একদফার আন্দোলনে নিহত
মুয়াজের চোখ খুঁজছে বাবাকে
পঞ্চগড় প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম
বাড়িতে শোকের মাতম। পরিবারের সবাই ভাসছেন শোক সাগরে। তাদের আহাজারি আর দীর্ঘশ্বাসে ভারি হয়ে আছে চারপাশ। কিন্তু এ সবের কোনো কিছুই যেন স্পর্শ করছে না মাসুম বিল্লাহ আল মুয়াজকে। দুই বছরের এই অবুঝ শিশু চারপাশে খুঁজে ফিরছে বাবার মুখ। অব্যক্ত বেদনায় ভরা চোখের ভাষায় সে যেন বলতে চাইছে- বাবা কোথায়? কখন ফিরবে বাবা?
মুয়াজের বাবা শাহাবুল ইসলাম শাওন (২৮)। গাজীপুরে কাঁচামালের ব্যবসা করতেন। সেখানেই গত ৪ আগস্ট সরকার পতনের আন্দোলনে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান তিনি। রোববার (১১ আগস্ট) আইনি প্রক্রিয়া শেষে তার মরদেহ গ্রামের বাড়ি পঞ্চগড়ে নিয়ে আসা হয়। পরের দিন সোমবার সকালে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে সমাহিত করা হয় তাকে।
শাহাবুল ইসলাম শাওনের বাড়ি পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলার টেপ্রিগঞ্জ ইউনিয়নের কাদেরের মোড় মেলাপাড়া গ্রামে। তার বাবার নাম আজাহার আলী। শাওনের এমন মৃত্যুতে শুধু পরিবার নয় শোকে ম্রিয়মাণ পুরো গ্রামের মানুষ।
সোমবার (১২ আগস্ট) বিকেলে তাদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তখনও গ্রামের বিভিন্ন মানুষের ভির সেখানে। বাড়ি জুড়ে শোকের মাতম। ছোট্ট মুয়াজকে কোলে নিয়ে কাঁদছেন শারমিন আক্তার। নির্বাক শাওনের বাবা আজাহার আলী। তাদের সমবেদনা জানাতে এসে প্রতিবেশীরাও আঁচলে মুছছেন চোখের কোণ।
শারমিন আক্তার বলেন, গাজীপুরে একসঙ্গেই থাকি আমরা। আমি গার্মেন্টসে চাকরি করি। গত ৩ আগস্ট রাতে মোবাইলে আন্দোলনের খবর দেখতেছিলাম আমরা। সামনে আবু সাঈদের ভিডিও আসে। সেই ভিডিও দেখে আমার স্বামী বলতেছিলো- কালকে সকালে ওযু-গোসল করে নতুন পোশাক পরে আমিও আন্দোলনে যাবো। আবু সাঈদ শহীদ হতে পারলে আমার অসুবিধা কোথায়, আমিও শহীদ হতে চাই। এরপর সকালের দিকে আমি গার্মেন্টসে চলে যাই, দুপুরের দিকে খবর পাই আমার স্বামী গুলিবিদ্ধ হয়েছে। আমি আমার স্বামী হত্যার বিচার চাই।
শাওনের বাবা আজাহার আলী বলেন, আমার ছেলে ঋণ শোধের জন্য ঢাকায় গিয়েছিলো। ফিরলো লাশ হয়ে। তার এই ছোট ছেলে সন্তানের এখন কি হবে, তাকে কে মানুষ করবে। সরকারের কাছে অনুরোধ তার পরিবারটির পাশে যেন থাকে।
উল্লেখ্য, গত ৪ আগস্ট সকালে গাজীপুরের চৌরাস্তায় সরকার পতনের আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগ দেয় শাহাবুল ইসলাম শাওন। সেখানে গুলিবিদ্ধ হয়ে রাত ৯টার দিকে ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।
নাঈম/ইমন