মাগুরায় বীরেন শিকদারসহ ১৭২ জনের বিরুদ্ধে মামলা
মাগুরা প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম
বীরেন শিকদার
মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলায় গত ৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচি চলাকালে সংঘর্ষে সুমন শেখ (১৮) নামে এক কলেজছাত্র নিহত হওয়ার ঘটনায় হত্যা মামলা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার মহম্মদপুর থানায় ১৭২ জনের নাম উল্লেখ করে নাম না জানা ৫০০ থেকে ৬০০ জনকে আসামি করে মামলাটি করেন সুমনের বাবা মো. কান্নুর রহমান।
মামলায় আসামিদের মধ্যে মাগুরা-২ (সদর, শালিখা, মহম্মদপুর) আসনের সদ্য সাবেক সংসদ সদস্য বীরেন শিকদারসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা আছেন। আওয়ামী লীগের নেতাদের দাবি, ঘটনার দিন বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে থানায় হামলা চালাতে গিয়ে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হন ওই তরুণ।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন- বীরেন শিকদারের ভাই শালিখা উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বিমলেন্দু শিকদার, মহম্মদপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল মান্নান, সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা কামাল সিদ্দিকী, বিনোদপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান শিকদার মিজানুর রহমান, নহাটা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আলী মিয়া, একই ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান তৈয়বুর রহমান, পলাশবাড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান সৈয়দ সিকান্দার আলী ও সাবেক চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম। মামলায় বীরেন শিকদার ও বিমলেন্দু শিকদারের বিরুদ্ধে হত্যাকাণ্ডের হুকুম ও মদদ দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে।
নিহত সুমন শেখের বাড়ি উপজেলার বালিদিয়া ইউনিয়নের শ্রীপুর গ্রামে। তিনি মহম্মদপুর আদর্শ টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিএম কলেজের উচ্চমাধ্যমিকের শিক্ষার্থী ছিলেন।
স্থানীয়রা জানান, ঘটনার দিন দুপুর ১টার দিকে থানা রোডে গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর সুমনকে মহম্মদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। ওই দিন সেখানে দায়িত্বরত উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সৌমেন সাহা জানিয়েছিলেন, মৃত অবস্থায় সুমনকে হাসপাতালে আনা হয়। মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর স্বজনেরা ময়নাতদন্ত ছাড়াই তার মরদেহ নিয়ে যান।
নিহত সুমনের দাদা মো. রাশেদ শেখ শুক্রবার বলেন, ‘সুমনের বুকে ও পাঁজরে গুলির চিহ্ন ছিল। আমি এই হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই।’
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, সুমন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী ছিলেন। ঘটনার দিন সকাল সাড়ে ৭টার দিকে তাদের বাড়িতে এসে আন্দোলনে না যাওয়ার বিষয়ে হুঁশিয়ারি দেন অভিযুক্ত ব্যক্তিরা। দুপুর ১টার দিকে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে মিছিল নিয়ে মহম্মদপুর থানার দিকে যাচ্ছিলেন সুমন। থানা থেকে পশ্চিম দিকে ৩৫০ গজ দূরে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের হামলার মুখে পড়েন আন্দোলনকারীরা। এ সময় সুমনকে লোহার রড ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে পিটিয়ে জখম করা হয়।
বাদীর অভিযোগ, একই সময়ে পলাশবাড়িয়া ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম রিভলবার দিয়ে সুমনের বুকের বাঁ পাশে গুলি করেন।
আওয়ামী লীগ নেতাদের দাবি, ঘটনার দিন সকাল ১০টার দিকে উপজেলা সদরের আমিনুর রহমান ডিগ্রি কলেজ এলাকায় বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ত্রিমুখী সংঘর্ষ হয়। টানা দুই ঘণ্টা সংঘর্ষ চলার পর দুপুর ১২টার দিকে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা পিছু হটেন। পরে আন্দোলনকারীরা উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়, উপজেলা পরিষদ ভবন, নির্বাহী কর্মকর্তার বাসভবন, উপজেলা চেয়ারম্যানের বাসভবনে হামলা ও ভাঙচুর চালান। এর অন্তত এক ঘণ্টা পর আন্দোলনকারীদের সঙ্গে মিছিল নিয়ে থানায় হামলা চালাতে যান বিএনপি নেতাকর্মীরা। এ সময় পুলিশের গুলিতে নিহত হন সুমন শেখ ও আহাদ আলী বিশ্বাস নামে দুই শিক্ষার্থী।
মহম্মদপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল মান্নান মোবাইল ফোনে বলেন, ‘সত্যকে আড়াল করে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে বিএনপির নেতারা আমাদের নামে মিথ্যা মামলা দিয়েছেন। তারা (বিএনপি নেতাকর্মীরা) থানা আক্রমণ করতে গেলে গুলিতে দুজন নিহত হন। এর অন্তত এক ঘণ্টা আগে আমাদের নেতাকর্মীরা মাঠ ছেড়ে দিয়ে জীবন বাঁচাতে নিরাপদে আশ্রয় নেন। থানা এলাকায় ওই সময় আমাদের কোনো নেতাকর্মী ছিলেন না। এমন মিথ্যা মামলা পুলিশ কীভাবে নিল?’
মহম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ঠাকুর দাস মণ্ডল বলেন, ‘কয়েক হাজার মানুষ মিছিল নিয়ে থানায় হামলা চালাতে এসেছিলেন। পথে দুই পক্ষের (বিএনপি ও আওয়ামী লীগ) মধ্যে আবার সংঘর্ষ হয়। তখন আমরা থানার নিরাপত্তা নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম। থানার অস্ত্র ও গোলাবারুদ লুটের আশঙ্কা ছিল। আমরা পরে খবর পাই যে, দুজন মারা গেছেন। ময়নাতদন্ত ছাড়াই পরিবার মরদেহ দুটি দাফন করে। তদন্তে সবকিছু বেরিয়ে আসবে বলে আশা করি।’
শাহীন/মাসুদ