পাবনায় রাত জেগে মন্দির-দোকান পাহারা
পাবনা প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর সারাদেশে বিভিন্ন স্থানে বেড়েছে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও ডাকাতির ঘটনা। বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অপচেষ্টা করছে একটি চক্র। সাস্প্রদায়িকতা উসকে দেওয়ার নানা গুজবও ছড়িয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
পাবনা জেলাতেও এমন গুজব ছড়িয়ে পড়েছে। ইতোমধ্যে কয়েকটি সনাতন ধর্মাবলম্বীর বাড়ি ও দোকানে ডাকাতির ঘটনায় বেড়েছে উৎকণ্ঠা। এছাড়া গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পদত্যাগ ও দেশত্যাগের পর বিক্ষুব্ধ জনতা বিভিন্ন এলাকায় আওয়ামী লীগ অফিস, তাদের দোকানপাট, বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে।
এমন পরিস্থিতিতে সবাইকে শান্ত থেকে পরিস্থিতি মোকাবেলা করার আহ্বান জানিয়েছেন সেনা প্রধান, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও বিএনপি নেতারা। সেইসাথে কেউ যেন এই সুযোগে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করতে না পারে সেজন্য সবাইকে সজাগ থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়।
তাদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে নাশকতা ও হামলা প্রতিরোধে পাবনার বিভিন্ন স্থানে রাত জেগে পালাক্রমে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও মন্দির পাহাড়া দিচ্ছেন ছাত্র জনতা। সেইসঙ্গে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরাও গ্রামে গ্রামে গ্রুপ করে পাহারার ব্যবস্থা করেছেন।
বৃহস্পতিবার (০৮ আগস্ট) রাতে পাবনার চাটমোহর উপজেলার মথুরাপুর বাজারে গিয়ে দেখা যায়, বাজারের দোকানপাট পাহারা দিচ্ছেন স্থানীয় যুব সমাজ।
মথুরাপুর ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক জাকির হোসেন বলেন, ‘মথুরাপুর বাজারের সকল ব্যবসায়ী ও এলাকাবাসীর সাথে মিটিং করে পাহারার ব্যবস্থা করেছি। যাতে কেউ কোনো ধরনের অশান্তি বিশৃঙ্খলা করতে না পারে, ডাকাতি করতে না পারে। রাত জেগে লাঠিসোঠা নিয়ে পাহারা দিচ্ছে এলাকার যুব সমাজ। আমরা সবাই মিলে শান্তিতে বসবাস করতে চাই।’
মথুরাপুর বাজারের বাসিন্দা ও ৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি দেওয়ান সাহাবুর রহমান চন্দন বলেন, ‘শেখ হাসিনা দেশত্যাগের পর আওয়ামী লীগ নেতা হিসেবে খুব ভয় আর আতঙ্কের মধ্যে ছিলাম। না জানি আমার বাড়িতে কখন হামলা ভাঙচুর বা আগুন ধরিয়ে দেয়। কিন্তু দেখলাম পরিস্থিতি ভিন্ন। স্থানীয় বিএনপি নেতা ও ছাত্র যুব সমাজ রাত জেগে এলাকা পাহারার ব্যবস্থা করেছে। আমাদের আশ্বস্ত করছে কোনো ভয় নাই। আমরা এখন নিশ্চিন্তে আছি। এমন উদ্যোগ প্রশংসনীয়।’
চাটমোহর পৌর সদরের বিভিন্ন মন্দির পাহারা দিচ্ছেন স্থানীয় ছাত্র জনতা। চাটমোহর ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থী মেহেদি হাসান মামুন বলেন, ‘ফেসবুকে গুজব ছড়ানো হয়েছে চাটমোহরে মন্দিরে হামলা করার গোপন বৈঠক হয়েছে। সবাই সতর্ক হোন। কিন্তু আমরা বালুচর মহল্লার সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পাশে দাঁড়িয়েছি। তাদের বুঝিয়েছি একটা চক্র গুজব ছড়াচ্ছে, ভয়ের কিছু নাই। এতদিন হিন্দু মুসলমান যেমন পাশাপাশি শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করছি, আগামীতেও করবো। তাই গ্রুপ ভাগ হয়ে রাত জেগে মন্দির ও তাদের বাড়ি পাহারা দিচ্ছি।’
চাটমোহর হরিসভা মন্দিরের সাধারণ সম্পাদক প্রবীর দত্ত চৈতন্য বলেন, ‘শুরুতে একটু আতংক উৎকণ্ঠার মধ্যেই ছিলাম। কিন্তু এখন আমাদের মাঝে অনেকটাই স্বস্তি ফিরেছে। আর ভয় আতঙ্ক নাই। কারণ, এলাকার যুব সমাজ শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ আমাদের সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বসতপাড়া ও মন্দির পাহারা দিচ্ছেন। তাদের সাধুবাদ জানাই।’
পাবনার ফরিদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাফিজুর রহমান বলেন, ‘সারাদেশে বিভিন্ন থানা ও পুলিশের ওপর যেভাবে হামলা হয়েছে তার তুলনায় পাবনার পরিবেশ খুবই ভাল ছিল এবং আছে। কোথাও কোনো থানা পুলিশের ওপর হামলা হয়নি। বরং ছাত্র জনতাসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ আমাদের দিনে রাতে পাহারা দিয়ে রেখেছেন। আমরা সবদিক থেকে নিরাপদে ভাল আছি।’
পাবনা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, ‘জেলার বিভিন্ন স্থানে যে হামলা ভাঙচুর লুটপাট হয়েছে তার সাথে বিএনপির কোনো নেতাকর্মী জড়িত নয়। একটি অসাধু চক্র এই সুযোগে ডাকাতি ও বিশৃঙ্খলা করে ফায়দা হাসিলের অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের নানা ফন্দি আঁটছে। যেন সহজেই এসবের দায়ভার বিএনপির ওপর চাপানো যায়। কিন্তু আমরা সেটি হতে দেবো না।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বিএনপির সকল স্তুরের নেতাকর্মীকে সজাগ ও সতর্ক থাকার নির্দেশনা দিয়েছেন। তাই জেলা বিএনপি ও সকল অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে এলাকা ভিত্তিক গ্রুপ ভাগ করে মানুষের নিরাপত্তায় কাজ করার জন্য। আর বিএনপির কোনো নেতাকর্মী যদি কোনো হামলার সাথে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায় তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হবে।’
শাহীন রহমান/সনি