পর্যটক শূন্য বান্দরবান, হতাশ ব্যবসায়ীরা
চাইমং মারমা, বান্দরবান || রাইজিংবিডি.কম
পাহাড়কন্যা খ্যাত জেলা বান্দরবান। এই জেলা বছরজুড়ে ভ্রমণ পিপাসুদের পদচারণায় মুখর থাকে। সরকারি বিশেষ ছুটির দিনে এই সংখ্যা বাড়ে কয়েকগুণ। ফলে আগত পর্যটকদের সেবায় গড়ে উঠেছে হোটেল, মোটেল ও রিসোর্ট। সম্প্রতি দেশব্যাপী কোটা সংস্কার আন্দোলনের নামে দুষ্কৃতকারীদের নজিরবিহীন তাণ্ডব এবং কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের কারণে পর্যটক শূন্য হয়ে পড়েছে জেলার সবকটি পর্যটন স্পট। পর্যটক না থাকায় তাই হতাশ এ সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।
শনিবার (২৬ জুলাই) বান্দরবানে নীলাচল ও মেঘলা পর্যটন কেন্দ্র গিয়ে ২০-২৫ জন পর্যটক দেখা গেছে। এসময় দুটি পর্যটন কেন্দ্রে নিয়োজিত কর্মচারীদের অলস সময় অতিবাহিত করতে দেখা গেছে।
নীলাচল পর্যটন কেন্দ্রের টিকিট কাউন্টারে দায়িত্বে থাকা সুমি ত্রিপুরা বলেন, ‘আজ সারাদিনে খুব অল্প সংখ্যক টিকিট বিক্রি করেছি। আধঘণ্টা, এক ঘণ্টা পরপর ৫-১০ জন করে আসছেন। যারা বেড়াতে আসছেন তারা স্থানীয় মানুষ।’
পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, গত বছর সেপ্টেম্বর থেকে জেলার দুর্গম এলাকাগুলোতে সশস্ত্র সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) তৎপরতা বৃদ্ধি পেয়েছে। গত বছরের ১৭ অক্টোবর রুমা-রোয়াংছড়িতে পর্যটক ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে স্থানীয় প্রশাসন। এই নিষেধাজ্ঞা কয়েক দফায় বাড়িয়ে রুমা-রোয়াংছড়ি, আলীকদম ও থানচি উপজেলাতেও নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। পরে সব উপজেলায় নিষেধাজ্ঞা শিথিল করে সন্ত্রাস দমনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সদস্যরা যৌথ অভিযান শুরু করে।
যেসব এলাকায় যৌথ অভিযান চলে সেসব এলাকায় নিরাপত্তার স্বার্থে পর্যটক ভ্রমণে নিরুৎসাহিত করা হয়। এরপর থেকে আতঙ্কিত হয়ে বান্দরবান ভ্রমণে বিমুখ হচ্ছেন পর্যটকরা। ফলে আশানুরূপ পর্যটক ভ্রমণে না আসায় জেলার পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা প্রতিনিয়ত ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন।
হোটেল গার্ডেন সিটির মালিক মো. জাফর উল্লাহ বলেন, ‘বান্দরবানে পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের সবাই ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। করোনা মহামারির কারণে দুই বছর, এরপরে ভয়াবহ বন্যা, তারপর শুরু হয় কেএনএফের তৎপরতা। এসব কারণে বর্তমানে প্রায় পর্যটকশূন্য থাকছে বান্দরবান।’
হোটেল হিলভিউর ব্যবস্থাপক তৌহিদ পারভেজ জানান, দীর্ঘদিন ধরে বান্দরবানে বিভিন্ন ও সম্প্রতি রাজনৈতিক সমস্যার কারণে জেলার পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা চরম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। বর্তমানে তাদের হোটেলে একজন পর্যটক নেই বলেও জানান তিনি।
বান্দরবান হোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘বর্ষাকাল বান্দরবানে পর্যটন ব্যবসায়ীদের একটি মৌসুম। বর্ষায় ঝিরি ঝর্ণায় ও মেঘের অপরূপ দৃশ্য দেখতে পরিবার নিয়ে ভ্রমণে আসেন অনেকেই। দীর্ঘদিন ধরে কেএনএফ ও চলমান রাজনৈতিক সমস্যার কারণে একেবারে পর্যটকশূন্য হয়ে পড়েছে বান্দরবান জেলা। এতে এই পেশায় জড়িত জেলার প্রায় ১২ হাজারেরও বেশি মানুষ অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।’
বান্দরবান জিপ-মাইক্রোবাস মালিক সমিতির সভাপতি নাছিরুল আলম বলেন, ‘জেলা সদরে পর্যটক পরিবহনের জন্য চারশোর বেশি চাঁদের গাড়ি রয়েছে। পর্যটক না থাকায় অলস সময় পার করছেন সবাই। এই পেশায় জড়িত মালিক ও চালকসহ প্রায় ১ হাজারের বেশি মানুষ বেকার হয়ে পড়েছেন।’
বান্দরবানের জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন বলেন, ‘বান্দরবানের সার্বিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। পর্যটকরা চাইলে বান্দরবানের অধিকাংশ পর্যটন কেন্দ্র ঘুরে দেখতে পারবেন।’
বান্দরবান ট্যুরিস্ট পুলিশের পরিদর্শক (ওসি) মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘সারাদেশে চলমান কোটা আন্দোলনের কারণে বান্দরবানে পর্যটকরা ভ্রমণে সেভাবে আসছে না। এছাড়া হেডকোয়ার্টার থেকেও সেভাবে নির্দেশনা দেওয়া নেই। বান্দরবানে পর্যটক আসাতে শুরু করলে নিরাপত্তার বিষয়টি জোরদার করা হবে।’
মাসুদ