ফেনীর দেয়াল বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের প্রতিচ্ছবি
ফেনী প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নানা চিত্র ফুটে উঠছে ফেনী শহরের বিভিন্ন এলাকার দেয়ালে দেয়ালে। শিক্ষার্থীদের রং-তুলির আঁচড়ে দেয়ালগুলো রূপ নিয়েছে আন্দোলনের প্রতিচ্ছবি হিসেবে। গত এক সপ্তাহ ধরে শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়কের পাশের দেয়ালে গ্রাফিতি ও ক্যালিগ্রাফি করছেন শিক্ষার্থীরা। তাদের এমন উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন সবাই।
শনিবার (১৭ আগস্ট) বিভিন্ন সড়ক ঘুরে দেখা যায়, ফেনী সরকারি কলেজ প্রাঙ্গণ, ডাক্তার পাড়া, মাস্টার পাড়া, মিজার রোড, পাঠানবাড়ী রোডসহ বিভিন্ন পাড়া মহল্লার প্রতিটি দেয়ালে ছবি এঁকে চলেছেন শিক্ষার্থীরা। যেসব দেয়ালগুলোতে আগে ছিল রাজনৈতিক নেতাদের বিজ্ঞাপন সেই দেয়ালগুলো এখন শোভা পাচ্ছে সাহসিকতা ও বিপ্লবের নানা স্লোগান। শিক্ষার্থীরা ফুটিয়ে তুলছেন ছাত্র আন্দোলনে নিহত আবু সাঈদ, মুগ্ধ এবং ফেনীর শ্রাবনের প্রতিচ্ছবি।
শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন ছবি এঁকে তুলে ধরেছেন তাদের নানা বক্তব্য ও স্লোগান। তারা লিখেছেন- ‘তোমাকে পাওয়ার জন্য হে স্বাধীনতা’, ‘৫২ দেখিনি, ৭১ দেখিনি ২৪ দেখেছি’, ‘ভয়ের দেয়াল ভাঙলো এবার জোয়ার এলো ছাত্র জনতার’ ‘কত প্রাণ হলো বলিদান’, ‘দুর্গম গিরি কান্তার-মরু দুস্তর পারাবার হে’ ও ‘দেশটা আমাদের সবার’।
কামরুল আহাদ নামে এক শিক্ষার্থী মিজান রোডের সোনালী ব্যাংকের সামনের দেয়ালে ওয়াল পেন্টিং করেছেন। ছবিতে তিনি শিক্ষার্থীদের ওপর অমানবিক নির্যাতনের দিকটি তুলে ধরেছেন। এছাড়াও আন্দোলনে যারা শহিদ হয়েছেন, তাদের কিছু কথা চিত্রকর্মে ফুটিয়ে তুলছেন। কামরুল আজাদ মনে করেন, তার পেন্টিং দেখার মাধ্যমে আগামী প্রজন্ম বুঝতে পারবে ২০২৪ সালের আগস্ট মাসে কি হয়েছিল। সেখানে কার কী ভূমিকা ছিল।
শহরের ডাক্তারপাড়ায় দেয়াল অঙ্কনের সময় মাহবুবা তাবাসসুম ইমা নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় এমন একটি সুন্দর পরিবেশ পেয়েছি। এবার সকলে মিলে আমরা দেশ সংস্কারে ভূমিকা রাখতে চাই। শহিদ ভাইদের স্মরণ করতে ও তাদের স্মৃতি ধরে রাখতে নানা চিত্র তুলে ধরছি দেয়ালে।’
ফেনী কলেজের শিক্ষার্থী সায়মা ইসলাম বলেন, ‘আন্দোলনে যারা ভূমিকা রেখেছেন এবং শহিদ হয়েছেন তাদের নিয়ে একটি চিত্র এঁকেছি। যারা আত্মাহুতি দিয়েছেন তারা আমাদের প্রতিটি ঘরে ফুলের মতো ফুটে উঠেছে, এই চিত্রাঙ্কনে তা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।’
ফেনী ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী আরাফাত বলেন, ‘আমরা ৫২ দেখিনি, ৭১ দেখিনি, তবে ২০২৪ দেখেছি। গত দুই মাসের ছাত্র আন্দোলনের পর স্বৈরাচার সরকারের পতন হয়েছে। সে বিষয়গুলো দেয়াল চিত্রের মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলছি।’
ওসমান গনি রাসেল নামে এক পথচারীর বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের মধ্যে কোনো ক্লান্তি নেই। তারা বৃষ্টি ও রোদ উপেক্ষা করে ছবি আাঁকছেন। তাদের প্রতিটি লেখা এবং ছবি প্রতিবাদের অংশ। এসব গ্রাফিতি ও ক্যালিওগ্রাফি দেখে অনেক ভালো লাগছে। তাদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি এত সুন্দর করে অঙ্কনের জন্য।’
পাঠানবাড়ী এলাকার নূরের নবী ভূঁইয়া মান্না বলেন, ‘তরুণরা চাইলে কি না করতে পারে তার বড় উদাহরণ বাংলাদেশ। গ্রাফিতির মাধ্যমে তরুণরা যে মেসেজ দিচ্ছে ফেনীবাসীকে সেটি মানুষের চোখের সামনে সাক্ষী হয়ে থাকবে।’
বিশিষ্ট লেখক ও সংগঠক ইমন উল হক জানান, ‘ফেনী জেলা স্বেচ্ছাসেবক সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে এই গ্রাফিতি করা হচ্ছে। গ্রাফিতি অঙ্কনের জন্য আমরা কারও কাছ থেকে আর্থিক সহায়তা নিচ্ছি না। সংগঠনগুলোর নিজস্ব অর্থায়নেই গ্রাফিতি করা হচ্ছে। গ্রাফিতি ও ক্যালিওগ্রাফি অঙ্গনে এখানে যারা কাজ করছেন কেউ খাওয়া-দাওয়া কিংবা অর্থের জন্য আসেনি। তারা নিজ উদ্যোগে এসেছে। নিজেদের পকেটের টাকা খরচ করে গ্রাফিতি করছে। গত ছয় দিন ধরে প্রায় ২৫০ থেকে ৩০০ শিক্ষার্থী গ্রাফিতি ও ক্যালিগ্রাফি অঙ্কন করছেন।
সাহাব/মাসুদ