ঢাকা     শনিবার   ১১ জানুয়ারি ২০২৫ ||  পৌষ ২৮ ১৪৩১

যৌতুক না পেয়ে গর্ভের সন্তানকে হত্যার অভিযোগ 

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:০২, ৩০ জুলাই ২০২৪  
যৌতুক না পেয়ে গর্ভের সন্তানকে হত্যার অভিযোগ 

অভিযুক্ত ইমরান আলী

যৌতুকের টাকা না পেয়ে গর্ভের সন্তানকে হত্যার পর স্ত্রীকে তালাকের নোটিস পাঠানোর অভিযোগ উঠেছে ইমরান আলী (২৭) নামে স্বামীর বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় স্বামী, শ্বশুর-শাশুড়িসহ ছয় জনের বিরুদ্ধে গত ১৪ জুলাই লালমনিরহাটের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলি আদালতে মামলা করেছেন ভুক্তোভোগী রিতু আক্তার। মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে রিতু আক্তার নিজেই একথা জানান।   

রিতু আক্তার জানান, দাবি করা ১০ লাখ টাকা না পাওয়ার ক্ষোভে মা-বাবা ও বোন-ভগ্নিপতির যোগসাজশে বিয়ের ছয় মাস পূর্ণ হওয়ার আগেই তার গর্ভের সন্তানকে হত্যা করেন স্বামী ইমরান আলী। পাশাপাশি তাকে তালাকের নোটিস দেওয়া হয়েছে। 

রিতু আক্তারের করা মামলার অন্য আসামিরা হলেন- ইমরান আলীর বাবা ও ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার খোচাবাড়ি কিসমত দৌলতপুর গ্রামের ইউসুফ আলী (৬০), তার স্ত্রী গুলবাহার বেগম (৫৫), ইউসুফ আলীর বড় মেয়ে শ্যামা বেগম ( ৩৬) ছোট মেয়ে সাথী বেগম (৩২) ও দুই জামাতা মেকলেছুর রহমান ও আবু ছালাম।

আরো পড়ুন:

মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ১৬ নভেম্বর  ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার কিসমত দৌলতপুর গ্রামের ইউসুফ আলীর ছেলে ইমরান আলীর সঙ্গে লালমনিরহাটের হাতিবান্ধা থানার পশ্চিম বেজগ্রাম এলাকার আমিনুর রহমানের মেয়ে রিতু আক্তারের বিয়ে হয়। সেসময় মেয়েকে ৩ লাখ টাকার স্বর্ণের গহনা ও জামাইকে আড়াই লাখ টাকা দামের একটি মোটরসাইকেল দেন রিতু আক্তারের পরিবার। চাকরির কারণে বিয়ের কয়েক মাস পর স্বামী-স্ত্রী রংপুর মহানগর দেওডোবা ডাঙ্গী এলাকার ভাড়া বাসায় ওঠেন। সে সময় রিতু আক্তার অন্তঃসত্ত্বা হন। একপর্যায়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া শুরু হয়। পরবর্তীতে ইমরান রিতু আক্তারের কাছে ১০ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করেন। টাকা না পেলে গর্ভের সন্তান নষ্ট এবং তাকে তালাক দিবেন বলে হুমকি দেন। এরপর থেকেই শুরু হয় নির্যাতন।

চলতি বছরের ৪ এপ্রিল দোকান থেকে এমএম কীট নামে ৫টি ট্যাবলেট জোর করে রিতু আক্তারকে খাইয়ে মুখ চেপে ধরেন ইমরান আলী। প্রচণ্ড পেটে ব্যাথা ও রক্তপাতের কারণে রিতু আক্তারের গর্ভপাত ঘটে। পরদিন ১০ লাখ টাকা যৌতুকের জন্য স্ত্রী রিতু আক্তারকে বাবার বাড়ি লালমনিরহাটে পাঠিয়ে দেন ইমরান আলী। ১০ লাখ টাকা ছাড়া সংসার করবেন না বলেও জানান ইমরান আলী। 

রিতু আক্তার বলেন, ‘আমরা দুই জনই প্রেম করে বিয়ে করেছি। তার পরিবার বিয়ে মেনে না নেওয়ায় আমি বাবার বাড়িতে থাকি। দুই জনই শিক্ষিত হওয়ায় দাম্পত্য বিষয় নিয়ে শঙ্কা ছিল না। পরে রংপুরে ভাড়া বাসায় উঠি। সংসারে যাবতীয় আসবাপত্র আমার বাবা কিনে দেন। ভালোই চলছিলো আমাদের সংসার। একদিন ১০ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে সে। আমি এতো টাকা বাবার কাছে থেকে আনতে পারবো না বলে জানাই। সে আমাকে মারধর করে এবং গর্ভের সন্তানকে হত্যা করে। পরে আমার সঙ্গে সংসার করবে না বলে ডিভোর্স (তালাক) নোটিস পাঠায়।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘আমি অনেকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেছি স্বামীর সঙ্গে। তার একটাই কথা ১০ লাখ টাকা ছাড়া সে সংসার করবে না।’

রিতু আক্তার বলেন, ‘আমি উপায় না পেয়ে আদালতের আশ্রয় নিয়েছি। আদালতের কাছে আমার অনাগত সন্তানকে হত্যা এবং আমার সাথে ঘটে যাওয়া সব অন্যায়ের বিচার চেয়েছি।’

অভিযুক্ত ইমরান আলী ও তার বাবা ইউসুফ আলীসহ অন্য আসামিদের সঙ্গে এ বিষয়ে জানতে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তারা মন্তব্য করতে রাজি হননি।

হাতীবান্ধা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আদালতে একটি মামালা করেছেন রিতু আক্তার। মামলাটির তদন্ত চলছে। সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে আসামিদের আইনের আওয়াতায় আনা হবে।’

মঈনুদ্দীন/মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়