কর্মবিরতিতে পুলিশ, ভয়-আতঙ্কে গাইবান্ধাবাসী
মাসুম লুমেন || রাইজিংবিডি.কম
পুলিশশুন্য গাইবান্ধায় ভয় আর আতঙ্কে দিন কাটছে মানুষের। চুরি-ডাকাতি ঠেকাতে গত কয়েকদিন ধরে অনেকেই রাত জেগে নিজেদের ঘরবাড়ি-ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পাহারা দিচ্ছেন। থানা ও ফাঁড়িতে পুলিশ কার্যকর না থাকায় পেশাদার অপরাধীরা মাঠে নেমে নানা অপরাধে জড়াচ্ছে।
গত সোমবার (৫ আগস্ট) শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর গাইবান্ধার সাত থানার বিভিন্ন জায়গায় ভাঙচুর, লুটপাট এবং অগ্নিসংযোগ করে দুর্বৃত্তরা। এরপর গত বুধবার (৭ আগস্ট) থেকে গাইবান্ধা পুলিশ লাইন্সে ১১ দফা দাবিতে বিক্ষোভ ও কর্মবিরতি পালন করছে পুলিশ সদস্যরা। তাদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন পুলিশ সুপার মো. কামাল হোসেনসহ জেলার একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।
এদিকে গত বৃহস্পতিবারের (৮ আগস্ট) মধ্যে নবনিযুক্ত পুলিশের মহাপরিদর্শক মো. ময়নুল ইসলাম নিজ নিজ কর্মস্থলে যোগ দিতে দেশের সব পুলিশ সদস্যকে সদর দপ্তর থেকে নির্দেশনা দিলেও এ রিপোর্ট লেখার সময় পর্যন্ত গাইবান্ধার সাত থানায় পুলিশের কর্মবিরতি চলছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মবিরতিতে থাকা একাধিক পুলিশ সদস্য বলেন, ‘পুলিশ সদস্য হত্যার বিচার, আট ঘণ্টা ডিউটি, সোর্সমানি প্রদান, ঝুঁকি ভাতা প্রদানসহ ১১ দফা দাবি মেনে নিতে হবে। সেইসঙ্গে পুলিশকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত থেকে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে। দাবি না মানা পর্যন্ত পুলিশ সদস্যরা কাজে ফিরবে না।’
এদিকে মাঠে পুলিশ না থাকায় গত বুধবার (৭ আগস্ট) রাত থেকে গাইবান্ধা শহরের কিছু সুপারশপ ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর এবং লুটপাটের খবর পাওয়া গেছে। সদর উপজেলার বেশকিছু জায়গায় মুক্তিযোদ্ধাদের বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকেও হামলা ও লুটপাটের খবর পাওয়া গেছে। পুলিশ না থাকায় এসব ঘটনায় ভুক্তভোগীরা কোথাও অভিযোগ দিতে পারেননি। আর এ কারণে দিন দিন আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে অপরাধী চক্র।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, ‘আমার অফিস এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর ও লুটপাট করেছে দুর্বৃত্তরা। অনেকে রাত জেগে বাড়িঘর পাহারা দিচ্ছেন। রাস্তায়, থানায় পুলিশ নেই। চুরি-ডাকাতি হলে অভিযোগ দেওয়ারও সুযোগ নেই। তাই চরম আতঙ্কের মধ্যে আছি।’
বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান মুক্তাদির রহমান রোমান বলেন, ‘গাইবান্ধা সদর উপজেলার ৬ নম্বর রামচন্দ্রপুর ইউনিয়নের বালুয়া বাজারে অবস্থিত আমার বাবার নামে করা বীরমুক্তিযোদ্ধা মতিয়ার রহমান স্মৃতি সংসদ ও পাঠাগারের তালা ভেঙে হামলা চালায় দুষ্কৃতকারীরা। এসময় পাঠাগারের আলমারিতে রাখা মূল্যবান প্রায় পনেরশ’ বই লুটপাট করে নিয়ে যায়। এসব ঘটনায় আমরা ভয় আর আতঙ্কে আছি।’
এদিকে ডাকাতি ও লুটপাটের ভয়ে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন গাইবান্ধা শহর ও গ্রাম এলাকার বহু মানুষ। ভুক্তভোগীদের ভাষ্য- ‘পুলিশ নেই, তাই অপরাধ করলে কিছু হবে না’ এমন চিন্তা থেকেই দুর্বৃত্তরা যে যেভাবে পারছে লুটপাট করছে। তবে কোনো বিপজ্জনক পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে নিকটস্থ সেনা ক্যাম্পে যোগাযোগের অনুরোধ জানিয়েছেন সেনাবাহিনী।
রোববার (১১ আগস্ট) শহরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, পুলিশশূন্য গাইবান্ধার প্রধান প্রধান সড়কের নিরাপত্তা নিশ্চিত ও ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্ব পালন করছে স্কাউটসহ শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সংগঠন। রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোতে সতর্ক পাহারা দিচ্ছেন সেনা সদস্যরা। কোথাও পুলিশের কার্যক্রম চোখে পড়েনি। শহরের গুরুত্বপূর্ণ মন্দিরগুলো পাহারায় কাজ করছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলার ঊর্ধ্বতন এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘সারাদেশে ছাত্র-জনতা ও পুলিশ হত্যার ঘটনার পর পুলিশ নিজেদের অনিরাপদ মনে করছে। অনেকে থানায় অবস্থান করলেও বাইরের কোন কাজ করছেন না। কেউ কেউ আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে আত্মগোপনে রয়েছেন। এছাড়া আমাদের কিছু দাবির কথা তুলে ধরেছি। সেগুলো পূরণ হলে আমরা আবার জনগণের জন্য কাজ শুরু করব।’
গাইবান্ধা/সনি