ঢাকা     রোববার   ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||  ভাদ্র ২৪ ১৪৩১

‘ঢাকার সহিংসতায় অংশ নেয় রাজশাহীর জঙ্গিরা’

রাজশাহী প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:৪৩, ২৭ জুলাই ২০২৪   আপডেট: ১৫:২৯, ২৭ জুলাই ২০২৪
‘ঢাকার সহিংসতায় অংশ নেয় রাজশাহীর জঙ্গিরা’

ফাইল ফটো

কোটা সংস্কার আন্দোলনের সুযোগ নিয়ে রাজধানী ঢাকায় চালানো সহিংসতায় রাজশাহী বিভাগের বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের সদস্যরা অংশ নিয়েছিলেন বলে মনে করছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাধিক সদস্য।

সূত্রে জানা যায়, ঢাকা থেকে ফেরার পথে গ্রেপ্তার হয়েছেন কয়েকজন জঙ্গি। এছাড়া তালিকাভুক্ত জঙ্গিদের অনেকেই সহিংসতার সময় এলাকায় ছিলেন না। শীর্ষ নেতৃত্বের নির্দেশে তারা ঢাকা ও নরসিংদী গিয়েছিলেন বলে মনে করা হচ্ছে। সে ধারণা থেকে চলছে তদন্ত।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার হামিরকুৎসায় ২০০৪ সালের ১ এপ্রিল আত্মপ্রকাশ করে জঙ্গি সংগঠন জামায়াতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি)। সংগঠনটির নেতা শায়খ আব্দুর রহমান, সিদ্দিকুর রহমান ওরফে বাংলা ভাইসহ তাদের সহযোগীদের নৃশংসতায় বাগমারা, নওগাঁর আত্রাই-রানীনগর এবং নাটোরের নলডাঙ্গা রক্তাক্ত জনপদ হিসেবে পরিচিতি পায়। শীর্ষ নেতাদের ফাঁসি কার্যকরের পর জেএমবি দুর্বল হয়ে পড়লেও কয়েক দফায় সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করেছে তারা। এখনও মাঝেমধ্যে সংগঠনের দু-একজন গ্রেপ্তার হন। এছাড়া রাজশাহী অঞ্চলে নব্য জেএমবি, আনসারুল্লাহ বাংলা টিম, আনসার-আল ইসলাম, হরকাতুল জিহাদ ও আনসার রাজশাহীর সদস্যরা মাঝেমধ্যে গ্রেপ্তার হন। ফলে এসব জঙ্গি সংগঠনের কার্যক্রম এখনও এ অঞ্চলে আছে বলে মনে করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তবে ২০১৯ সালে পাবনায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে দেশের ১৫ জেলার ৬১৪ জন জঙ্গি আত্মসমর্পণ করেন। আত্মসমর্পণকারী জঙ্গিদের মধ্যে রাজশাহী, পাবনা, নাটোর, বগুড়া, নওগাঁ ও জয়পুরহাটের সক্রিয় বিভিন্ন চরমপন্থি দলের সদস্যরা ছিলেন। এদের এখনও নিজ নিজ থানায় প্রতি সপ্তাহে একবার হাজিরা দিয়ে আসতে হয়। তবে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় তাদের অনেকেই হাজিরা দিতে থানায় যাননি। তারা ছিলেন লাপাত্তা।

পুলিশের রাজশাহী রেঞ্জের অতিরিক্ত উপ-মহাপরিদর্শক (অপরাধ) বিজয় বসাক বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন থানা থেকে তথ্য পেয়েছি, কোটা আন্দোলন চলার সময় আত্মসমর্পণকারী জঙ্গিরা থানায় তাদের নিয়মিত হাজিরা দেয়নি। তারা রাজধানীতে সহিংসতা চালাতে গিয়েছিলেন বলেও খবর পাচ্ছি। এ বিষয়টি নিয়ে কাজ চলছে। আমরা সবকিছু তদন্ত করে দেখছি।’

এক সময়ের জঙ্গিদের ‘আঁতুড় ঘর’ রাজশাহীর বাগমারার ৪২ জনকে প্রতি শুক্রবার থানায় হাজিরা দিতে যেতে হয়। এদের মধ্যে ৪০ জনের বাড়ি বাগমারা উপজেলায়। বাকি দুই জন অন্য উপজেলার বাসিন্দা। গত শুক্রবার (১৯ জুলাই) সিংহভাগ ব্যক্তি থানায় হাজিরা দিতে যাননি। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাগমারা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) অরবিন্দ সরকার।

তিনি বলেন, ‘আন্দোলন ঘিরে সেদিন দেশের পরিস্থিতি ভাল ছিল না। সাত-আটজন হাজিরা দিতে এসেছিল। বাকিরা আসেনি। তারা কেন আসেনি সেটা বলতে পারব না।’

রাজশাহী মহানগরীর ১২টি থানার মধ্যে মতিহার, বোয়ালিয়া, রাজপাড়া, চন্দ্রিমা, বেলপুকুর ও পবা থানায় ১১১ জন তালিকাভুক্ত জঙ্গি রয়েছেন। এর মধ্যে, জেএমবির ৮৬ জন, হিযবুত তাহরীরের ১৫ জন, শাহাদৎ আল হিকমার একজন, আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের একজন এবং আনসার আল ইসলামের ৮ জন। তাদেরও সপ্তাহে একদিন থানায় হাজির হতে হয়।

প্রতি শুক্রবার বিকালে বেলপুকুর থানায় হাজিরা দেন ৩৪ জন। এদের মধ্যে তিন জন যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি উচ্চ আদালত থেকে জামিনে আছেন। ৩১ জনের মামলা বিচারাধীন। তারাও জামিনে আছেন। গত শুক্রবার সবাই থানায় হাজিরা দেননি বলে জানিয়েছেন বেলপুকুর থানার ওসি মামুনুর রশীদ। তবে কতজন হাজির হননি তা ওসি জানাতে চাননি।

রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) মুখপাত্র ও অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (পুলিশ সুপার হিসেবে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) জামিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের কাছেও তথ্য আছে যে রাজশাহীর জঙ্গিরা ঢাকায় সহিংসতা চালাতে গিয়েছিল। তারা কেন হাজিরা দেননি, কোথায় গিয়েছিলেন, কী করেছেন, কে কোন সংগঠনের সদস্য সেসব নিয়ে এখন তদন্ত চলছে।’

গোয়েন্দা সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, কোটা আন্দোলনকারীদের ওপর ভর করে রাজধানীতে ব্যাপক সহিংসতা ও জ্বালাও পোড়াও, তাণ্ডব চালায় জামায়াত-শিবির এবং জঙ্গি সংগঠনের সদস্যরা। গত ১৯ ও ২০ জুলাইয়ের নাশকতায় জঙ্গি সংগঠন জেএমবির রাজশাহী, নাটোর ও নওগাঁর অন্তত ১৫০ সদস্য অংশ নেয়। ঢাকা ও তার আশেপাশের জেলাগুলো বিচ্ছিন্ন করতে সুপরিকল্পিতভাবে আগেই তাদের ঢাকায় পাঠানো হয়। কারফিউ শিথিল হলে ঢাকা থেকে ফেরার পথে অনেকেই গ্রেপ্তার হয়েছেন। এরা স্বীকার করেছেন ১৮ জুলাই থেকে ঢাকায় জড়ো হয়ে শীর্ষ নেতাদের নির্দেশে তারা অংশ নেন সহিংসতায়।

র‌্যাব-৫ এর রাজশাহীর অধিনায়ক ফিরোজ কবির বলেন, ‘কোনো নাশকতা ঘটানোর উদ্দেশ্যে রাজশাহীর জঙ্গিরা ঢাকা কিংবা এর আশেপাশে গিয়েছেন কি না তা খুব সহজেই আমরা বের করতে পারব। ঠিক নাশকতার আগে কারা গিয়েছেন, আন্দোলনের দিনগুলোতে তারা কোথায় কোথায় অবস্থান করছিলেন এবং কবে ফেরত এসেছেন তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তদন্তে যাদের নাম পাওয়া যাবে তাদের আবার আইনের আওতায় আনা হবে।’

কেয়া/কেআই


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়