ঢাকা     রোববার   ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ২৯ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

চাঁদপুরের চরাঞ্চলে তালগাছের কোন্দা’র খুব কদর

অমরেশ দত্ত জয়, চাঁদপুর  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৫১, ১২ আগস্ট ২০২৪   আপডেট: ১০:৩০, ১৩ আগস্ট ২০২৪
চাঁদপুরের চরাঞ্চলে তালগাছের কোন্দা’র খুব কদর

বর্ষা মৌসুমের শেষ সময় চলছে। চাঁদপুরের বিভিন্ন স্থানের নিচুজমি, ডোবা-নালা, খাল-বিল বর্ষা ও জোয়ারের পানিতে টইটম্বুর। আর এ অবস্থায় চাঁদপুরের চরাঞ্চলে তালগাছের কোন্দারের খুব কদর। কারণ থই থই পানিতে তালগাছের কোন্দা অথবা নৌকা ছাড়া চলাচলের উপায় কি!  

সঙ্গত কারণে চাঁদপুরে সস্তার বাহন তালগাছের কোন্দারই চাহিদা খুব। আর বাহনটির এখন বেচাবিক্রিও বেশ। দেখতে সুন্দর ও টেকসই কোন্দা গ্রাহকদের হাতে তুলে দিতে পারলে নিজেদেরও ভালো লাগে বললেন বিক্রেতারা। অপরদিকে প্রয়োজন অনুযায়ী বিভিন্ন আকার-আকৃতির কোন্দা একটু কমদামে কিনতে সরব ক্রেতারা।

সোমবার (১২ আগস্ট)  সকালে চাঁদপুর সদরের রামপুর ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের দেবপুর গ্রামের লিটন সরকারের বাড়ির রাস্তার ওপর কোন্দা তৈরি ও বেচাবিক্রি করতে দেখা যায়।

স্থানীয়রা বলছেন, বছরের পর বছর এখানে বেচাবিক্রি হচ্ছে তাল গাছের কোন্দা। যেখানে হাজীগঞ্জের বাকিলা ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের চতন্তর হালদার বাড়ীর বেশ কয়েকজন চাঁদপুর কুমিল্লা আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশেই এসব কোন্দা তৈরি করে থাকেন। মূলত নিম্নাঞ্চলের জলাভূমিতে যাতায়াত, মাছ ধরা, গবাদি পশুর ঘাসকাটাসহ নিত্য প্রয়োজনীয় কাজে এই কোন্দা ব্যবহার খুবই প্রচলিত।

দেবপুরের বাসিন্দা লিটন সরকার বলেন, কোন্দাকে কেউ কেউ তালের ডোঙা নামেও চিনে। এটি সাধারণত ১৫-২০ ফুট লম্বা হয় এবং চওড়া হয় ১/২ ফুট। বজ্র প্রতিরোধক সারি সারি তালগাছ থেকে উপযুক্ত গাছকে বাছাই করে দুই থেকে আড়াই হাজার টাকায় কেনার পর তা দুইভাগে কেটে দুটি ডিঙি তৈরি করি। যা প্রতিটা কোন্দা রূপ দেওয়ার পর ৭-৮ হাজার টাকায় দাম হাঁকান বিক্রেতারা। এক একটি কোন্দা তৈরিতে সময় লাগে ১ থেকে দুই দিন। 

হাসিম ও লোকমান নামের দুই কোন্দা কারিগর বলেন, এখানে কেউ এসে দেখে কিনে নেন, আবার কেউ যাতায়াতে দূরে হওয়ায় আগে থেকেই অর্ডার দিয়ে রাখেন। চাঁদপুর সদর ছাড়াও হাজীগঞ্জ, মতলব দক্ষিণ, হাইমচরসহ বেশ কিছু স্থানেই কোন্দার খুব চাহিদা। কোন্দা তৈরির পর গাছের গোড়ার দিকটা থাকে গোলাকার ও বদ্ধ এবং অন্য প্রান্ত থাকে খোলা। তাই চলার সময় সে প্রান্তের মুখ কাদা দিয়ে বন্ধ করা হয় যাতে পানি উঠে তালের কোন্দা ডুবে না যায়। এক-দু’জনের বেশি সাধারণত একটি তালের কোন্দায় ওঠা যায় না। বৈঠা নয়, একটি লম্বা শক্ত বাঁশের টুকরো দিয়ে পানির মধ্যে ঠেলে ঠেলে তালের কোন্দা চালানো হয়। 

অনেকেই এটিকে হস্তশিল্প বলে দাবি করেন। এই হস্তশিল্পটিকে টিকিয়ে রাখতে কারিগরদের সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে প্রশিক্ষণসহ পৃষ্ঠপোষকতারও দাবি করেন তারা।

জসীম নামের এক কোন্দা ক্রেতা বলেন, ছাগল ও গরু রয়েছে কয়েকটি। রোজ ছাগলের ঘাস বিলের মাঝখান থেকে কাটতে এবং গরুর জন্য কচুরিপানা কাটতে কোন্দা ব্যবহার করছি। এছাড়া দিঘিতে নেমে মাছের খাবার ঘুরে ঘুরে দেওয়ার জন্যও কোন্দা ব্যবহার করি।

এ বিষয়ে বিসিক চাঁদপুর কার্যালয়ের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. শাহরিয়ার খান বলেন, পরিবেশ বান্ধব ও সহজ নৌযান হচ্ছে তালের কোন্দা। এ ধরনের নৌযান তৈরির কারিগররা আমাদের কাছে আসলে তাদেরকে টিকিয়ে রাখতে প্রশিক্ষণসহ পৃষ্ঠপোষকতায় পাশে থাকবো।

এদিকে কোন্দা তৈরির কারিগররা অধিকাংশই মৌসুমী কারিগর। বর্ষায় এরা বংশ পরম্পরায় কোন্দা তৈরিতে ব্যস্ত থাকলেও বছরের অন্যান্য সময় তারা কাঠ মিস্ত্রিসহ অন্যান্য কাজে নিয়োজিত থাকেন। তবে যাতায়াতে নৌযানে আধুনিকতার ছোঁয়া লাগায় এখন কোন্দার চাহিদা অনেকটাই কমে এসেছে।

/টিপু/

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়