ঢাকা     শনিবার   ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||  আশ্বিন ৬ ১৪৩১

পিরোজপুরের কাঠের তৈরি নৌকা প্রথমবারের মতো যাচ্ছে জার্মানিতে

মুহাম্মাদ তাওহিদুল ইসলাম, পিরোজপুর  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:৪৮, ২৮ জুলাই ২০২৪   আপডেট: ১৪:৪৯, ২৮ জুলাই ২০২৪
পিরোজপুরের কাঠের তৈরি নৌকা প্রথমবারের মতো যাচ্ছে জার্মানিতে

পিরোজপুর নেছারাবাদের আটঘর-কুড়িয়ানার কাঠের তৈরি নৌকা প্রথমবারের মতো যাবে জার্মানিতে। সবকিছু ঠিক থাকলে চলতি বছরের আগস্টে হস্তান্তর করা হবে এই নৌকা। প্রাথমিকভাবে ২০টি নৌকা অর্ডার হলেও প্রথম পর্যায়ে যাবে ১০টি নৌকা। 

নেছারাবাদ ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি রাকিব হোসেন এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। 

তিনি জানান, পিরোজপুর নেছারাবাদের আটঘর-কুড়িয়ানা কাঠের তৈরি নৌকার জন্য বিখ্যাত। শত বছরের ঐতিহ্যবাহী ভাসমান নৌকার হাটকে কেন্দ্র করে দেশি-বিদেশি অনেক পর্যটক আসেন এই হাটে।

রাকিব হোসেন বলেন, প্রায় দুই মাস আগে জার্মানির এক নাগরিক ঘুরে দেখতে এসেছিলেন আমাদের এলাকা। ওই জার্মান নাগরিক আটঘর-কুড়িয়ানা ইউনিয়নের আটঘর বাজার সংলগ্ন নৌকার মিস্ত্রি আজিজুল হকের তৈরি নৌকা দেখে পছন্দ করেন। তার কাছ থেকে নৌকা তৈরি করে জার্মানিতে নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেন। আর তাই তাকে নৌকা তৈরির অর্ডার দেন ওই জার্মান নাগরিক।  

নৌকা মিস্ত্রি আজিজুল বলেন, আমি দীর্ঘ ত্রিশ বছর ধরে নৌকা তৈরি করি আসছি। সাধারণত ডিঙি ও টালাই নৌকা বানাতাম। কয়েকদিন আগে জার্মানির এক লোক এসে ২০টি নৌকার অর্ডার দেন। এটিই আমার প্রথম বিদেশি অর্ডার। এর আগে আমাদের এলাকার কেউ নৌকা তৈরির বিদেশি অর্ডার পায়নি। প্রতিটি নৌকা তৈরিতে ১০ হাজার টাকা চুক্তি হয়েছে। তিনি বায়না বাবদ অগ্রিম ২৪ হাজার টাকা দিয়ে গেছেন। মেহগনি গাছ দিয়ে তাদের দেখানো ডিজাইন অনুসারে তৈরি করছি। প্রথমে ১০টি নৌকা যাবে। এরপরে ভিন্ন ডিজাইনের আরও ১০টি নৌকা বানাতে হবে। 

তিনি আরও বলেন, জার্মানের সেই নাগরিকের সঙ্গে বরিশালের মোহাম্মদ জুবান আহমেদ নামে এক স্যার আসছিলেন। তিনি প্রতি সপ্তাহে একবার এসে কাজের অগ্রগতি দেখে যান। জার্মান নাগরিক যা বুঝিয়েছেন এই নৌকা নিয়ে সেখানকার মার্কেটে দেখাবেন। বাজারে চললে তিনি আরও নৌকা তৈরি করে নেবেন। নৌকাগুলো ওখানকার কোনো নদী বা খালে চলবে না। এসব দিয়ে বসার জন্য সৌখিন আসন বানাবেন।

জার্মান নাগরিকের পক্ষে মোহাম্মদ জুবান মোবাইল ফোনে জানান,  এখন কাজ চলমান পর্যায়ে। এজন্য আমরা বিস্তারিত জানাতে চাচ্ছি না। তবে সবগুলো নৌকা পুরোপুরি তৈরি হলে হস্তান্তরের আগে বিস্তারিত জানাব। 

আটঘর বাজারের ব্যবসায়ী শফিক মোল্লা বলেন, জার্মানির ওই পর্যটক যেদিন এসেছিলেন আমরা সকলেই ছিলাম। তিনি নৌকা দেখে পছন্দ করেছেন এবং তার ডিজাইন দেখিয়ে গেছেন। সে অনুসারে আমাদের বাজারের মিস্ত্রি আজিজুল হক কাজ করছেন। কয়েকটি তৈরিও করেছেন। বাকি যেগুলো আছে সেগুলো তৈরির কাঠামো দাঁড় করিয়েছেন।

ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিঠুন হালদার বলেন, আমাদের এলাকার পেয়ারা, আমড়া ও নৌকা তৈরি করার জন্য বিখ্যাত হলেও এই প্রথম এলাকার তৈরি নৌকা বিদেশে যাচ্ছে- এটি আমাদের জন্য গৌরবের এবং সুনামের। এতে করে বাংলাদেশের পণ্যের বিশ্ববাজার যেমন তৈরি হবে, তেমনি অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির সম্ভাবনার দুয়ার খুলবে। 

নেছারাবাদ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান বলেন, নেছারাবাদ উপজেলা বিভিন্ন কারণে সারাদেশেই সমাদৃত। বিশেষ করে আটঘরের নৌকার হাট খুব বিখ্যাত। সেখান থেকে জার্মানিতে নৌকা যাচ্ছে সংবাদটি অত্যান্ত আনন্দের। এতে করে বাংলাদেশের পন্যের বিশ্ববাজার যেমন তৈরি হবে তেমনি অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির দুয়ার খুলবে।

আমি ওই কারিগরের সাথে কথা বলবো। তার যেকোনো সহায়তার প্রয়োজন হলে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে করা হবে। আমি ব্যক্তিগতভাবে চাই, আমাদের ঐতিহ্যবাহী নৌকা যে বিশ্বমানের হতে পারে তা এভাবে দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশে বাজার তৈরি করুক।

/টিপু/


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়