ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||  আশ্বিন ৪ ১৪৩১

কক্সবাজারের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে, তবে দূরপাল্লার বাস চলেনি 

তারেকুর রহমান, কক্সবাজার || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:২০, ৭ আগস্ট ২০২৪   আপডেট: ১৮:২৩, ৭ আগস্ট ২০২৪
কক্সবাজারের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে, তবে দূরপাল্লার বাস চলেনি 

শিক্ষার্থীরা কক্সবাজার শহরে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করেন

শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর থেকে অস্থিরতা ও উত্তেজনার পর আজ বুধবার (৭ আগস্ট) সকাল থেকে কক্সবাজারের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। তবে দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। 

সোমবার (৫ আগস্ট) দুপুরে ছাত্র-জনতার বিক্ষোভের মুখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেন। পরে তিনি সামরিক বাহিনীর একটি হেলিকপ্টারে ভারতে চলে যান।    

সরেজমিন দেখা যায়, কক্সবাজারের প্রধান সড়ক, বিমানবন্দর সড়ক, খুরুশকুল সড়ক, লিংরোডের কক্সবাজার-টেকনাফ আরাকান সড়কসহ শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে গণপরিবহন দেখা গিয়েছে। ব্যবসায়ীরাও ধীরে ধীরে নিজেদের দোকানপাট খুলছে। রাস্তায় ব্যাটারিচালিত অনেক রিকশাও দেখা গেছে। তবে কোনো ট্রাফিক পুলিশের দেখা মেলেনি৷ ছাত্ররা ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের কাজ করছে। 

শহরের বেশিরভাগ দোকান খোলা দেখা গেছে। লোকজন প্রয়োজনীয় কেনাকাটা করছেন। 

বাজারঘাটা ঊর্মি ট্রেডার্সের মালিক এহসান উল্লাহ বলেন, ‘বেশ কয়েকদিন পর দোকান খুলেছি। তবে আগের মতো ক্রেতা নেই। রাস্তায় তুলনামূলক যানবাহনও কম। আশা করি, আস্তে আস্তে সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে আসবে।  

এন্ডারসন রোডের ইসাত ব্রাদার্সের ম্যানেজার সাজিদুল ইসলাম বলেন, ‘অবস্থা একটু ভালো মনে হওয়ায় দোকান খুলেছি। ক্রেতা কম। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আবারও আগের মতো ব্যবসা জমবে।’ 

টার্মিনাল এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, মিনিবাসসহ শহরের অভ্যন্তরীণ সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ইজিবাইক (টমটম),  রিকশা, মাহিন্দ্রসহ ক্ষুদ্র যানবাহনগুলো চলাচল করলেও দূরপাল্লার বাস চলছে না। বিভিন্ন কোম্পানির বাস সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ানো রয়েছে। কয়েকটি মাত্র কাউন্টার ছাড়া বেশিরভাগ বন্ধ।

স্বাধীন ট্রাভেল কাউন্টার ইনচার্জ কামাল উদ্দিন বলেন, ‘যাত্রী না থাকায় স্বাধীন ট্রাভেলের দূরপাল্লার কোনো বাস কক্সবাজার ছেড়ে যায়নি। আমাদের আশপাশের কোনো বাসও ছাড়তে দেখিনি। তবে জেলার অভ্যন্তরে মিনিবাসগুলো চলাচল করছে।’  

তিনি আরও বলেন, দূরপাল্লার বাস চলাচলে কোনো বাধা নেই। শুধু যাত্রী নেই বলে বাসগুলো ছাড়ছে না।  

এদিকে, কক্সবাজার সদর, রামু ও ঈদগাঁও থানায় পুলিশ নেই। জেলা প্রশাসক কার্যালয়সহ গুরুত্বপূর্ণ সরকারি কার্যালয়ে কর্মকর্তা নেই। হাসপাতাল, পৌরসভাসহ সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানে পর্যাপ্ত সেবাদানকারী কর্মকর্তা-কর্মচারী নেই। কক্সবাজার সদর থানায় জব্দ করা শত শত মোটরসাইকেল দুর্বৃত্তরা নিয়ে গেছে। 

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী না থাকায় কক্সবাজার হোটেল-মোটেল জোনে চাঁদাবাজি, দখলবাজি ও দুর্বৃত্তায়ন কর্মকাণ্ড চলছে বলে একাধিক ব্যবসায়ী অভিযোগ করেছেন। কলাতলীর হোটেল ব্যবসায়ী গোলাম আজম বলেন, কিছু চাঁদাবাজ হঠাৎ হোটেলে হামলা করে টাকা-পয়সা লুট করে নিয়ে যায়।

রেস্তোঁরা ব্যবসায়ী মাসুদ আলম বলেন, লাখ লাখ টাকা খরচ করে সৌন্দর্যবর্ধন করা রেস্তোঁরা কয়েক মিনিটের মধ্যে জ্বালিয়ে দিল দুর্বৃত্তরা। আবাসিক হোটেল দখলে নেমে পড়েছে তারা। 

এ ব্যাপারে জেলার রাজনীতিবিদ ও সুশীল সমাজের দাবি এভাবে একটি দেশ চলতে পারে না। দ্রুত অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করে রাষ্ট্রীয় কাঠামোতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা প্রয়োজন। অন্যথায় ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। 

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যূথানের ফলে ১৬ বছরের আওয়ামী লীগের শাসনামলের শেষ হয়েছে। ৫ আগস্ট বাংলাদেশের ইতিহাসে নজিরবিহীন গণঅভ্যূথানের আনন্দ উপভোগ করতে গিয়ে সর্বস্তরের মানুষ রাস্তায় নেমে আনন্দ উল্লাস করে। এ ফাঁকে সরকারি সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি করেছে। 

সোমবার (৫ আগস্ট) বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ব্যাপক লুটপাট চালানো হয় কক্সবাজার সদর মডেল থানায়। আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয় ট্রাফিক পুলিশের অফিস। ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয় কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের অফিসে। প্রত্যক্ষদর্শী এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা কর্মচারীরা জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ডের দুটি গাড়ি সম্পূর্ণ জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। গ্যারেজে থাকা গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। অফিসের দরজা জানালাসহ সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্রে আগুনে পোড়ানো হয়। এছাড়া কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অফিস, জেলা মৎস্য অফিস, এলজিইডি অফিস, মুক্তিযুদ্ধ সংসদ কার্যালয়সহ অনেক স্থাপনা ভাঙচুর করা হয়। 

জেলা বিএনপি নেতা রাশেদ মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘বিজয় উল্লাসের সুযোগে রাষ্ট্রীয় সম্পদের ক্ষতি করা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। আমি ৫ আগস্ট রাত ৩টা পর্যন্ত সদর থানা পাহারা দিয়েছি। থানায় গিয়ে দেখেছি সেখানে কিছু যুবক লুটপাট চালাচ্ছে। এরা কেউ ছাত্র বা রাজনৈতিক কর্মী নয়।’ দ্রুত সরকার গঠন করে আবারও সব কিছু স্বাভাবিক অবস্থায় নিয়ে আনা জরুরি বলে জানান তিনি। 

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এর কক্সবাজার জেলা কমিটির সভাপতি অধ্যাপক অজিত দাশ বলেন, সবখানে অরাজক অবস্থা বিরাজ করছে। থানায় পুলিশ নেই, কোনো আইনশৃংখলা বাহিনী বা নিয়ন্ত্রণকারী নেই। এমন পরিস্থিতিতে কক্সবাজারে ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। এ অবস্থার দ্রুত অবসান হতে হবে। দ্রুত সরকার রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব নিয়ে পরিস্থিতির উন্নতি করা দরকার বলে মনে করেন তিনি।

/বকুল/

সম্পর্কিত বিষয়:


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়