সকল এলাকায় ভাঙন বেশি দেখা দেয়।

মাসুদ/কেআই


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়