রাস্তার ল্যাম্প পোস্টের আলোয় ক্লাস
তারিকুল ইসলাম, শেরপুর || রাইজিংবিডি.কম
সন্ধ্যা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত চলে রাতের পড়াশোনা। এর মধ্যে অন্তত দুই বার লোডশেডিং হয়। সিলিং বিহীন টিনের চাল ও বেড়ার মাদ্রাসায় বিদ্যুত চলে গেলে গরমে টেকা দায় শতাধিক শিক্ষার্থীর। ক্লাস বন্ধ করে দিলে পড়াশোনার ক্ষতি হয়। বিকল্প আলোর ব্যবস্থা না থাকায় প্রচণ্ড গরমে অগত্যা শতাধিক শিক্ষার্থীর রাতের পড়াশোনা চলে মাঠের পাশে সোলার লাইটে। শিক্ষার্থীদের গোল করে বসিয়ে সেখানে চলে তালিম দেওয়া।
শিক্ষকরা জানান, রাস্তার পাশে মাদ্রাসা হওয়ায় বিদ্যুৎ যাওয়ার পর বাচ্চারা মাঠের পাশে প্রধান সড়কে চলে যায়। ফলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ে এবং ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুৎ না থাকায় পড়াশোনার ব্যাঘাত ঘটে। তাই বাধ্য হয়ে সপ্তাহের প্রায় অধিকাংশ দিনে ল্যাম্প পোস্টের কম আলোতে রাতের ক্লাস চালাতে হয়।
এ ঘটনা দেখা যায় শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার কুড়িকাহনিয়া মদিনাতুল উলুম হাফেজিয়া, কওমী মাদ্রাসায়। এ আলোতে সকলকে একসঙ্গে বসানো সম্ভব না হওয়ায় শুধু বড়দের বসানো হয়।
মাদ্রাসা হেফজ বিভাগের শিক্ষার্থী মো. হুমায়ুন বলেন, ‘অনেক মানুষ একসঙ্গে থাকলে এমনিতে গরম বেশি লাগে। এ গরমে প্রতিদিন রাতে দুই থেকে তিন বার বিদ্যুৎ চলে যায়। আমাদের মুখস্ত করার পড়াশোনা। ক্লাস বন্ধ থাকলে সমস্যা হয়। নিয়ম করে পড়তে না বসলে পড়া মুখস্ত হয় না।’
মাদ্রাসার শিক্ষক হাফেজ শহিদুল ইসলাম শাহীন বলেন, ‘বাচ্চারা যেন ছোটাছুটি করতে না পারে এর জন্য আমরা চারপাশে শিক্ষকরা বসে থাকি। এভাবে পড়াশোনা করানো কষ্টদায়ক। ঘনঘন বিদ্যুৎ চলে যায়। বিদ্যুৎ যাওয়ার পর টিনের ঘর আগুনের মতো হয়ে যায়। ফ্যান চলে না। লাইট জ্বলে না। তাই গরমে ছেলেদের খোলা মাঠে পাঠদান করাচ্ছি।’
মাদ্রাসার মোহতামিম মাওলানা মুফতি মো. গোলাম রব্বানী বলেন, ‘আমাদের মাদ্রাসায় ৩০০ ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে। তার মধ্যে শতাধিক শিক্ষার্থী আবাসিক। রাতে বিদ্যুৎ চলে গেলে ঘরে বিকল্প লাইট ও ফ্যানের ব্যবস্থা নেই, তাই ছাত্রদের পড়াশোনার স্বার্থে মাঠের মাঝখানে ল্যাম্পপোস্টের আলোয় পাঠদান করাচ্ছি।’
শ্রীবরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ জাবের আহমেদ বলেন, বাচ্চাদের ল্যাম্পপোস্টের নিচে পড়াশোনা করা আসলে দুঃখজনক। মাদ্রাসার প্রধানকে শ্রেণীকক্ষগুলোর জন্য আইপিএসের জন্য আবেদন দেয়ার কথা বলেন তিনি। প্রয়োজনীয় যাচাই শেষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও আশ্বস্ত করেন।
তারিকুল/বকুল