ঢাকা     রোববার   ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||  ভাদ্র ২৪ ১৪৩১

কোটা নিয়ে সহিংসতা  

গাজীপুরে অগ্নিসংযোগ-ভাঙচুরে ৫০ কোটি ৫৮ লাখ টাকার ক্ষতি  

নিজস্ব প্রতিবেদক, গাজীপুর  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:৪৮, ২৭ জুলাই ২০২৪   আপডেট: ১৫:১১, ২৭ জুলাই ২০২৪
গাজীপুরে অগ্নিসংযোগ-ভাঙচুরে ৫০ কোটি ৫৮ লাখ টাকার ক্ষতি  

অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত গাড়ি।

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে নাশকতার ক্ষতচিহ্ন ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে গাজীপুরের বিভিন্ন স্থানে। হামলা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগে সরকারি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও যানবাহনের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। কয়েক দিনের নাশকতার ঘটনায় গাজীপুরের ৬টি প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনায় ৫০ কোটি ৫৮ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন গাজীপুরের জেলা প্রশাসক আবুল ফাতে মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম।

জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, গত বৃহস্পতিবার থেকে টানা কয়েকদিন ধরে চলা আন্দোলনের নামে নাশকতার ঘটনা ঘটে। নাশকতাকারীরা মহানগরের টঙ্গী থেকে চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত এলাকায় সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে। হামলাকারীরা সরকারি অফিসকে কেন্দ্র করে এ নাশকতা চালায়। 

সরেজমিন দেখা গেছে, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের চান্দনা চৌরাস্তা এলাকার পুলিশ বক্সটির টিনের চাল, চেয়ার-টেবিল ও আসবাব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এর পাশে সড়ক ও জনপথের কার্যালয়। সেই কার্যালয়ের ভেতরে গিয়ে চারটি পোড়া গাড়ি পড়ে থাকতে দেখা গেছে। আশপাশের ঘরবাড়ি ও দালানের ভাঙা গ্লাসগুলো এখনও দেখা যায়। গাজীপুর থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত বিআরটি প্রকল্পের স্টেশনগুলোয় রাখা এসকেলেটরগুলোর আংশিক পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। কোনাবাড়ী এলাকায় পুলিশের একটি বক্স পুড়িয়ে দেয় হামলাকারীরা। 

টঙ্গীর কলেজ গেট এলাকায় সিটি কর্পোরেশনের অঞ্চল-৪ বা টঙ্গী কার্যালয় অবস্থিত। মূল ফটকের পাশে সহকারী প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা ও যন্ত্রবিভাগের উপসহকারী কর্মকর্তার কক্ষ। দুটি কক্ষেই ব্যাপক ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। কক্ষের ভেতরে পড়ে আছে আগুনে পোড়া আসবাব ও কাগজপত্র। কক্ষ দুটির সামনে একটি ফাঁকা জায়গায় সারিবদ্ধ ২০–২৫টি গাড়ি। ভাঙচুর ও আগুন দেওয়া এসব গাড়ি অকেজো হয়ে পড়েছে। মাটিতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে আছে গাড়ির ধ্বংসাবশেষ, কাচ ও বিভিন্ন জিনিসপত্র। কার্যালয়টির সামনে একেবারে দক্ষিণ পাশে একটি টিনের ছাউনির নিচে সারিবদ্ধভাবে রাখা ৬টি গাড়ি। সব কটি গাড়িই আগুনে পোড়া। 

হামলাকারীরা চান্দনা চৌরাস্তায় সড়ক ও জনপথ বিভাগের ৩টি গাড়ি পুড়িয়ে দেয়। তারা ৪টি ট্রাক, হাইড্রোলিক হ্যামার, বিআরটি প্রজেক্টের অফিস গেইট ও ভবনসহ অন্যান্য মালামাল ভাঙচুর করে। এতে দুই কোটি ১৯ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। 

সড়ক ও জনপথের নির্বাহী প্রকৌশলী খ. মো. শরিফুল আলম জানান, গাজীপুরে যে সহিংসতা হয়েছে তাতে আমাদের আনুমানিক ৩ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। যানবাহনের পাশাপাশি ইটপাটকেল ছুঁড়ে ভবন ভাঙচুর করা হয়েছে। 

এছাড়া হামলায় বিআরটি প্রজেক্টের ২৫টি এক্সেলেটর, দুই হাজার বর্গ মিটার এসএস রেলিং, একটি এস্কাভেটর, ৩ হাজার কেজি এমএসইওয়াল প্যানেল ফর্ম ওয়ার্ক, ৬টি ইলেকট্রিক হ্যামার, ৪টি ওয়েল্ডিং মেশিন, ২টি রোডকাটিং মেশিন, ৩৬০ মিটার ফেন্সিং ও প্লাস্টিক ট্রাফিক ব্যারিয়ার, ৭টি স্টেশনে জেনারেটর, পানির লাইন ও ইউলিটি সংযোগ এবং একটি প্রকল্প সাইট অফিসের ক্ষতি সাধন হয়েছে। এতে ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৩০ কোটি টাকা। 

উত্তরা থেকে গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত নাশকতায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া বিআরটি প্রকল্পের নির্মাণাধীন স্টেশনসহ বিভিন্ন স্থাপনা পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সাথে প্রকল্পের ক্ষয়-ক্ষতির বিষয়ে ব্রিফিং করেন ঢাকা বিআরটি কোম্পানি লিমিটেডের এমডি ড. মো. মনিরুজ্জামান। তিনি জানান, প্রাথমিক হিসেবে প্রকল্পের প্রায় ৫০-৬০ কোটি টাকার মতো ক্ষতি হয়েছে। ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে। 

টঙ্গীতে ডেসকোর কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে সাতটি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ, উপ-কেন্দ্রের অফিস ভবন, ১০টি কম্পিউটার, ৭টি প্রিন্টার, এসি কমপ্রেসারসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র ও সামগ্রী ব্যাপক ভাঙচুর করে তিন কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি করা হয়েছে। হামলাকারীরা টঙ্গীর বেক্সিমকো ফার্মা’র ভিতরে ৪টি গাড়ি পুড়িয়েছে। তারা ৬টি সিসি ক্যামেরা, ৬টি কাভার্ডভ্যান, ২টি মাইক্রোবাস ভাঙচুর ও বিল্ডিংয়ের ক্ষতিসহ মোট ৩ কোটি টাকার ক্ষতি সাধন করেছে। 

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের গাজীপুরা, বোর্ড বাজার, গাছা, কোনাবাড়ি ও চান্দনা চৌরাস্তা ৫টি পুলিশ বক্সে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করা হয়েছে। ভেঙে ফেলা হয়েছে এপিসি গ্লাস। এতে ৩৫ লাখ টাকার ক্ষতি সাধিত হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। এছাড়াও টঙ্গী পশ্চিম থানায় ইটপাটকেলে ছুড়ে ভাঙচুর করা হয়েছে। 

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মাহবুব আলম জানান, দুর্বৃত্তরা পরিকল্পিতভাবে হামলা করেছে থানা ও পুলিশ বক্সে। সিসিটিভি ফুটেজ দেখে তাদের সনাক্ত করা হচ্ছে। সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে। 

এছাড়া গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ১৯টি গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ভাঙচুর করা হয়েছে আরও ১৩টি যানবাহন। এরমধ্যে জীপ ৩টি, পিকআপ ৫টি, ড্রাম ট্রাক ১৮টি, কমপোক্তর ১টি, মোবাইল কোর্ট গাড়ি ১টি, বিদ্যুৎ এর গাড়ি ২টি, হুইল লোডার ১টি, টেম্পো ১টি রয়েছে। তারা সিটির জোন-১ এর ভবনের দরজা, জানালা ভাঙচুর এবং নীচতলার ৩টি কক্ষ পুড়িয়ে দেয়। আঞ্চলিক কার্যালয় জোন- ৩ এর ভবনের দরজা-জানালাও ভাঙচুর করা হয়। 

গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এএসএম সফিউল আজম জানান, আন্দোলনে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ব্যাপক ক্ষতিসাধন হয়েছে। অনেক যানবাহন পুড়িয়ে দিয়েছে। এতে অনেক কাজ ব্যাহত হচ্ছে। 

গাজীপুরের জেলা প্রশাসক আবুল ফাতে মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম বলেন, আমাদের হিসেবে ৬টি প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনায় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ৫০ কোটি ৫৮ লাখ টাকার ক্ষতি নিরূপণ করা হয়েছে। তবে এই ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে।

রেজাউল/ইমন


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়