ছাত্রলীগ নেতাকে হত্যাচেষ্টা মামলা
৮ মাসের গর্ভবতী নারীকে আসামি করার অভিযোগ
তারেকুর রহমান, কক্সবাজার || রাইজিংবিডি.কম
নওশাবা সিয়াম
কক্সবাজারে কোটা সংস্কার দাবির আন্দোলনে এক ছাত্রলীগ নেতাকে হত্যাচেষ্টার মামলায় ৮ মাসের অন্তঃসত্ত্বা এক নারীকে আসামি করার অভিযোগ উঠেছে। ঘটনার ১২ দিন আগে থেকে ওই নারী ঢাকায় শ্বশুরবাড়িতে অবস্থান করছেন বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগী।
এছাড়া ঘটনার দিন মিরপুর-১ মাতৃসদন থেকে টিকা গ্রহণ করেছেন বলেও জানান ওই নারী। তিনি গত ৪ জুলাই কক্সবাজার থেকে ট্রেনযোগে ঢাকায় যাত্রার টিকিটসহ মিরপুর-১ মাতৃসদনের ইপিআই টিকাদান কার্ড দেখিয়ে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন।
গত ২৪ জুলাই (বুধবার) রাতে কক্সবাজার সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের আহ্বায়ক রাজিবুল ইসলাম মোস্তাক বাদী হয়ে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় এই মামলা করেন। মামলার এজাহারে ঢাকায় অবস্থানরত নওশাবা সিয়াম নামে ৮ মাসের অন্তঃসত্ত্বা ওই নারীকে ৯৬ নম্বর আসামি করা হয়েছে। এ নিয়ে আসামি ও তার পরিবারের সদস্যরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
এর আগে গত ১৬ জুলাই বিকেল সাড়ে ৫টায় কক্সবাজার শহরের লালদিঘী পাড়ায় জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের সামনে হত্যার উদ্দেশ্যে রাজিবুল ইসলাম মোস্তাককে ধারালো মারধর করা হয়। এ ঘটনায় মামলা হয়।
নওশাবা সিয়াম কক্সবাজার সদর উপজেলার পিএমখালী এলাকার মুক্তার আহমেদের মেয়ে। তার নানা আব্দুল হক সিকদার একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা বলে তিনি দাবি করেন।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, নওশাবা স্বামী রফিকুল ইসলামকে নিয়ে ঢাকার মিরপুরে থাকেন। তাদের ঘরে ৩ বছরের একটি মেয়েও আছে। বর্তমানে তিনি ৮ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। নাওশাবা সিয়াম মিরপুর পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের গাইনী অ্যান্ড অবস, ইনফার্টিলিটি বিশেষজ্ঞ এবং ল্যাপারোস্কপি সার্জন সহকারী অধ্যাপক ডাক্তার টি. এইচ. জোহরা মুনমুনের থেকে ৪ মাস ধরে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
এ ঘটনায় নওশাবা সিয়াম রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘গত ৪ জুলাই আমি কক্সবাজার থেকে ট্রেনযোগে ঢাকা রওনা দেই। ৫ জুলাই থেকে ঢাকায় অবস্থান করছি। আমি ৮ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। আমার গ্রামের বাড়ি (কক্সবাজার) থেকে খবর আসে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন চলাকালে কক্সবাজার আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে এক ছাত্রলীগ নেতাকে হত্যাচেষ্টার মামলায় আমাকে ৯৬ নম্বর আসামি করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ঘটনার ১২ দিন আগে থেকে আমি ঢাকায় আছি। ট্রেনের টিকিট আছে। এরপর থেকে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছি। তারিখসহ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়েছি এমন প্রেসক্রিপশনও আছে। মামলায় উল্লেখিত ঘটনার দিন আমি মিরপুর-১ মাতৃসদন থেকে টিকা নিয়েছি তার তারিখ সম্বলিত কার্ডও আছে। আমার ট্রেনের টিকিট, মোবাইল নম্বরের লোকেশন ও সিডিআর চেক করলে পুলিশ সঠিক বিষয়টি জানতে পারবে এবং আমার ডাক্তারের রিপোর্টও দেখতে পারবে। একজন নির্দোষ গর্ভবতী নারীকে কেন মিথ্যা মামলায় জড়ানো হয়েছে সে চিন্তায় আমি দিন দিন অসুস্থ হয়ে যাচ্ছি। আমি এমন মিথ্যা মামলা থেকে মুক্তি চাই, আমি বাঁচতে চাই।’
এ ঘটনায় মামলার বাদী রাজিবুল ইসলাম মোস্তাক রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘ঘটনায় উপস্থিত না থেকেও ইন্ধনের কারণে অনেক কিছু হয়ে যেতে পারে। এই আসামির ফেসবুক প্রোফাইল ঘুরে আসলে বুঝা যাবে তিনি কেমন প্রকৃতির। বিভিন্ন উস্কানি ও সরকারবিরোধী পোস্টে ভরা তার ফেসবুক প্রোফাইল।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই আসামি মুক্তিযোদ্ধার নাতি বলে দাবি করছেন। যদি মুক্তিযোদ্ধার নাতি হয়ে থাকে তবে কেন তিনি কোটাবিরোধী আন্দোলনকে সমর্থন করলো? তার অনলাইন ও মোবাইলে ইন্ধন, অপপ্রচারসহ সরকারবিরোধী ও উস্কানিমূলক ফেসবুক পোস্ট দেখলে বুঝা যাবে তাকে কেন আসামি করা হয়েছে।’
কক্সবাজার সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রকিবুজ্জামান বলেন, ছাত্রলীগ নেতা বাদী হয়ে এজাহার দিয়েছেন। সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র দেখে এজাহারের সব কলাম পূরণ পূর্বক এজাহার গ্রহণ করেছি। অনেক আসামির পরিচয় সম্পর্কে আমরা অবগত নই। সুষ্ঠু তদন্ত করে চার্জশিট দেওয়া হবে।
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. মাহফুজুল ইসলাম বলেন, কক্সবাজার শহরে সহিংসতার ঘটনায় কোনো নিরপরাধ ব্যক্তি যেনো হয়রানি না হয় সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এছাড়া ঘটনায় জড়িত প্রকৃত অপরাধীদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।
কোটা আন্দোলনের শুরুতে কক্সবাজারের সার্বিক পরিস্থিতি শান্ত ও স্বাভাবিক ছিলো। ১৬ জুলাই বেলা ১১টার দিকে মিছিল করে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম সড়কের লিংকরোড এলাকায় অবস্থান নেয় কক্সবাজার পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা। এরপর থেকে পর্যটন শহরে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়। আন্দোলনকে কেন্দ্র করে কক্সবাজারের বিভিন্ন জায়গায় হামলা, ভাঙচুর ও ছাত্রলীগের ৪ নেতাদের মারধরের ঘটনায় এ পর্যন্ত সাতটি মামলায় মোট ৬৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
/ইমন/