আতঙ্কে নয়, পূজায় অংশ নিতে ভারতে গিয়েছিলেন তারা
কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলায় সনাতন ধর্মলম্বী সাত ব্যক্তি আতঙ্কে নয়, পূজায় অংশ নিতে সীমান্ত পার হয়ে ভারতে আত্মীয় বাড়িতে গিয়েছিলেন। সেখানে বিএসএফ-এর হাতে তারা আটক হন। পরে বিএসএফ আটককৃতদের বিজিবির নিকট হস্তান্তর করে। এদিকে এলাকায় খবর ছড়িয়ে পড়ে ওই সাত ব্যক্তি ভয়ে দেশ ত্যাগ করেছেন।
ওই সাত ব্যক্তি জেলার নাগেশ্বরী উপজেলার টেপারকুটি গ্রামের বাসিন্দা। সিপেরহাট সীমান্ত এলাকা দিয়ে তারা শনিবার (১০ আগস্ট) ভারতে প্রবেশ করেন।
বিজিবি সূত্রে জানা যায়, নাগেশ্বরীর কেদার ইউনিয়নের টেপারকুটি গ্রামের ধর্মেস্বর বিশ্বাসের ছেলে নিখিলচন্দ্র বিশ্বাস (৫০), ভারতচন্দ্র রায়ের ছেলে মানিকচন্দ্র রায় (৪৫), সন্তোষচন্দ্র বিশ্বাসের ছেলে মনমোহন চন্দ্র বিশ্বাস (৪৬), সুবলচন্দ্র বিশ্বাস (৪০), দয়া বিশ্বাস (৩৫) ও একই ইউনিয়নের ঢলুয়াবাড়ি গ্রামের অমল বিশ্বাসের ছেলে নিপুল বিশ্বাস (৩৬), বিপুল বিশ্বাস (৩২) শনিবার সকাল সাড়ে নয়টার দিকে কেদার সীমান্তের সিপের হাট এলাকা দিয়ে ভারতের আসাম রাজ্যের ধুবরী জেলার ভোগডাঙ্গায় অবৈধভাবে প্রবেশ করেন। এ সময় বিএসএফ সদস্যরা তাদের আটক করে। পরে তাদের শনিবার বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে বিজিবির কাছে হস্তান্তর করা হয়।
এদিকে সাত জনের আটকের খবর ছড়িয়ে পড়লে প্রচার হতে থাকে আতঙ্কে তারা দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন।
ফিরে আসা নিখিলচন্দ্র জানান, সকালে সাত জন মিলে ভাসান পূজায় অংশ নিতে তারা ভারতের ভোগডাঙ্গা গিয়েছিলেন। মানিকচন্দ্র রায় ঢোলবাদক। পূজা শেষে সেখানে মেম্বারের বাড়িতে বেড়াতে গেলে বিএসএফ তাদের আটক করে। পরে বিকালে পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে তাদের বিজিবির কাছে হস্তান্তর করা হয়। বিজিবি তাদের বাড়ি পৌঁছে দেয়।
আতঙ্কে দেশ ছাড়ার কথা সত্য নয়। সহিংসতার মতো কোনো ঘটনা তাদের গ্রামে ঘটেনি বলেও জানান নিখিলচন্দ্র।
সিপের হাট ও খামার এলাকার মাঝামাঝি সীমান্ত এলাকায় বসবাসকারী মনিরুল ইসলাম জানান, কেদার ইউনিয়নের সীসান্ত এলাকায় হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর কোনো সহিংসতা ও হামলার ঘটনা ঘটেনি। ভারতের কাঁটাতারের বাইরেও কিছু ভারতীয় নাগরিকের বাড়ি রয়েছে। নোম্যানস ল্যান্ড থেকে ভারত সরকার কোথাও একশ গজ আবার কোথাও দুইশ গজের বেশি দূরত্বে ভারতের অভ্যন্তরে কাঁটাতারের বেড়া দিয়েছে। ওই অংশে ধানের যে জমি রয়েছে সেখানে ভারতীয়রা চাষাবাদের পাশাপাশি বাড়িও করেছেন।
মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘কাঁটাতারের বাইরে বাড়ি-ঘর করা স্থানীয় বাসিন্দা ও জমি চাষাবাদের জন্য সকালে এবং সন্ধ্যার আগে একবার করে কাঁটাতারের গেট খুলে দেওয়া হয়। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে থাকা সাত জন হিন্দু নাগরিক প্রথমে কাঁটাতারের বাইরে থাকা ভারতীয় নাগরিকদের বাড়িতে যান। সেখান থেকে তারা অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করেন।’
কুড়িগ্রাম ২২ বিজিবির কেদার কোম্পানির নায়েব সুবেদার আব্দুল খালেক ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে বিএসএফ- এর হাতে আটক সাতজনকে ছাড়িয়ে আনা হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা গেছে, আতঙ্কে নয়, সীমান্তের ওপারে তারা পূজায় অংশ নিতে আত্মীয় বাড়ি বেড়াতে গিয়েছিল।
বাদশাহ্ সৈকত/সনি